Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / পদ্মা সেতুর পর মেগা পরিকল্পনা, ১৭ গ্রাম রুপান্তরিত হবে শহরে

পদ্মা সেতুর পর মেগা পরিকল্পনা, ১৭ গ্রাম রুপান্তরিত হবে শহরে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধশালী উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য সুদূর প্রসারী কিছু পরিকল্পনা গ্রহন করেছে। আর এই সকল পরিকল্পনার পদক্ষেপ হিসেবে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং গ্রাম পর্যায়ে শহরের সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে দেশের সমগ্র গ্রামকে শহরে পরিনত করার মতো বড় ধরনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। গ্রামকে শহরে উন্নীত করতে পারলে শহর এবং গ্রামের মধ্যে কোন ভিন্নতা থাকবে না। যে পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশ হবে উন্নত রাষ্ট্রের মতই। তাই বাংলাদেশের ( Bangladesh ) সকল গ্রামকে শহরায়ন করতে পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে গ্রামে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে যাচ্ছে সরকার। গ্রামেই গড়ে উঠবে শহরের মতো দৃষ্টিনন্দন ঘরবাড়ি। পাড়া-মহল্লায় থাকবে পাকা রাস্তা এবং কিছু ক্ষেত্রে সুন্দর দৃষ্টিনন্দন কার্লভাট ও ব্রিজ থাকবে। প্রতিটি বাড়িতে থাকবে পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা এবং পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও স্যানিটেশন সুবিধা। গ্রামগুলোতে থাকবে স্কুল, শপিংমল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাট বাজার, কমিউনিটি স্পেস বা বিনোদনের সুবিধা থাকবে। রাস্তায় রোড লাইট থাকবে। বিভিন্ন কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।

সাধারণভাবে শহরের সকল ধরনের নাগরিক সুবিধা গ্রামেই পাওয়া যাবে। প্রথম ধাপে দেশের দেশের ১৭টি গ্রামকে উল্লেখিত সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় পাইলট ভিত্তিতে মোট ৩০০টি গ্রামকে শহরে পরিণত করা হবে। সম্প্রতি ‘আমার গ্রাম-আমার শহর : প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ’ এর কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সাম্প্রতিক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

শহরের মতো গ্রামকেও পরিকল্পিতভাবে গড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ড. তাজুল ইসলাম। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকার ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ কনসেপ্ট বাস্তবায়নে কাজ করছে। এজন্য শহরের মতো গ্রামগুলোকেও পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হবে। প্রাথমিকভাবে কয়েকটি গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে শহরের সব সুযোগ-সুবিধা দিয়ে গড়ে তোলা হবে। এটি সফল হলে ধীরে ধীরে এ ধরনের গ্রামের সংখ্যা বাড়ানো হবে।

প্রথম ধাপে দেশের ১৭টি গ্রামকে পাইলট গ্রাম হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার চালাকচরের হাফিজপুর গ্রাম, কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের বিপুলশারের শেকচাইল গ্রাম, রাজশাহীর বাঘমারার সোনাডাঙ্গা গ্রাম, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার খুরনিয়ার টিপনা গ্রাম, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি গ্রাম, বরিশালের হিজলা উপজেলার মেমানিয়ার ইন্দুরিয়া গ্রাম, সিলেটের গোয়াইনঘাটের রুস্তমপুরের বাগাইয়া গ্রাম এবং নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার শাহাতার ডেমুরা গ্রাম। বিশেষ অঞ্চল হিসেবে মনোনীত গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে-সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জের শিমুলবাক গ্রাম, গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি গ্রাম, নওগাঁর নিয়ামতপুরের শ্রীমন্তপুরের দরগাপাড়া গ্রাম, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনীর দাতিনাখালী গ্রাম, রাঙামাটির বরকলের ছোট হরিণা গ্রাম, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড়ের বিলচান্দা গ্রাম এবং চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ইছাখালির চরশরত গ্রাম।

এ ছাড়া দ্বীপের পর্যটন সম্ভাবনাময় দুটি বিশেষ গ্রাম হলো ভোলার চর ফ্যাশন উপজেলার চর কুকরি-মুকরি এবং কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ। সভায় প্রকল্প পরিচালক আবুল মঞ্জুর মো. সাদেক বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে গ্রন্থাগার, খেলাধুলা ও বিনোদন সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রতিটি উপজেলায় যুব বিনোদন কেন্দ্র ও যুব ক্রীড়া কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে ইতোমধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অডিটোরিয়াম, মডেল মসজিদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কাম অফিস ভবন এবং উপজেলা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পাবলিক লাইব্রেরি ভবন নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এসব অবকাঠামো নির্মাণে ইতোমধ্যে জমি সংকট তৈরি হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে লাইব্রেরি সম্প্রসারণ, খেলাধুলা ও বিনোদন সুবিধা, অবকাঠামো নির্মাণে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে উন্নত বিশ্বের মতো একই জায়গা থেকে বিনোদনমূলক সেবা নিশ্চিত করে সরকারি অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সভায় জানান, বর্তমানে তার অধিদপ্তরে ১০১টি প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক প্রকল্পই বিভিন্ন কারণে সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে। এই প্রকল্পের সংশোধনের সময়, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প সমীক্ষার ফলাফলের আলোকে ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ অঙ্গীকারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ উপাদানগুলি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এইভাবে, আমার গ্রাম আমার শহর নির্বাচনী অঙ্গীকারের সাথে যুক্ত ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৩০০টি গ্রামকে পাইলট গ্রাম বা আরও বেশি সংখ্যক গ্রামকে শহর হিসাবে গড়ে তোলা যেতে পারে। এতে তুলনামূলকভাবে অর্থ সাশ্রয় ও দ্রুততার সঙ্গে অনেক গ্রাম উন্নয়ন সম্ভব হবে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, আগামী পাঁচ বছরে এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে দেড় লাখ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। উন্নয়ন ব্যয়ের প্রায় ১৬ শতাংশ বিদেশী দাতাদের কাছ থেকে পাওয়া যাবে। প্রকল্প প্রস্তাবে গ্রামীণ ও শহরের মধ্যে বৈষম্য কমাতে ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, গ্রামীণ রাস্তাঘাট, পানীয় জল, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা, মানসম্মত শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন, দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা এবং ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণ করতে হলে ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। গ্রামে একটি আধুনিক শহরের মতো সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন সেবা ও সরবরাহ সংশ্লিষ্ট আইনে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে।

এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের পর সরকার একটি বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে চলেছে বাংলাদেশে সেটা নিশ্চিত বলা যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী বেশকিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে সেটা বাংলাদেশকে পুরোটা পরিবর্তন এনে দেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ শুরু করেছেন যেটা প্রাথমিকভাবে শুরু হয়েছে।

About bisso Jit

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *