তফসিল অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষ দিন। কিন্তু এখন পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি একাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও তার ছেলে রংপুর-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাদ এরশাদ। মূলত চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী আসন না পাওয়ায় দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি মা-ছেলে। ফলে মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার সময়সীমা বাড়ানো না হলে নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
যদিও মনোনয়ন নিয়ে কোনো জটিলতা নেই রওশন এরশাদ ও তার নির্বাচনী এলাকা (ময়মনসিংহ-৪)। মূলত রওশন এরশাদের পছন্দের রংপুর-১ ও রংপুর-৩ আসনে ছাড় না দেওয়ায় এ জটিলতা দেখা দিয়েছে।
জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ সমর্থকরা বলছেন, রংপুর-৩ আসনে রওশন এরশাদের ছেলে সাদ এরশাদ এবং রংপুর-৩ আসনে দলের সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাকে আরও পাঁচটি আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তবে রংপুর-১ ও রংপুর-৩ আসনে কোনো ছাড় দিতে রাজি নন দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের। সাদ এরশাদকে ময়মনসিংহ-৭ আসন দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন জিএম কাদের। কিন্তু সাদ এরশাদ কোনোভাবেই বাবা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রংপুর-৩ আসন ছেড়ে দিতে রাজি হননি। ফলে রোববার কোনো সমঝোতা ছাড়াই রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের বৈঠক শেষ হয়।
রওশন এরশাদ সমর্থকরা বলছেন, চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী আসন না পেয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রওশন এরশাদ ও সাদ এরশাদ। এখন একটাই আশা- সরকার সমঝোতার উদ্যোগ নিলে রওশন এরশাদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। তা না হলে আনুষ্ঠানিকভাবে এ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিতে পারেন রওশন এরশাদ।
রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা কীভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব? তারা (জিএম কাদের) আমাদের মনোনয়ন ফরম দিচ্ছেন না। তাদের বাধার কারণে ম্যাডাম ও তার ছেলে ও আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছি না।
রওশন এরশাদ পন্থী ও জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, রওশন এরশাদ রংপুর-১ থেকে আমার এবং সাদ এরশাদ রংপুর-৩ থেকে মনোনয়ন চেয়েছেন। একইসঙ্গে রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সম্পাদক গোলাম মসীহ, দলের সাবেক ময়মনসিংহ জেলা সভাপতি কে আর ইসলাম, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশীদ ও হাবিবুল্লাহ বেলালী এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনের জন্য আসন চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা তিনজনকে বসাতে রাজি হয়েছে। সেখানে আবারও সাদ এরশাদকে রংপুর-৩ আসন দিতে রাজি হননি তারা। তাহলে আমরা কীভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব?
যারা জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন
তিনি আরও বলেন, জাতীয় পার্টি জিএম কাদেরের বাবার সম্পত্তি নয়। তারা কীভাবে রাজনীতি করে, আমরাও দেখব। এখন ক্ষমতা আছে, দেখাও। নির্বাচনের পর দেখা হবে।
জাপা জিএম ক্যাডার নেতারা বলছেন, জিএম কাদের রওশন এরশাদকে তিনটি আসন ছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেখানে রওশন এরশাদ, সাদ এরশাদ, ময়মনসিংহ জেলার সাবেক সভাপতি কে আর ইসলামের নাম উল্লেখ করা হয়। তবে সাদ এরশাদকে রংপুর নয়, ময়মনসিংহ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা রাজি হননি। তারা চাইলে এখনো এই তিনজনের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে পারেন। তবে বিশ্রামের জন্য মনোনয়ন ফরম দেওয়া হবে না।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ঢাকা পোস্টকে বলেন, গোলাম মসীহ জাতীয় পার্টির সদস্য নন। তার কথায় কিছু আসে যায় না। কেন আমরা তাদের মনোনয়ন দেব? তবে ম্যাডাম রওশন এরশাদ-সাদ এরশাদের মনোনয়ন সংরক্ষিত রয়েছে। আশা করি তারা আজ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করবেন।
রওশন এরশাদের ভক্তরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার দেখা না হওয়ায় মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন রওশন এরশাদ। অন্যদিকে জিএম ক্যাডারদের সঙ্গে সরকারের সমঝোতার কারণে তারা এখন রওশন এরশাদকে দল থেকে সরানোর পরিকল্পনা করছে। যার কারণে সব জেনেও চুপ থাকতে হয়েছে রওশন এরশাদকে।
রওশন এরশাদের সম্মানে শূন্য জাপা ময়মনসিংহ-৪ আসনে মনোনয়ন
রংপুর-৩ ও ঢাকা-১৭ আসনে জাপার মনোনয়ন পেয়েছেন জিএম কাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রওশন এরশাদ পন্থী এক নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারের এখন রওশন এরশাদের প্রয়োজন নেই। তার মানে সরকার মনে করে জিএম ক্যাডার নিয়ন্ত্রণে রাখতে রওশন এরশাদের প্রয়োজন নেই। তাই বারবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পাননি রওশন এরশাদ। এছাড়া রওশন এরশাদের শারীরিক অক্ষমতা এখন বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।