বহু জল্পলা-কল্পনার শেষে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হল। প্র্রধানমন্ত্রীর সাহসি পদক্ষেপে নিজস্ব অর্থয়নে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। পদ্মা সেতুর তৈরী মাধ্যমে বাংলাদেশের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন হল বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দক্ষিন-বঙ্গের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনের পর থেকে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সেতুর উপরে নানা ধরনের অপ্রীতিকর কান্ড ঘটানোর জন্য মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও টিকটক বানানো থামছে না। অ্যাম্বুলেন্স কিংবা প্রাইভেটকারে ঠিকই সেতুর মাঝখানে গিয়ে টিকটক তৈরিতে ব্যস্ত একদল তরুণ।
ব্রিজের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর তৎপরতা সত্ত্বেও তার মধ্যেই তারা ঠিকটক তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। টিকটক ভিডিও করায় ফখরুল আলম নামে এক যুবককে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। এ সময় দোষী সাব্যস্ত ওই যুবক অপরাধ স্বীকার করে জরিমানা পরিশোধ করেন। তিনি একটি প্রাইভেটকারে পদ্মা সেতুতে আসেন। জানা গেছে, অনেকেই অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে এ কাজে যুক্ত হয়েছেন।
এদিকে স্বপ্ন সংযোগ খুলে দেয়ার দ্বিতীয় দিন সোমবার (২৭ জুন) বেশ স্বাচ্ছন্দে পদ্মা সেতু পাড়ি দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করার মতো রুপ আর নেই। দুই পাশের টোল প্লাজাগুলোতে যানজট না থাকায় যাত্রী ও চালকরা চোখের পলকে গন্তব্যে চলে যাচ্ছেন। সেতুর ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। বাইক চালকদের ফেরিতে পদ্মা পাড়ি দিতে হয়েছে।
দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সৌন্দর্যের প্রতীক প্রমত্ত পদ্মার কংক্রিটের সেতুর ওপর দিয়ে ভোর থেকে টোল প্লাজায় কোনো যানজট না থাকায় চালকরা স্বাচ্ছন্দ্যে টোল প্লাজায় যান। পর্যাপ্ত জায়গা ও একাধিক টোল বুথ থাকায় সেতুর দুই পাশে জাজিরা ও মাওয়া যানবাহন চলাচলে ছিল না কোনো ভোগান্তি। গড়ে, প্রতিটি বুথে টোল দিতে ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ড সময় লাগে। তাই আগের দুর্ভোগের জায়গা নিয়েছে স্বস্তি। সাশ্রয় হচ্ছে যাতায়াতের সময়ও।
টোল পরিশোধ করেই উত্তাল পদ্মার বুক চিরে সেতু দিয়ে বাহন ছুটে চলছে নির্ধারিত গন্তব্যে। দূরপাল্লার যান কিংবা ব্যক্তিগত গাড়ি সবাই ব্যস্ত বহুদিনের লালিত স্বপ্ন নিজ চোখে পরখ করে নিতে।
এদিকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেতুর ওপর মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ ঘোষণা করায় কোনো বাইক চালক সেতু পার হতে পারেননি। সকাল থেকেও অনেকে উৎসাহ নিয়ে মোটরসাইকেলে পদ্মা সেতু পার হতে আসেন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আটকে আছে তারা। টোল প্লাজার আগে মোটরসাইকেল থামিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সেতু পার হতে না পেরে কিছুক্ষণের জন্য সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় মোটরবাইক চালকরা। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।
মুন্সীগঞ্জ পদ্মা সেতু উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মোটরসাইকেল আরোহণ বন্ধ থাকবে।
মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকায় অনেকে পিকআপে করে বাইক নিয়ে পদ্মা সেতু পার হওয়ার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। বেশিরভাগ বাইক পথ না পেয়ে ফেরি পার হয়। উৎসুক মোটরসাইকেল চালকদের ভিড় এড়াতে অনেক কর্মজীবী মানুষও এই সিদ্ধান্তে ভোগেন।
তবে, বাইক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও টিকটক বানানো থামছে না। অ্যাম্বুলেন্স কিংবা প্রাইভেটকারে করে ঠিকই সেতুর মাঝখানে গিয়ে টিকটক তৈরিতে ব্যস্ত একদল তরুণ।
মুন্সীগঞ্জ জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল কবির এ প্রসঙ্গে দেশের একটি অন্যতম গনমাধ্যমকে বলেন, সেতুর সার্বিক নিরাপত্তায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ সময় আরও পাঁচটি গাড়িকে সতর্ক করা হয়।
তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতও বসানো হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, উদ্বোধনের পর থেকে নানা প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার কারনে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু তার সত্বেও থামছে না টিকটকসহ অন্যান্য অপ্রীতিকর কর্মকান্ড।