খুলনার বর্ষীয়ান নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু ছিলেন খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি হিসেবে। তিনি দলের শৃংখলা ভাঙ্গার জন্য তাকে গেল ৯ ডিসেম্বর দলের নতুন ঘোষনা কমিটিতে হতে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে খুলনার প্রায় সহস্রাধিক নেতাকর্মী দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। দলের শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনে নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে শোকজ করা হয়। তার দলীয় কার্যকলাপকে বিশ্লেষনের মাধ্যমে মন্জুকে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে একটি পাঠিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে খুলনার বিএনপির একজন সক্রিয় নেতা হিসেবে কাজ করেছিলেন। তাকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য খুলনার বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী দল থেকে সরে গিয়েছে, যেটা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। তাকে অব্যাহতি দেওয়ার পর সর্বশেষ গতকাল প্রায় পাঁচ শত নেতাকর্মী পদত্যাগ করলেন। আর এই কারনে খুলনা বিভাগে বিএনপি একটি বড় ধরনের বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগরী সভাপতির পদ থেকে সদ্য বাদ পড়া নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেছেন, আমাকে অসম্মান-অমর্যাদা করা হয়েছে। খুলনায় বিএনপির কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আমাকে হেয় করা হয়েছে। আমি খুলনা বিএনপির সভাপতি এবং বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, আমাকে না জানিয়ে আহ্বায়ক কমিটি হবে, এর কারণ কী। তবে কি রাজনীতি থেকে আমাদের সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র। আমি অপেক্ষায় আছি। আমি কারও দারস্থ হব না। আমি কারও করুনা চাই না। আমি ৪৪ বছর রাজনীতি করেছি বিরামহীনভাবে। আমি মনে করি বিএনপি শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বুঝতে পারবে যে, সমস্যাটা কোথায় এবং এ সমস্যা যদি এখনই ঠিক করা না হয় তাহলে বিএনপির জন্য আরও সংকট অপেক্ষা করছে বলে আমি মনে করি।
গতকাল দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, কিছু দিন ধরেই খুলনা বিএনপিতে অস্থিরতা চলছে। দলের কর্তৃত্ব নিতে চায় এমন কিছু মানুষ আছে, যারা রাজনীতি করে না। কিন্তু রাজনীতির ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে চায়। তারা মিশন নিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আমরা এ প্রক্রিয়াকে বাধা দিয়েছি। আমরা বলেছি, দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সফল করতে গেলে অবশ্যই আন্দোলন- সংগ্রামে যারা ভূমিকা রেখেছেন সেই সাহসী নেতৃত্বকে আনতে হবে। ব্যক্তি পছন্দের দল যাতে গঠিত না হয় সে কারণে প্রতিবাদ করেছি। প্রথমে মহানগরী ছাত্রদলে একজন ছিন’তাইকারীকে আহ্বায়ক করা হয়। মোটরসাইকেল চোর, মা’/দ’ক মামলার আসামি বা বিতর্কিত পরিবারের সদস্যদের নেতৃত্বে আনা হয়েছে। আমরা বলেছি, এ কমিটি বাদ দিয়ে ক্যাম্পাসের ছাত্রদের দিয়ে কমিটি করার জন্য। তারা আমাদের এ প্রতিবাদকে সহজভাবে নেয়নি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে আমাদেরই ঘায়েল করতে চেষ্টা হয়েছে।
একই প্রক্রিয়ায় এবার নগর বিএনপির নেতৃত্বে আনা হয়েছে জেলা বিএনপির ব্যর্থ একটা অংশকে। দীর্ঘদিন রাজনীতিতে অনুপস্থিত, নানাভাবে বিতর্কিত তাদের নেতৃত্বে দল গঠন হবে- এটা কোনোভাবেই খুলনার কর্মীরা মেনে নেয়নি। তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে এক দুষ্টু চক্র মাথাচাড়া দিয়েছে। তারা বিএনপির নেতৃত্ব দখল করার জন্যই এসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে। এখানে তারা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে নিজেদের সুবিধা আদায়ের জন্য। তারা মিথ্যা প্রচারণা চালিয়েছে- বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে যারা রাজনীতি করেছেন তারা তারেক রহমানের নেতৃত্ব মানবেন না। কিন্তু জিয়া পরিবার হচ্ছে বিএনপির ঐক্যের প্রতীক। সে পরিবারের নেতৃত্ব না মেনে নেতা-কর্মীরা কার নেতৃত্ব মানবে? এসব অসৎ উদ্দেশে মনগড়া-বানোয়াট কথাবার্তা বলে কেন্দ্রকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। এ চক্রটি যাদের নেতৃত্বে এনেছে বা আনার প্রক্রিয়ায় আছে তাদের রাজনীতির অতীত অস্বচ্ছ এবং কারও কারও অতি নিকৃষ্ট। তাদের পরিচয় গোপন করে তাদের সামনে আনা হয়েছে। যাতে করে এ অচলাবস্থা ও সংকট তৈরি হয়েছে। যারা প্রতিক্রিয়া সারা দেশে ছড়িয়েছে। সবার মনেই একই প্রশ্ন- তাহলে কি ত্যাগী নেতারা সব জায়গা থেকে বাদ পড়ে যাবে?
