Wednesday , December 25 2024
Breaking News
Home / Countrywide / পদ্মা সেতু নির্মাণে ৬ বিঘা জমি হারিয়ে নাসির কথাটি বলেই ফেললেন, এখন শুধু প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা

পদ্মা সেতু নির্মাণে ৬ বিঘা জমি হারিয়ে নাসির কথাটি বলেই ফেললেন, এখন শুধু প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা

পদ্মা সেতু তৈরী হওয়াতে বাংলার মানুষ যে কতটা উপকৃত হয়েছে সেইটা তাদের উল্লাস আর আনন্দ দেখলেই বোঝা যায়। এখন খুব সহজেই দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ কোনো ঝামেলা পোহানো ছাড়াই যেতে পারবে রাজধানী ঢাকাতে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কাল জাঁকজমকভাবে সম্পন্ন করা হয়। সেই পদ্মের সেতু নির্মাণে ৬ বিঘা জমি ছেড়ে দিয়েছেন ৫৭ বছর বয়সী মোহাম্মদ নাসির জমাদ্দার।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য ছয় বিঘা জমি দিয়েছেন ৫৭ বছর বয়সী মোহাম্মদ নাসির জমাদ্দার। তার বাড়ি শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা ইউনিয়নের মাইনুদ্দিন জমাদ্দারকান্দিতে। শনিবার (২৫) বিকেলে জমাদ্দার বাসস্ট্যান্ডে পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে তার সঙ্গে কথা হয় দেশের জনপ্রিয় একটি সংবাদ মাধ্যমের। নাসির জমাদ্দার বলেন, শরীয়তপুর সেকশনে পদ্মা সেতুর জন্য তার পুরো পরিবারকে ২০ বিঘা জমি দিতে হয়েছে। ছয় বিঘা দিয়েছেন। অধিগ্রহণের জন্য সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। কিন্তু তার মন এখনো কাঁদে পুরনো বসতবাড়ির জন্য। তবে পদ্মা সেতুতে অবদান রাখায় নাসির জমাদ্দার গর্বিত। তিনি নিজেকে পদ্মা সেতুর অংশীদার মনে করেন।

নাসির জমাদ্দার বলেন, “সরকার পদ্মা সেতুর জন্য আমাদের জমি নিয়েছে, তবুও আমরা খুশি। সরকার যা করেছে ভালোর জন্যই। আজ পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হলো। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। পদ্মা সেতু হওয়ায় সেতুটি আমার ও শরীয়তপুরবাসীর উপকৃত হয়েছে। জমির জন্য অনেক কষ্ট হলেও আজ আমরা খুশি। পদ্মা সেতুর জন্য জমি দিয়েছি ভেবে ভালো লাগছে।’

তার মতো ওই এলাকার আবদুর রউফ খালাশী, রশিদ মাদবর, রাজ্জাক হোসেন, রশিদ মিয়া ও জয়নম জমাদ্দারও পদ্মা সেতুর জন্য জমি দিয়েছেন। ব্রিজের জন্য আবদুর রউফ খালাশীর পরিবারকে ২৭ বিঘা জমি দিতে হয়েছে। তারপরও সে খুশি। আবদুর রউফ বলেন, ‘জমি দিয়ে লাভ কী? খুলে দেওয়া হয়েছে পদ্মা সেতু। এতে আমরা খুশি। ”

রাজ্জাক হোসেন ও রশিদ মিয়া গত আট বছর ধরে নাওডোবা পুনর্বাসন কেন্দ্রে বসবাস করছেন। পদ্মা সেতুর জন্য তাদের জমি দিতে হয়েছে। তাদের পূর্বপুরুষের জমি ছিল। পুরো পরিবার নিয়ে থাকতেন। জমি অধিগ্রহণের জন্য সরকার দেড় গুণ টাকা দিয়েছে। তারা সরকারের কাছ থেকে জমি কিনে পুনর্বাসন কেন্দ্রে বাড়ি তৈরি করেছে।

রাজ্জাক হোসেন ও রশিদ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, “বাড়ি-জমি চলে যাওয়ার কোনো দুঃখ নেই। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় আমরা খুশি।’রোববার (২৬ জুন) সকাল ৬টা থেকে বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু সড়কটি সব ধরনের যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ২০০১ সালের ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৪ সালের নভেম্বরে নির্মাণ শুরু হয়। দ্বি-স্তর ইস্পাত এবং কংক্রিটের তৈরি ট্রাসটির শীর্ষে একটি চার লেনের রাস্তা এবং নীচে একটি একক রেল রয়েছে।

পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৪২টি পিলার ও ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মূল অবকাঠামো তৈরি করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.১০ মিটার। পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এসব খরচের মধ্যে রয়েছে সেতুর অবকাঠামো নির্মাণ, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, জমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি। বাংলাদেশের অর্থ বিভাগের সঙ্গে সেতু বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী, সেতু নির্মাণে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দেয় সরকার। ১ শতাংশ সুদ হারে ৩৫ বছরের মধ্যে সেটি পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ। চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার স্বপ্নের কাঠামো নির্মাণের ঠিকাদার।

প্রসঙ্গত, দেশের একটি সম্পদ নির্মাণ হবে আর তআতে সহযোগিতা করা দেশের মানুষের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। কেননা দেশে যাই নির্মাণ করা হোক না সেইটা সবারই সম্পত্তি। পদ্মা সেতু বাংলার মানুষের সবার। আজ তাই সবাই খুশি ও সীমাহীন উৎফল্লিত। দেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবে।

About Shafique Hasan

Check Also

জরুরী ঘোষণা: কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সব ছুটি বাতিল

২০২৫ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের হাতে জানুয়ারির মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *