লাভের আশায় অনেকেই শেয়ার বাজারে জীবনের শেষ সম্বলটুকু বিনিয়োগ করে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় ভাগ্যের বিরুপ প্রতিঘাতে সেই আশা আর হয়ে ওঠে না পূরণ। শেয়ার বাজারে বেশ কয়েকবার ধস নেমেছে এবং এই বিষয়টি সবারই জানা। সেই ধসের কারণে সেই সম্বলটুকু হারিয়ে হয়েছেন একেবারে নিঃস্ব। সম্প্রতি জানা গেল শেয়ার বাজারে ৬৫ লাখ টাকা খুইয়েছেন এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য কাওসার আহমেদ পেনশনের টাকা ও ঋণ নিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছিলেন। শেয়ারবাজারে তার মোট ৭৫ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এখন তাকে প্রতি মাসে প্রায় ৬০ হাজার টাকা কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারী সাবেক সেনা সদস্য এ নিয়ে উন্মাদনা। লোকসান ও ঋণের যন্ত্রণা এড়াতে সম্প্রতি তিনি নিয়মিত ঘুমের ওষুধ সেবন করছেন। ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) অসুস্থ শরীর নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন কাওসার আহমেদ। এ কর্মসূচিতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চান। অনুষ্ঠান চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়েন কাওছার। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমকর্মীরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ডিএমসি) হাসপাতালে পাঠায়।
কাওসার আহমেদ নামে একজন দরিদ্র ব্যক্তি যিনি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছেন, তিনি জানান, তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে ২০০৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন। পেনশনের সমস্ত অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা হয়। এছাড়া আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেন। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা প্রায় সব টাকাই হারিয়ে ফেলেছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ৪০ লাখ টাকা ধার নিয়েছেন। সেই টাকার সুদ বাড়ছে। ঋণ পরিশোধ করতে, একজনকে প্রতি মাসে ৬০,০০০ টাকার কিস্তি দিতে হবে। শেয়ারবাজারে তার ৬৫ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। লোকসান ও ঋণের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে ঘুমের ওষুধ খেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন তিনি। তাই আত্মহত্যার পথও বেছে নেন তিনি। দুঃসময়ে তিনি ঋণের বোঝা থেকে বাঁচতে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চান।
জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় দায়িত্বরত শাহবাগ থানার টহল পরিদর্শক আবুল বাশার বলেন, প্রেসক্লাব চত্বর থেকে কাওছার নামে এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তার কাছ থেকে ১০টি ঘুমের ওষুধ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
প্রসঙ্গত, শেয়ার বাজারে লোকসান করে অনেকেই প্রয়াত হয়েছেন। মানুষের জীবনের শেষ সম্বলটুকু যদি খুইয়ে ফেলে তাহলে জীবন আর কোনো আশা বাকি থাকেনা। মানুষ যে সম্বলটুকু নিয়ে বেঁচে থাকার সুবিশাল স্বপ্ন মনের মধ্যে আঁকে শেয়ার বাজারের করাল থাবা সেই স্বপ্নকে মুহয়য়র্তেই চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয়।