বিএনপি সিনিয়র নেতা এবং দলটির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ করেন। তিনি আ.লীগ সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে নানা সমালোচনা করেছেন। আ.লীগ সরকারকে একটি স্বেচ্ছাচারী সরকার হিসেবে অভিহিত করে বলেন, বর্তমান সরকার অর্থ আত্মসাৎ করে চলেছেন বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে। এবার তিনি পদ্মা সেতুতে শেখ হাসিনা এবং তাঁর দুই সন্তানের ছবি তোলা নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ক্ষমতাসীন সরকারের দুঃশাসন ও সিন্ডিকেটের কারণে মানুষ অসহায়। দেশ চলছে মাফিয়া শাসনের অধীনে। এখানে আইনের কোনো বালাই নেই। হবু চন্দ্র রাজার গবু চন্দ্র মন্ত্রীরা, যা খুশি বলছে এবং করছে।’
তিনি বলেন, উদ্বোধনের পর পদ্মা সেতুতে ছবি তোলা যাবে না। ছবি তোলায় কয়েকজনকে জরিমানাও করা হয়েছে। কিন্তু কয়েকদিন আগে পদ্মা সেতুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছেলে-মেয়ের সঙ্গে সেলফি তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। আসলে এক দেশে দুই আইন চলছে। দেশে নির্বাচিত সরকার থাকলে তারা আইন মানত। তারা তো অনির্বাচিত। সেজন্য যখন যা চাহে তারা তাই করছে।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
পরে অর্পণ সংঘের উদ্যোগে যুবদলের সাবেক নেতা প্রয়াত জিএস বাবুলের স্ত্রীর হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন রিজভী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, ডাঃ জাহেদুল কবির, স্বচ্ছসেবক দলের সদস্য বিথিকা বিনতে। অর্পণ সংঘের হোসেন, ওমর ফারুক কাওসার ও আরিফুর রহমান তুষার প্রমুখ।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে জনগণের দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, মাফিয়া আওয়ামী লীগের লোকজন সিন্ডিকেট করে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ ভাড়া আদায় করছে। আজ সিন্ডিকেট এমনভাবে চেপে বসেছে যে মানুষ জোরে কিছু বলতে পারে না। কোরবানির বাজারেও আওয়ামী লীগের লোকজন সিন্ডিকেট করছে। ক্ষমতাসীন দল যথেচ্ছা দাম বাড়াচ্ছে, ক্রেতাদের পশু কিনতে বাধ্য করছে।
লোডশেডিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এখন এত লোডশেডিং কেন? প্রধানমন্ত্রীর সব কথা দ্বিচারিতামূলক। তিনি নাকি বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছেন। তাহলে লোডশেডিং কেন? আসলে তিনি চান নিরঙ্কুশ ক্ষমতা, কদিন আগেও বলেছেন। এ ধরনের কথা তো ফেরা”উনরা বলে। আসলে আপনি জনগণের কাছে একজন সৎ মায়ের ভূমিকা পালন করছেন। আপনি একচ্ছত্র ক্ষমতা চান। কিন্তু ক্ষমতা আসে জনগণের কাছ থেকে। আপনার কাছে তা নেই। আপনি নতুন নতুন প্রকল্প করেন টাকা পাচার করার জন্য।’
সরকারের কড়া সমালোচনা করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘উন্নয়নের নামে হৈ চৈ করে এত লাফালাফি করলেন কোথায় আপনার বিদ্যুৎ? দেশবাসী আপনাকে আর সহ্য করবে না। আপনি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মিথ্যাচার করছেন। দশ টাকায় চাল কোথায়? কোথায় ঘরে ঘরে চাকরি? বর্তমানে বাংলাদেশে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেকার রয়েছে। আপনি ক্ষমতায় থাকা মানে মানুষ না খেয়ে থাকা। আপনার ক্ষমতায় থাকা মানেই মানুষের বেকার হওয়া। আজ গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে লিখতে ও কথা বলতে পারে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে সরকার বিভিন্ন কালা-কানুন করেছে সরকার।’
রিজভী বলেন, “পুরো দেশকে গ্যাস চেম্বারে পরিণত করে মহামা/রীর মতো দেশ চালাচ্ছেন। যাতে কেউ টু শব্দও না করতে পারে। এজন্যই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে কা’রারু”দ্ধ করা হয়েছে। আপনি তারেক রহমানকে বঞ্চিত করছেন। তবুও তারেক রহমান সুদূর লন্ডন থেকে দেশের জন্য কাজ করছেন।জনগণের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করছেন। বন্যার্তদের জন্য তিনি সার্বক্ষণিক খবর রাখছেন। দলের নেতাকর্মীরা বন্যার্তদের পাশে উপহার সামগ্রী নিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ঈদ উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির কারণে হাপিত্যেশ করছে দেশের মানুষ। সরকার জনগণের সঙ্গে তামাশা করছে। বন্যার পানিতে ভাসমান মানুষের প্রতি সরকারের কোনো দায়িত্ববোধ নেই। পদ্মা সেতুর জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত তারা।’
রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার একটি দানব সরকার এবং অবৈধ সরকার। এই সরকারের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং যার যার অবস্থান থেকে এই সরকারকে প্রতিহত করার চেষ্টা করতে হবে। এ সরকারকে আন্দোলনের মাধ্যমে হঠাতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া কোনো নির্বাচন মেনে নেয়া উচিত নয় কোন দলের। যেকোনো মূল্যে আ.লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে।