দেশের বিভিন্ন জেলায় ধারাবাহিকভাবে ইউনিয়ন পরিষদ ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা বেশিরভাগ ইউনিয়নে নির্বাচিত হয়েছেন, এমনটাই উঠে এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অনেক প্রার্থী নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে নিজেরাই নিজেদের মতো করে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছে। তবে তাদেরকে আওয়ামীলীগের হয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে থাকেন দলের শীর্ষ নেতারা। কিন্তু এ সকল প্রার্থীরা দলের নির্দেশ না মেনে নিজেরা নির্বাচনে অংশ নিয়ে দলে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আখ্যা পাচ্ছেন। এদিকে বেশকিছু ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনে আ’লীগ প্রার্থীদের ভরাডুবি ঘটছে। এবার তেমনি পরাজয় ঘটেছে নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুড়ি উপজেলাধীন একটি ইউনিয়নে।
যেখানে নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মাত্র একটিতে জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। বাকি তিনটির দুটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও একটিতে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। নৌকা নিয়ে হেরে গেছেন মন্ত্রীর ভগ্নিপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত বেসরকারি ফলাফলে দেখা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ ও বর্তমান চেয়ারম্যান (নৌকা) আওয়ামী লীগের মান রেখেছেন। তিনি ৫ হাজার ৫০১ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নূরুল হুদা চৌধুরী জুয়েল (আনারস) পেয়েছেন ৪ হাজার ৪৪৪ ভোট।
অপরদিকে গাজীপুর ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান আতাউর রহমান উপজেলা বিএনপির আহ্বায়কের কাছে পরাজয় স্বীকার করেছেন। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুর রউফ স্বাধীন (আনারস) পেয়েছেন ৩ হাজার ৬২১ ভোট। আতাউর রহমানের প্রাপ্ত ভোটসংখ্যা ২ হাজার ৬৫২।
কৃষ্ণপুর ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী শামীম মোড়লের (ঘোড়া) কাছে হেরেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের ভগ্নিপতি মো. নাজিম উদ্দিন সরকার। শামীম মোড়ল ৪ হাজার ১৪০ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। মো. নাজিম উদ্দিন সরকারের প্রাপ্ত ভোট ৩ হাজার ৪২৮।
নগর ইউনিয়নে ৩ হাজার ৪৪৪ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী দেবেশ চন্দ্র তালুকদার (আনারস)। নৌকা নিয়ে আওয়ামী লীগের হরিধন সরকার পেয়েছেন ১ হাজার ৭১৯ ভোট।
নির্বাচনে নৌকাডুবির ব্যাপারে খালিয়াজুরী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক স্বাগত সরকার শুভ বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন সঠিক হয় নাই। অনেকের অভিযোগ, এখানে মন্ত্রী-এমপির স্বজনপ্রীতি কাজ করেছে।
মনোনয়নের জন্য প্রার্থী বাছাইপ্রক্রিয়া ছিল অস্বচ্ছ। ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছ থেকে সাদা কাগজে দস্তখত নিয়ে বড় নেতারা তাদের ব্যক্তিগত পছন্দের প্রার্থীর নাম বসিয়ে রেজল্যুশন করেছেন বলে শোনা যায়। যোগ্য নেতারা বাদ পড়েছেন। আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আতাউর রহমান বিএনপির আহ্বায়কের কাছে হেরেছেন। অতীতে আতাউর রহমান সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে স্বর্ণের ধানের শীষ উপহার দিয়েছিলেন। বর্তমান মন্ত্রীর ভগ্নিপতি মো. নাজিম উদ্দিন সরকার অতীতে নৌকার বিরোধিতা করেছিলেন। এইবার তিনি নৌকা নিয়ে নির্বাচন করেছেন। তার এই খেলা ভোটাররা ভালোভাবে নেননি।
এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ যিনি খালিয়াজুড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন, তিনি বলেন, আমাদের এই নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কারনে আ.লীগের একটি অংশ অন্য প্রার্থীদের ভোট দেয়ার ফলে ভোট অনেকাংশে ভাগ হয়ে যায়। যার কারণে আ.লীগের প্রার্থীর পরাজয় ঘটেছে। তবে এখানে আ.লীগের পরাজয় ঘটত না, যদি না কৌশলগত ভুল থেকে আ.লীগ বেরিয়ে আসতে পারতো।