সৈয়দ আবুল হোসেন ছিলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী। যখন তিনি এই সম্মানীয় পদে আসীন হয়েছিলেন ঠিক তখন থেকেই অতি সততা ও নিষ্ঠার সহিত দায়িত্ব পালন করে গেছেন। সম্প্রতি পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন তাকে দেখা যায় সেখানে। জানা গেছে বাংলাদেশে এসে সৈয়দ আবুল হোসেন প্রধানমন্ত্রীর পা ছুঁয়ে সালাম অভিবাদন জানান।
সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও তৎকালীন সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর ম্যুরাল-১ উন্মোচন করেন। উদ্বোধনী মঞ্চে সৈয়দ আবুল হোসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পা ছুঁয়ে অভিবাদন জানান।
বিশ্বব্যাংক থেকে দুর্নীতির কাল্পনিক অভিযোগ সামনে আসার পর মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করতে হয় আবুল হোসেনকে। এছাড়া সেতু বিভাগের তৎকালীন সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে ৪০ দিন কারাগারে থাকতে হয়েছে।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান প্রমুখ।
শনিবার (২৫ জুন) মাওয়া প্রান্তে টোল পরিশোধের পর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচনের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
উদ্বোধনের আগে প্রধানমন্ত্রী স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম ও বিশেষ সিলমোহর উন্মোচন করেন। পরে তিনি মাওয়া টোল প্লাজায় উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন। পদ্মা সেতু এলাকায় আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাজিরায় জনসভায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার লাখ লাখ মানুষকে সরাসরি সংযুক্ত করবে।
১৯৯৬ সালে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু উদ্বোধনের পরপরই পদ্মার ওপর সেতু নির্মাণের দাবি ওঠে। তবে প্রমত্ত পদ্মার বুকে ইস্পাত-কংক্রিটের কাঠামো তৈরি করা সহজ ছিল না। সেই প্রকৌশলগত দিক বাদ দিলে পদ্মা সেতুর অর্থায়নেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়।
১৯৯৮-৯৯ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর ২০০১ সালের ১২ জুলাই প্রথম পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্ব চার দলীয় জোট ক্ষমতায় এলে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি সেতু প্রকল্পের। ওয়ান-ইলেভেনখ্যাত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অবশ্য সেতুটির প্রথম প্রকল্প একনেকে পাস করা হয়। ২০০৯ সালে সেতুর নকশা প্রণয়নের প্রস্তাবে অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর প্রস্তাব। প্রথম দফায় সংসদে সেতুর ব্যয় সংশোধন করে নির্ধারণ করা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা।
২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি সই হয়। তবে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ঋণচুক্তি স্থগিত করে বিশ্বব্যাংক। পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০১২ সালের ২৩ জুলাই তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করেন। শর্তসাপেক্ষে এ প্রকল্পে আবার ফেরতও আসে বিশ্বব্যাংক। তবে ২০১৩ সালের ৪ মে বিশ্বব্যাংকের ঋণসহায়তা প্রত্যাখ্যান করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা।
প্রথম পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় ১২ জুলাই ২০১১ দীর্ঘ চড়াই-উতরাইয়ের পর, ১২ ডিসেম্বর ২০১৫, শেখ হাসিনা মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের জন্য মূল পাইলিং কাজের উদ্বোধন করেন।
২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হয়। ২০১৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর স্প্যানে রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো শুরু হয়। সড়কপথের জন্য স্ল্যাব বসানোর কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ।
২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর সবশেষ ৪১তম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে ৪২টি পিলারের ওপর ৪১টি স্প্যানে পূর্ণ ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট পদ্মা সেতুতে সবশেষ সড়ক স্ল্যাব স্থাপনের পর মূল সেতুতে পিচ ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয় ১০ নভেম্বর।
১৭ মে ২০২২-এ, পদ্মা সেতুতে যানবাহনের জন্য টোলের হার নির্ধারণ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। সেতু বিভাগ থেকে গত ২৯ মে ‘পদ্মা সেতু’ নামকরণ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো একটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের সাহস দেখান শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আজ বিশ্বে স্বনির্ভর বাংলাদেশের পরিচয়ের একটি চক্র সম্পন্ন হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জেননেত্রী শেখ হাসিনা হলেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী আর সেইটা তিনি প্রমাণ করে দিয়ে গেলেন বাংলার মাটিতে। সবাই বিস্ময়ে হয়ে তাকিয়ে রয়েছে পদ্মা সেতুর দিকে। লক্ষ লক্ষ মানুষ ছুটে গিয়েছে একবারের জন্য হলেও পদ্মা সেতুকে খুব কাছ থেকে দেখতে।