খুলনায় দলে দলে নেতা-কর্মীদের পদত্যাগ সম্পর্কে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, এটা অবশ্যই অসৎ রাজনীতির নেতৃত্বের প্রতিবাদ। খুলনা বিএনপির কর্মীরা রাজনৈতিক সচেতন অনুভূতিশীল। এখানে আমরা ব্যক্তি সমর্থকগোষ্ঠী বানাইনি। ব্যক্তি অনুগত কর্মী বানানোর চেষ্টা এখন চলছে। যারা প্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং এর মধ্য দিয়ে লাভবান হতে চায়, তারা রাজনীতিতে সক্রিয় নয়। বিশেষ করে দুই নেতা যারা ঢাকায় বসবাস করেন। তারা খুলনা বিএনপির কর্তৃত্ব নিতে পারলে বিভাগের দখল নিতে পারবেন। তিনি বলেন, আমি সবাইকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছি। একটা ঝড় উঠেছে, ঝড়ের সময় মাথা নিচু করে থাকতে হয়। ঝড় চলে যাওয়ার পরই আমাদের যাত্রা শুরু করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ বিএনপি গঠন করতে হবে। সততার নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং খুলনাসহ এ অঞ্চলের রাজনৈতিক কর্মীদের নেতৃত্বে দল গঠন করা হবে। আমি আশাবাদী। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ বিষয়গুলো অনুধাবন করবেন এবং যে আবেদন আমি করেছিলাম তিন মাস আগে।
তিনি আরো বলেন, খুলনার বিএনপিতে ঘটে যাওয়া গত চার বছরের ২৪ পাতার ডকুমেন্টসহ প্রতিবেদন। আমি আশা করব এ প্রতিবেদন দল বিবেচনায় নেবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি মনে করি দলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিব, জাতীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি তারা চুপ করে বসে থাকবেন না। যত নীরব থাকবেন, যত দেরি হবে ততই সংগঠনের ক্ষতি হবে। খুলনা মহানগরী আ’ন্দোলন- সংগ্রামের হেডকোয়ার্টার। খুলনা বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এখানে বিএনপি সংকটের মধ্যে থাকবে এটা জনগণও আশা করে না। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের সিংহভাগই আমাদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তারপরও কোথায় যেন তাদের বাধা। এ নীরবতা ভাঙতে হবে। নীরবতা না ভাঙলে বিএনপির ক্ষতি হবে।
প্রসঙ্গত খুলনার বর্ষীয়ান নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে বিএনপির নতুন কমিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য খুলনায় একটি বড় ধরনের ধস নামতে পারে বলে মনে করছেন বিএনপির রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। বিএনপির কমিটি থেকে এই নেতাকে সরিয়ে দেওয়ার কারনে সেখানে বিএনপিকে নতুন করে দল গোছানোর জন্য কাজ করতে হবে, যেটা আর সেই আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারবে না বলে মনে করছেন তারা। জতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে আর খুব বেশি দিন বাকি নেই ঠিক এই সময়ে খমিটি থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়াটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত সেটা নিয়ে দলের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে এই পরিস্থিতিতে বিএনপিকে সক্রিয়ভাবে এই বিভাগে কাজ করতে হবে বলে ধারনা করছেন তারা