পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া উপজেলাধীন পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হেদায়েতুল হককে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত করে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে। এই চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ২ ডিসেম্বের রাত ১০ টার দিকে ওই ইউনিয়ন এবং ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের শত শত নেতাকর্মী ভাঙ্গুরা বাজার এলাকায় অবস্থিত সেখানকার স্থানীয় এমপি আলহাজ্ব মকবুল হোসেনের বাসভবনে জমায়েত হতে শুরু করেন। এরপর সেখানে জাহাঙ্গীর আলম মধু যিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রো’হী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, তাঁর পক্ষ নিয়ে এবং তাকে সমর্থন জানিয়ে শ্লো’গান দিতে শুরু করে।
জানা গেছে, সেই সময় স্থানীয় সাংসদ সাংসদ ঐ ইউনিয়নে দলের নেতাকর্মী যারা রয়েছেন তাদেরকে যাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তার পক্ষে কাজ করার জন্য বিভিন্নভাবে বোঝাবার চেষ্টা করেন। এ বিষয় নিয়ে সেখানকার ইউনিয়নের যে সমস্ত প্রবীণ নেতা কর্মী রয়েছেন তারা সাংসদের সাথে প্রায় দুই ঘন্টা যাবৎ আলোচনা করেন। আলোচনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী হেদায়েতুল হকের বড় ভাই ও উপজেলা চেয়ারম্যান বাকি বিল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক আজাদ খান উপস্থিত ছিলেন। তবে নেতাকর্মীরা নৌকার পক্ষে নির্বাচন করতে রাজী হননি বলে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, পার ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে বর্তমান চেয়ারম্যান হেদায়েতুল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক তিনবারের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম মধু, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর রহমান বাদশা ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মজনুর রহমান চেষ্টা চালান। কিন্তু আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত না থাকলেও ভেড়ামারা উদয়ন একাডেমীর প্রধানশিক্ষক হেদায়েতুল হক নৌকা প্রতীক পান। এতে বিষয়টি তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। এ অবস্থায় দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত তিনজন প্রার্থী বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা দেন। এতে তৃণমূল পর্যায়ের অধিকাংশ দলীয় নেতাকর্মী জাহাঙ্গীর আলম মধুর পক্ষ নেন।
এদিকে, বিদ্রোহী প্রার্থীদের আগামী ৬ তারিখের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ শুরু করেন। ফলে উপজেলা আওয়ামী লীগের এমন চাপ প্রয়োগের প্রতিবা’দে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে ইউনিয়নের ভেড়ামারা বাজারে জাহাঙ্গীর আলম মধুর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে নেতাকর্মীরা সংসদ সদস্যের বাসায় গিয়ে বিদ্রো’হী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান জানান দেন।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুস সাত্তার বলেন, হেদায়েত মাস্টার একজন প্রধানশিক্ষক। তিনি রাজনীতি করেন না। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাকে নেতা হিসেবে মানেন না। তারপরও কেন তিনি নৌকা পাবেন? তাই আমরা তার পক্ষে নির্বাচন না করে এক টানা তিনবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতা মধুর পক্ষে নির্বাচন করছি।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির লিটন বলেন, জনমত জরিপে জাহাঙ্গীর আলম মধুর চেয়ে অনেক পিছিয়ে নৌকার প্রার্থী হেদায়াতুল হক। তাই তৃণমূল নেতাকর্মীর দাবির মুখে মধুর নির্বাচন করছি।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাহিত্য ও সংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব আলী বলেন, ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীর চেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী মধু অনেক জনপ্রিয়। তাই আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ মধুকে দল থেকে বহিষ্কারের হুম’কি দিলেও তৃণমূল নেতাকর্মীরা তাকে সমর্থন দিচ্ছেন। তাই তৃণমূলের সিদ্ধান্তে আমরা বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে।
আবুল হাসেম যিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মানব কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন, তিনি বলেন, পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নে জাহাঙ্গীর আলম মধুর জনপ্রিয়তা অনেক বেশি এবং তার কোনো বিকল্প এখানে অন্য কেউ হয়না। তাই এলাকায় প্রার্থিতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দলের নেতাকর্মীরা ভুল করলেও স্থানীয় পর্যায়ের আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা কর্মী যারা রয়েছেন তারা কোনক্রমে ভুল করতে রাজি নন। কারণ যাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তিনি এলাকায় খুব বেশি জনপ্রিয় নন।
বাদল খান যিনি এই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন তিনি জানিয়েছেন, নৌকার প্রার্থী হিসেবে এই ইউনিয়নে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তিনি কোনভাবেই জয়লাভ করতে পারবেন না। কারণ এই ইউনিয়নবাসী বিদ্রোহী প্রার্থীকে বেশি পছন্দ করেন। তাই বিদ্রোহীপ্রার্থীর পক্ষ নিয়েই এখানে এসেছি। সাংসদ তাকে মনোনয়ন না দিলেও তিনি জয়লাভ করবেন বলে আশা রাখি।