Tuesday , December 24 2024
Breaking News
Home / Countrywide / পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের সরে দাঁড়ানো নিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত দিল সম্পূর্ণ অজানা তথ্য

পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের সরে দাঁড়ানো নিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত দিল সম্পূর্ণ অজানা তথ্য

পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে প্রথম থেকেই অনেক ধরণের কথা শোনা যেত। বিশ্ব ব্যাংক অর্থ দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে দিতে চেয়েছিল কিন্তু কথা উঠেছিল যে বিশ্ব ব্যাংকের প্রদত্ত অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। আর এরকম ঘটনা জানাজানির পর বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণ করা থেকে সড়ে দাঁড়ায়। সম্প্রতি জানা গেছে চীনা দূত বলেছেন বিশ্ব ব্যাংক সরে দাঁড়ানো ষড়যন্ত্র না।

ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমং বলেন, ‘পদ্মা সেতু প্রকল্পটির শুরুতে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল। আমি একে ষড়যন্ত্র বলতে চাই না। আমি বলতে চাই, এটি আত্মবিশ্বাসের অভাব। বাংলাদেশ, সরকার ও দেশটির জনগণের প্রতি তাদের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি।’

দুর্নীতি চেষ্টার মিথ্যে অভিযোগ এনে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংকসহ অন্য দাতা সংস্থাগুলোর মুখ ফিরিয়ে নেয়াকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলতে চান না ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। তার মতে, এটা ছিল বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রতি আস্থার অভাব।

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সাহসী সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন চীনা রাষ্ট্রদূত। ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, অন্য কোনো দেশের কোনো নেতা এমন সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন কিনা আমার সন্দেহ আছে।

লি জিমিং রোববার ঢাকায় চীনা দূতাবাসে তার কার্যালয় প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

“আপনি জানেন, আন্তর্জাতিক দাতারা প্রকল্পের শুরুতে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল,” তিনি বলেছিলেন। আমি এটাকে ষড়যন্ত্র বলতে চাই না। মানে, এটা আত্মবিশ্বাসের অভাব। বাংলাদেশ, সরকার ও দেশের জনগণের প্রতি তাদের আস্থা নেই। ”

ওই কূটনীতিক আরও স্পষ্ট করেন যে, চীনের অবস্থান তখন বাংলাদেশ সম্পর্কে যা ধারণা করেছিল তার বিপরীত।

লি জিমিং বলেন, “তবে চীন জানত যে বৈদেশিক বা আন্তর্জাতিক ঋণ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে ভালো। দেশটির সুনাম রয়েছে।” বাংলাদেশ সময়মতো ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে বা বিলম্ব করেছে এমনটি কখনো হয়নি।

“ফলে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের ওপর চীনের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করেছিলাম যে বাংলাদেশ নিজেদের টাকায় গড়ে তুলতে পারবে। বাংলাদেশ পারবে। এবং আমরা ঠিক ছিলাম। তাই আমি ষড়যন্ত্র বলতে চাই না।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার প্রশংসা করেন লি জিমিং।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা ও দক্ষ নেতৃত্বে স্বপ্নের এই পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। সব ধরনের সংশয়, চাপ, দুর্নীতির অভিযোগসহ সব ধরনের সংকটের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় সংকল্প, সাহস, একাগ্রতা, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও দূরদর্শিতার কারণে একসময় যা অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল, তা এখন স্পর্শ করা সম্ভব। যে কোন সময়. ‘

বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের সক্ষমতা নিয়ে এখন কোনো সন্দেহ নেই, যোগ করেন, “আমার মতে, তিনি তার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এতে অবদান রেখেছেন।” আগেই বলেছি, এ ধরনের সিদ্ধান্তের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সাহস, সদিচ্ছা ও একাগ্রতা। অন্য কোনো দেশের কোনো নেতা এমন সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন কিনা সন্দেহ। আমি সত্যিই আমার সন্দেহ আছে. ”

পদ্মা সেতু নিয়ে অনেকের অসন্তোষের কথা স্বীকার করেছেন চীনা রাষ্ট্রদূত। তবে অসুখী হওয়াকে ষড়যন্ত্র বলতে নারাজ তিনি।

