বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের শাহাদাতের দিন হলো ১৫ আগস্ট। এই দিনটি রাষ্ট্রীয় শোকের দিন। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বাংলার মানুষ এই দিনে জাতির পিতার সমাধিস্থলে যেয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা গ্যাপন করেন। সম্প্রতি জানা গেছে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিতে না পেরে পদ্মা নদীতে ঝাঁপ এক শ্রমিক এবং ঝাঁপ দেওয়ার আগে রেকর্ড করা ভিডিওতে নুরুজ্জামানকে ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা যায়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ফুল দিতে না পেরে পদ্মা সেতু থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন নুরুজ্জামান খান নামের এক পোশাক শ্রমিক।
নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার আগে রেকর্ড করা ভিডিওতে নুরুজ্জামানকে ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা যায়। ভিডিওতে তিনি বলেন, এখানে (বঙ্গবন্ধুর সমাধি) আমি শুধু মন্ত্রীদের দেখেছি, তারাই শুধু মন্ত্রী। আর তাদের কিছু লোক এবং শুধুমাত্র প্রশাসন। তারা কি দেশের সব কিছু? তারা কি শুধু দেশেই ভূমিকা রাখে? আমাদের কি কোনো ভূমিকা নেই? সরকার নিজেই বলেছে, রাজস্বের ৮০ শতাংশ আসে গার্মেন্টস থেকে। শ্রমিকদের শ্রম দিয়ে তৈরি হয় পোশাক। তাদের ভূমিকা কোথায় গেল? আমি তাদের অধিকার চাই, তাদের স্বাধীনতা চাই।
ভিডিও ভাষণে নুরুজ্জামান বলেন, আমি একজন সাধারণ মানুষ। আমার কথার মূল্য আপনি দিতে পারেন বা নাও দিতে পারেন। তবে আমার মনে হয়, ব্যাপারটা মামুলি নয়, ব্যাপারটা খুবই জটিল। একটি স্বাধীন দেশে, আমরা যদি আমাদের আবেগ প্রকাশ করতে না পারি তবে এটি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যুর মতো মনে হয়। এত কিছু থাকলেও মনে হয় কিছুই নেই। যেখানে আমার কোনো সম্মান নেই, আমার কোনো স্বাধীনতা নেই।
ভিডিওতে তিনি বলেন, জাতির পিতা সবার পিতার সমান। তাই সবাই তার ডাকে সাড়া দিল। বঙ্গবন্ধুকে কিন্তু বন্ধু হিসেবে সম্মান করতে পারিনি। ফজরের নামাজ পড়ে গাড়ি ভাড়ার টাকা বেশি দিয়েছি। এই কষ্টের মূল্য কে দেবে? কার জন্য এই আত্মত্যাগ? জাতির জনকের প্রতি আমাদের ভালোবাসা কি মিথ্যা? নাকি দেখাতে অন্য কিছু করবেন? আমার বাবা একটি মাত্র পরিবার দেখেছেন। জাতির পিতা দেখেছেন সবার সংসার। সারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। জাতির জনকের প্রতি আমাদের ভালোবাসা কি মিথ্যা? আমার আর কোন কথা বলার নেই। যন্ত্রণায় আমার বুক কাঁপছে।
নুরুজ্জামানের স্বজনরা গণমাধ্যমকে জানান, গত ১৫ আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে না ফেরার সময় পদ্মা সেতুতে অবস্থানকালে নুরুজ্জামান খান এই ভিডিও ভাষণ দেন। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর দশম ও ১১তম পিলারের মাঝখান থেকে রেলিং ধরে পদ্মা নদীতে ঝাঁপ দেন তিনি।
এদিকে মাওয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান জানান, নিখোঁজ নুরুজ্জামানকে উদ্ধারে নৌবাহিনী পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ও সেনা সদস্যরা কাজ করছে। পদ্মা সেতুর ৮ নম্বর পিলার থেকে ২৬ নম্বর পিলার পর্যন্ত তল্লাশি চালানো হয়েছে। এ ছাড়া পদ্মা নদীর বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চলছে।
প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলার মানুষের ওাত্যন্ত ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার মানুষ এবং এখনো তিনি বাংলার মানুষের আকছে ততটাই সম্মানিত আছেন। তার জন্যই আজ বাংলাদেশ স্বাধীন একটি রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এবং পেয়েছে অনেক আত্মমর্যাদা।