পদ্মা সেতু ( Padma Bridge ) দক্ষিন বাংলার মানুষের জন্য একটি স্বপ্ন ছিল যেটা অবশেষে বাস্তবে রুপ পেল। এই সেতুটি কারো জন্য স্বপ্নের স্থাপনা, কারো কাছে সৌভাগ্যের দরজা, আবার কারো কারো জন্য এটা হবে জীবিকার একটি প্রধান উৎস। এই পদ্মা সেতু ( Padma Bridge ) বাস্তবায়নের পর অনেকের নিকট একটি আবেগের অবকাঠামো হয়ে উঠছে। চলমান এই মাসে অর্থাৎ জুনের ২৫ তারিখ উদ্বোধন হবে পদ্মা সেতু ( Padma Bridge )।
সে লক্ষ্যে এর কাজ এখন একদম শেষ পর্যায়ে। অনেকের নিকট আস্তে আস্তে এই সেতুটি হয়ে উঠছে আবেগের একটি অবকাঠামোগত বিষয়।
পদ্মা সেতু নির্মাণের বিরোধিতাও ছিল। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের জোরালো অভিযোগও রয়েছে। রয়েছে বাস্তব-অবাস্তব দুর্নীতির অভিযোগ। বেশি টাকা খরচের সমালোচনাও রয়েছে। কিন্তু সব মাড়িয়ে পদ্মা সেতু এখন উচ্ছ্বাসের নাম।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের শুরু থেকেই অনেক খবর আসছে। হয়েছে সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়; লেখা হয়েছে বিশ্লেষণ। প্রকাশিত হয়েছে ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন। বাংলাদেশের পত্রিকা, টেলিভিশন, অনলাইন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেজ, ইউ /টিউব, ব্লগ সহ অনেক কিছু খবরের উৎস হয়েছে? সার্চ ইঞ্জিন গুগল বলছে, গত কয়েক বছরে পদ্মা সেতু নিয়ে অন্তত আড়াই কোটি রিপোর্ট এসেছে।
গুগলে ইংরেজিতে ‘পদ্মা ব্রিজ নিউজ’ লিখে সার্চ দিলে এক কোটি ২৩ লাখ খবরের লিংক পাওয়া যায়। শুধু ইংরেজিতে ‘পদ্মা সেতু’ লিখলেই পাবেন ৬০ লাখ ১০ হাজার খবরের লিঙ্ক। এর মধ্যে ছবি, ভিডিও, ওয়েবসাইট থাকলেও বেশির ভাগই খবর।
বাংলায় ‘পদ্মা সেতুর খবর’-এর জন্য গুগলে সার্চ করলে এবং আপনি প্রায় ১৪ লাখ সংবাদের লিঙ্ক পাবেন। আর বাংলায় ‘পদ্মা সেতুর খবর’ লিখে সার্চ করলে ১৬ লাখ ২০ হাজার লিংক পাবেন। শুধু ‘পদ্মা সেতু’ লিখে ৩৬ লাখ লিঙ্ক পেয়ে যাবেন। পদ্মা সেতুর প্রতিবেদন এই লিঙ্কগুলিতে পাওয়া যায়। প্রচলিত মিডিয়ার বাইরের খবরও এই লিঙ্কগুলিতে পাওয়া যায়।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, গুগলের ডাটাবেজ খুবই শক্তিশালী। তাই গুগলের এই সংখ্যাসূচক তথ্য সম্পূর্ণরূপে গ্রহণযোগ্য। তবে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে টেক্সট প্রিন্ট করার সময় এক ধরনের কীওয়ার্ড ব্যবহার করা হয়। গুগলে ওই কীওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করলে তথ্য পাওয়া যাবে।
পদ্মা সেতুর প্রতিটি কীওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করলে গুগলের ফলাফলে বিভিন্ন সংখ্যার খবর আসবে। এতে মোট খবরের সংখ্যা জানা সম্ভব কিনা জানতে চাইলে সুমন আহমেদ সাবির বলেন, গুগল কীভাবে তাদের ডাটাবেস তৈরি করে তা তারা প্রকাশ করেন না। যাইহোক, যেহেতু প্রতিটি কীওয়ার্ড অনন্য এবং তারা ফলাফল অনুসন্ধানের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে, পদ্মা ব্রিজ নিউজ, পদ্মা ব্রিজ, পদ্মা সেতুর সংবাদ, পদ্মা সেতু – এই কীওয়ার্ডগুলির অনুসন্ধানের ফলাফল ভিন্ন হওয়া উচিত। তাই এগুলো যোগ করে মোট সংখ্যা সম্ভব।
প্রচলিত সংবাদের বাইরেও নাগরিক সাংবাদিকতা রয়েছে। পদ্মা সেতু নিয়ে ইউ/’টিউবে লাখ লাখ ভিডিও তৈরি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসংখ্য লেখালেখি হয়েছে। ইন্টারনেটে এসবের বিক্ষিপ্ততা দেখা যায়। সঠিক সংখ্যা জানা কঠিন। প্রচলিত মিডিয়ার বাইরে যে তথ্য তৈরি হচ্ছে তার সত্যতা নিয়ে আবারও প্রশ্ন থেকে যায়।
ডিজিটাল গভর্নেন্স অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশনের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট ড. নবীর উদ্দিন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে ইউ’/টিউবে প্রায় ১০ লাখ ভিডিও রয়েছে। এ ধরনের ভিডিও পদ্মা সেতুর প্রচারে সহায়তা করলেও অনেক ক্ষেত্রেই অমিল রয়েছে। ফ্যাক্ট চেকিংয়ের মাধ্যমে এগুলো পরীক্ষা করার সুযোগ রয়েছে।
পেশাজীবী সাংবাদিকরা কয়েক বছর ধরে নিয়মিত পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতি নিয়ে প্রতিবেদন করে আসছেন। তারা প্রতিনিয়ত ছুটছে নতুন খবরের সন্ধানে। খবরে ভিন্ন রূপ নিয়ে এলেন তিনি। পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক প্রতিবেদন লিখেছেন গনমাধ্যমের বিশেষ প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন। একটি সেতু নিয়ে এত খবর কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অর্থায়ন থেকে শুরু করে নির্মাণ সবকিছুতেই পদ্মা সেতু ঘটনাবহুল। সেতুর দিক থেকে এটিই দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। দেশীয় অর্থায়নের সমস্যাও ছিল।
আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা অনলাইনে লক্ষ্য করেছি যে পাঠকরা পদ্মা সেতু নিয়ে বেশি পড়েন। ফলে, প্রকল্পের অগ্রগতির প্রতিটি তথ্য অনলাইনে পাঠকদের আকৃষ্ট করার জন্য জানানো হয়েছে। সেতুর পাইলিং, স্থাপনের কাজ। স্প্যান এবং নদী ব্যবস্থাপনা প্রতিবেদন থেকে বাদ দেওয়া হয়নি।
নির্মাণের শুরু থেকেই পদ্মা সেতুকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন অন্য একটি সংবাদ মাধ্যমের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রাজীব আহমেদ। নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, পেশাগত কারণে অন্তত ২৫ বার পদ্মা সেতুতে যেতে হয়েছে। প্রতিবারই পুরনোকে ছাপিয়ে নতুন তথ্য দিতে হয়।
পদ্মা সেতু নিয়ে যেমন লক্ষাধিক গল্প হয়েছে, তেমনি অনেক গল্প নিয়ে মাঝে মাঝে রসিকতাও হয়েছে। প্রতিটি পাইলিং, পিলার বা স্প্যান বসানোর পর সংবাদকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘পাইলিং জার্নালিজম’ বা ‘স্প্যান সাংবাদিকতা’ বলে ট্রোল করা হয়। এখনও ট্রোলড হচ্ছে।
পদ্মা সেতুর কাজ শুরুর পর থেকে প্রতি মাসের প্রথম দিনে টেলিভিশনে রিপোর্ট করেছেন এহসান জুয়েল। বর্তমানে তিনি অহনা টিভির প্রধান প্রতিবেদক। এহসান জুয়েল সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “আমরা যারা সেতুটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত দেখেছি, তাদের জন্য এই অভিজ্ঞতা বিশাল। আমরা যখন পদ্মা সেতুর খবর শুরু করি তখন পদ্মায় পানি ছাড়া আর কিছুই ছিল না। প্রতিটি ধাপ দেখিয়ে সেতু নিয়ে সাংবাদিকরা জনগণকে বুঝিয়েছেন পদ্মার ওপর সেতু তৈরি হচ্ছে।’
পদ্মা সেতু নিয়ে প্রতিদিন নতুন নতুন কন্টেন্ট ও সংবাদ প্রতিবেদন তৈরি হচ্ছে। নতুন নতুন দিক তুলে ধরছে প্রতিবেদকেরা, সেইসাথে ইউ”টিউব ভিডিও ক্রিয়েটররা এই সেতু নিয়ে সৃষ্টি করছে নতুন নতুন ভিডিও। যেদিন পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হবে, সেদিন অনেকের নিকট এটি একটি ইতিহাসে হয়ে থাকব।