লি জিমিং বলেন, “এটি একটি ঐতিহাসিক অর্জন যা বাংলাদেশের জনগণ অর্জন করেছে। এর ফলে মানুষ খুব খুশি। কিন্তু সবাই খুশি নয়, চীনের মানুষের মতো (হাসি)) এটাকে ষড়যন্ত্র বলতে চাইলে আপনি বলতে পারেন। তবে আমি এই শব্দটি ব্যবহার করব না। আমি শুধু বলতে চাই বাংলাদেশের সাফল্যে সবাই খুশি নয়।’

ঢাকায় চীনা প্রতিনিধি আরো বলেন, পদ্মা সেতু ট্রান্স-এশিয়া নেটওয়ার্ক এবং এশিয়ান হাইওয়ের মধ্যে শূন্যতা পূরণ করবে।

তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমারের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি বলতে চাই, বাংলাদেশ সোনার বাংলায় পরিণত হওয়ার প্রত্যয় পূর্ণ হতে চলেছে। চাইনিজদেরও একটা স্বপ্ন আছে, যা আমরা পূরণ করার চেষ্টাও করছি। আমরা একে অপরের স্বপ্ন পূরণের অংশীদার হতে চাই। চীন বরাবরই বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধু।

চীনের রাষ্ট্রদূত পদ্মা সেতুতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আগ্রহও প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, “চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যতবারই বাংলাদেশের কথা বলেন, ততবারই তিনি পদ্মা সেতুর কথা বলেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি বাংলাদেশের মানুষের অনুভূতি চীনের মানুষের চেয়ে ভালো কেউ বুঝতে পারবে না। সাহস, একাগ্রতা ও উন্নতি- এগুলো। আমরা ইয়াংজি নদীর উপর আমাদের সেতু বর্ণনা করতে ব্যবহৃত শব্দগুলি।’

লি জিমিং ইয়াংজি নদীর উপর নির্মিত একটি সেতুর গল্প বলেছিলেন। তিনি বলেন, “চেয়ারম্যান মাও সেতুং সেতু নির্মাণের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে একটি কবিতা লিখেছিলেন। তাঁর কবিতায় একটি লাইন ছিল যেটিতে বলা হয়েছিল, “এই সেতুটি উত্তর ও দক্ষিণকে সংযুক্ত করে, বিচ্ছিন্ন শহরগুলিকে সংযুক্ত করে।”

দরপত্র অনুযায়ী পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য পাঁচটি কোম্পানি যোগ্য ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে একটি ফ্রান্সের, একটি সিঙ্গাপুরের, দুটি দক্ষিণ কোরিয়ার এবং একটি চীনের। তবে শেষ পর্যন্ত পাশে ছিল চীন। কারণ অন্যদের বিশ্বাস ছিল বিশ্বব্যাংকের সহায়তা ছাড়া বাংলাদেশের পক্ষে সেতু নির্মাণ সম্ভব নয়।

‘বাংলাদেশে তাদের আস্থা ছিল না। এগিয়ে এসেছে শুধু চীনের মেজর ব্রিজ। তারা যদি সেদিন সরে না যেত, আমরা হয়তো সে সময় সেতুটি খুলতে পারতাম না। ”

পদ্মা সেতুকে বাংলাদেশের ‘উন্নয়নের প্রতীক’ আখ্যায়িত করে তিনি আরও বলেন, “এই সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্ধেক দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের 19-21 জেলার প্রায় 80 মিলিয়ন মানুষ উপকৃত হবে।” বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১.২৩ থেকে ১.৫ শতাংশ পর্যন্ত যোগ হতে পারে। বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বিবেচনায় এই সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে এই সেতুর ফলে শুধু 8 কোটি মানুষই নয়, গোটা দেশ উপকৃত হবে।

প্রসঙ্গত, বিশ্ব ব্যাংক সড়ে দাঁড়ানোর পড়েই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নিলেন যে নিজেদের অর্থায়নেই তৈরী করা হবে পদ্মা সেতু। যেই কথা সেই কাজ। পদ্মা সেতু নির্মাণ করে আসীম সাহসিকতার পরিচয় দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

About Shafique Hasan

Check Also

দীর্ঘ ১৭ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন বিএনপি নেতা পিন্টু

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় খালাস পাওয়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *