পদ্মা নদীতে সেতু নির্মাণ করা হবে সেইটা বাংলার মানুষের কাছে শুধুমাত্র স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই ছিলনা। পদ্মা সেতু নির্মাণকে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলো বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার। শত বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে সেই চ্যালেঞ্জকেই বাস্তবে রুপ দান করা হল। দেশের মধ্যে সর্বলাকের সবথেকে বড় প্রকল্প এই পদ্মা সেতু। সম্প্রতি পদ্মা সেতু পুরোপুরিভাবে নির্মাণ হওয়ার পরে জানা গেল পদ্মা সেতুর তিনটি বিশ্ব রেকর্ড।
এক সময়ের স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন দৃষ্টিসীমায় দিগন্তজুড়ে দাঁড়িয়ে। পদ্মার তীরে গেলেই দেখা যায় পিলারের দীর্ঘ সারি। তার উপর একে একে বসানো ইস্পাতের ৪১টি স্প্যান। পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানো হয়েছে বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর)। এর মাধ্যমে পুরোপুরি দৃশ্যমান হল ৬ হাজার ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি।
পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করে এ পর্যন্ত তিনটি বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে। একটি হচ্ছে পদ্মা সেতুর পাইলিং। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা বলছেন, পদ্মা সেতুর খুঁটির নিচে সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীরে স্টিলের স্তূপ রাখা হয়েছে। এই পাইলগুলির ব্যাসার্ধ তিন মিটার। পৃথিবীতে এর আগে আর কোনো সেতুর জন্য এত গভীর পাইলিং এবং পুরু পাইল হয়নি।
দ্বিতীয় রেকর্ডটি হল, পদ্মা সেতুকে ভূমিকম্প থেকে বাঁচানোর জন্য ‘ফ্র্যাকশনাল পেন্ডুলাম বিয়ারিং’ বসানো হয়েছে। ভারবহন ক্ষমতা ১০ হাজার টন। এখন পর্যন্ত বিশ্বের কোনো সেতুতে এত ক্ষমতার বিয়ারিং লাগানো হয়নি। পদ্মা সেতু রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করতে সক্ষম হবে।
আর তৃতীয় রেকর্ডটি হলো নদী শাসন। নদী ব্যবস্থাপনার জন্য চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো কর্পোরেশনের সাথে ১১০ কোটি ডলারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। শুধু নদী শাসনের জন্য এত বড় দরপত্র পৃথিবীতে আগে কখনো হয়নি। এছাড়া পদ্মা সেতুর পাইলিং ও খুঁটির কিছু অংশে অতি সূক্ষ্ম (মাইক্রোফাইন) সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে সিমেন্ট আমদানি করা হয়েছে। এই ধরনের অতি সূক্ষ্ম সিমেন্ট সাধারণত ব্যবহার করা হয় না।
প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সর্বপ্রথম দোতলা সেতু। পদ্মা সেতুর রয়েছে খুবই সুন্দর দৃষ্টি নন্দন দৃশ্য।পদ্মা সেতুর সেই দৃশ্যের দিকে তাকালে ভরা যায় মন, চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করেনা। বাংলার মানুষের শত বছরের স্বপ্ন আজ বাস্তবে পরিণত হয়েছে। বাংলার মানুষ শেখ হাসিনা সরকারের কাছে চিরদিন ঋণী থেকে যাবে পদ্মা সেতুর মতো একটি নান্দনিক সেতু উপহার দেওয়ার জন্য।