নারীদের নিয়ে আপ’ত্তিকর বক্তব্য ও ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর আলোচনায় আসেন সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। তার বিতর্কিত মন্তব্যের পর দেশজুড়ে আলোচনায় রয়েছেন, সেই সাথে তাকে নিয়ে নেট দুনিয়ায় নানা ধরনের মন্তব্যে দেখা যাচ্ছে। পদত্যাগ করার পর মুরাদ হাসানকে জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ড. মুরাদ হাসান তার পরিবারের সদস্যদের নিকট ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রধর্ম, রাজনীতি, খালেদা জিয়ার নাতনি ও সর্বশেষ ফোনালাপের বিষয় নিয়ে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন। তার বিতর্কিত মন্তব্য ও অস্বাভাবিক আচরণে বিব্রত তার দলীয় সহকর্মীরাও। তথ্যও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আমি বরাবরই মুরাদ হাসানের সহযোগীতা পেয়েছি। তবে গত তিন মাস ধরে তার আচরণে পরিবর্তন দেখতে পেয়েছি।
বিতর্কিত মন্তব্য আর কল রেকর্ড ফাঁসের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘অসন্তোষ’ বুঝতে পেরে ঢাকার বাসভবন থেকে সকালেই চট্টগ্রামের পথ ধরেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। সোমবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুর ২টা থেকেই তিনি অবস্থান করছেন চট্টগ্রামের স্টেডিয়াম পাড়ার পাঁচতারকা হোটেল রেডিসন ব্লুতে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লুতে আসেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের বিতর্কিত এই প্রতিমন্ত্রী। সন্ধ্যায় যখন প্রধানমন্ত্রীর আদেশের বিষয়টি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশিত হয়, তখনও ডা. মুরাদ হাসান চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লুতেই ছিলেন। ঢাকা থেকে একা এসে রেডিসন ব্লু বে ভিউ হোটেলে ওঠেন ডবল বেডের বিলাসী কক্ষে। গতকাল রাত ২টা পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করছিলেন তিনি। তবে এখন ডা. মুরাদ হাসান কোথায় রয়েছে সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
তবে ফে’সবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন মুরাদ। দুপুরে ফে’সবুকে এক স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি তার ভুলের জন্য ক্ষমা চান।
তিনি লেখেন, ‘আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি অথবা আমার কথায় মা-বোনদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মমতাময়ী মা দেশরত্ন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সকল সিদ্ধান্ত মেনে নেব আজীবন। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’।
এর পর তিনি তার নিজের স্ট্যাটাসে নিজেই কমেন্ট করে। যা হাসির খোরাক জোগায় নেটিজনদের। তিনি কমেন্টেসে লিখেন, “ ভুল করে সবাই নিজের ভুল মেনে নেওয়ার সততা দেখায় না। আল্লাহ আপনাকে সঠিকভাবে ফিরিয়ে আনুন সকলের মাঝে।”
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার এই কমেন্টে প্রায় ১০ হাজার রিঅ্যাকশন ও প্রায় দুই হাজারের বেশি কমেন্টেসের রিপ্লাই আসে।
করিম খান নামে একজন কমেন্ট করেছেন, “নিজের পোস্টে নিজেই সান্তনা দিচ্ছে”। প্রিন্স নামে একজন লিখেন, “চিটারি করতে গিয়ে ধরা খাইছে”। শান্তা নামে একজন কমেন্ট করেছেন, “বেচারা ভুলে রিয়েল আইডি থেকে কমেন্ট করে ফেলছে।”
এদিকে, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (ডিএসএ) অভিযোগ দায়ের করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক এক শিক্ষার্থী। ঢাবির সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (জিএস) জুলিয়াস সিজার তালুকদার মামলাটি করেন। তিনি অভিযোগে বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় মুরাদ হাসানের একটি ভিডিও ক্লিপে বিকৃত খারাপ ও বিদ্বে’ষমূলক বক্তব্য রয়েছে। মামলার বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভিডিওতে ডাঃ মুরাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্পষ্টভাবে অপমান করেছেন। এর মাধ্যমে দেশের প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টিকে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে অবমাননা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী রুকাইয়া হল ও শামসুন নাহার হলের ছাত্রীদেরও নিয়েও নানা ধরনের আশ্লীল কথা বলেছেন।