আর মাত্র অল্প কয়েকদিন বাকি বাংলার মানুষের সপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হবার। আর তাই মানুষ অধীর আগ্রহে রয়েছে অপেক্ষমান। পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়াতে বিশ্ব দরবারে আমাদের মাথা হয়েছে অনেক উঁচু। বাংলাদেশের মানুষের কাছে পদ্মা সেতু এখন একটি গর্ব ও ঐতিহ্য। সম্প্রতি জানা গেল পদ্মা সেতু উদ্বোধন নিয়ে ভারতের মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি।
২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সমসাময়িক ইতিহাসে একটি মাইলফলক হতে চলেছে। বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে এবং একটি চীনা কোম্পানির প্রযুক্তিগত সহায়তায় নির্মিত সেতুটির উদ্বোধনের জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
পদ্মা সেতু নিয়ে ভারতের উৎসাহের প্রধান কারণ সেতুটি সড়ক বা রেলপথে ঢাকা ও কলকাতার দূরত্ব অন্তত তিন ঘণ্টা কমিয়ে দেবে। দিল্লি আশা করে যে ভারতীয় পণ্য এবং যাত্রীবাহী যানবাহনগুলিকে শীঘ্রই সেতুটি ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হবে, কারণ সাম্প্রতিক অতীতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একের পর এক সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। সেক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য যথারীতি বাড়বে এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলও ভৌগোলিকভাবে দেশের বাকি অংশের কাছাকাছি হবে।
আর পদ্মা সেতু নিয়ে ভারতের অস্বস্তির সামান্যতম উপাদান হল এটি নির্মাণ করেছে একটি চীনা কোম্পানি। সে দেশের সঙ্গে ভারতের শীতল যুদ্ধ সবারই জানা। দিল্লির জন্য এটা খুবই গর্বের বিষয় হতো যদি কোনো ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মকে সেতুটি নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হতো।
তবে এখানে একটা বড় সান্ত্বনা হলো, চীনা কোম্পানি নির্মাণ করলেও বাংলাদেশ এর জন্য কোনো চীনা ঋণ নেয়নি। ফলে ঋণ শোধ করতে না পেরে শ্রীলঙ্কা হাম্বানটোটা বন্দর চীনের কাছে হস্তান্তর করতে যেভাবে বাধ্য হয়েছিল, পদ্মা সেতুর তেমন প্রভাব আর হবে না।
কয়েকদিন আগে দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাস নির্বাচিত ভারতীয় সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে নিয়ে গিয়ে পদ্মা সেতু দেখায়। দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার শাবান মাহমুদ সিনিয়র সাংবাদিকদের নিয়ে সেতুটি পরিদর্শন করেন।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া লিখেছে, “বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি টার্নিং পয়েন্ট পদ্মা সেতু একটি চীনা কোম্পানি দ্বারা নির্মিত হয়েছিল এটা সত্য, কিন্তু চীনের অর্থনৈতিক সহায়তার ব্যাপারে বাংলাদেশ অত্যন্ত সতর্ক ও সতর্ক অবস্থান নিচ্ছে। আসলে বারবার আহ্বান সত্ত্বেও ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে হাই-স্পিড রেল সংযোগের জন্য চীনের কাছ থেকে প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ।
প্রকৃতপক্ষে, অর্থনীতি ও কূটনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেভাবে চীন ও ভারতের মধ্যে সফল ‘ভারসাম্য’ বজায় রেখেছে তাতে দিল্লি বেশ সন্তুষ্ট।
দিল্লির সাউথ ব্লকে বিদেশ মন্ত্রকের এক ঊর্ধ্বতন আধিকারিক বলেছেন, “আমরা বুঝতে পারছি কেন পদ্মা সেতুর চুক্তি একটি চীনা কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছিল৷ এতে ভারতের অসন্তুষ্ট হওয়ার কোনও প্রশ্নই আসে না৷
তিনি দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “বাংলাদেশের একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি আছে, এর নিজস্ব ধারণা ও বাধ্যবাধকতা রয়েছে।” আমাদের একমাত্র উদ্বেগ এই অঞ্চলে ভারতের নিরাপত্তা স্বার্থের সাথে কোনোভাবে আপস করা হচ্ছে কিনা – এবং সেই দৃষ্টিকোণ থেকে, ঢাকা ও দিল্লি উভয়ই একে অপরের অনুভূতিকে সম্মান করে। ”
ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী এরই মধ্যে বলেছেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন কীভাবে বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়াতে পারে তা আমরা নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছি। যেমন, বাংলাদেশ থেকে ভারতে বার্ষিক রপ্তানি ইতিমধ্যেই ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, এখন তা ২০০ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়ে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু চালু হলে এই সংখ্যা বাড়তে থাকবে। ‘
ভারতীয় রাষ্ট্রদূত যোগ করেছেন যে দুই দেশ এখন একটি ‘অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি’ নিয়ে একটি যৌথ সমীক্ষা চালাচ্ছে – দুই দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীরা শীঘ্রই এটি অনুমোদন করতে পারেন। এরপর চুক্তির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা শুরু হবে, যার অন্যতম ভিত্তি হবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন।
এছাড়া কলকাতা ও ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেসও শিগগিরই পদ্মা সেতুর দখলে নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে ট্রেনের যাত্রার সময় কমপক্ষে তিন ঘণ্টা কমে যাবে, যা উভয় দেশের যাত্রীদের জন্য যাত্রাকে অনেক সহজ করে তুলবে। ফলে পশ্চিমবঙ্গের বহু পর্যটক ও ব্যবসায়ীরাও এই সেতু ও নতুন ট্রেন রুটের উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ভারত আমাদের প্রতিবেশী বন্ধু দেশ হিসেবে কোনোদিন আমাদের ক্ষতি চায়নি। তারা বলেছে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। আর একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের যেকোনো কিছু করার অধিকার আছে। তাদের মন্তব্য শুনে সবার ধরণা ভারত বন্ধুসুলভ আচরণ করেছেন।