সিলেটে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত নিহাল পাল দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের রাজনৈতিক জীবনে পদ পাননি। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কাজ করলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তার অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। জেলা ও উপজেলা নেতারা জানান, ইতিবাচক ভাবমূর্তির কারণে নিহাল আগামী কমিটিতে নেতৃত্বের যোগ্য।
গত শুক্রবার রাতে সিলেটের জৈন্তাপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহালসহ চার ছাত্রলীগ কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। বাকি তিনজন হলেন- জুবায়ের আহসান (২৬), মেহেদী হোসেন তমাল (২৪), সুমন আহমদ (২৫)। তারা সবাই বন্ধু ছিলেন এবং তারা সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও টিলাগড় গ্রুপের নাজমুল ইসলাম বলীর কর্মী ছিলেন। নিহাল সিলেট সরকারি কলেজে স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল।
নিহাল পাল সিলেট জেলা ও জৈন্তাপুর উপজেলায় ছাত্রলীগ পরিচালনা করতেন। তিনি জৈন্তাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। অন্যদিকে জৈন্তাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের প্রায় ৭ বছর ধরে কমিটি না থাকায় পদটি শূন্য ছিল। নাজমুল ইসলামকে সভাপতি ও রাহেল সিরাজকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০২১ সালের ১২ অক্টোবর সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি গঠিত হয়। এরপরও উপজেলা কমিটি দেওয়া হয়নি।
সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম বলেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে কমিটি দেওয়ার কথা ছিল এবং নেতৃত্ব পদের দাবিদার ছিলেন নিহাল। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, “নির্বাচনের কারণে কমিটি দেওয়া হয়নি। ১০-১২ দিনের মধ্যে জৈন্তাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করার কথা ছিল। নিহাল পালকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল। অন্যদের মধ্যে তমাল ও সুমনেরও কথা ছিল। পোস্ট পাওয়ার জন্য।এরা সবাই টিলাগড় গ্রুপের।তাদের মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।
জৈন্তাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী মনসুর আহমেদের সাথে কথা হলে তিনি দৈনিক পত্রিকাকে বলেন, ‘জৈন্তাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের 2017 সাল থেকে কমিটি নেই।নিহালের পাশাপাশি আমরা দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। কমিটি হলে আমাদের কর্মকাণ্ডের কারণে আমরা একসঙ্গে রাজনৈতিক পরিচয় পেতাম।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা বলছেন, নিহত চারজনই একসঙ্গে যাতায়াত করতেন। তারা ভালো বন্ধু ছিল। কয়েকদিন আগে একটি প্রাইভেটকার কিনেছেন জুবায়ের আহসান। তা নিয়ে শুক্রবার রাতে তারা জৈন্তাপুর থেকে জাফলংয়ের উদ্দেশে রওনা হন। আর গাড়িটি চালাতেন জুবায়ের। সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের বাংলাবাজার এলাকায় পৌঁছালে প্রাইভেটকারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের খালে পড়ে উল্টে যায়। এ সময় প্রাইভেটকারের দরজা খুলে কেউ বের হতে পারেনি। প্রথমে স্থানীয় লোকজন প্রাইভেটকার থেকে উদ্ধার অভিযান চালায়। পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা উদ্ধার কাজে যোগ দেন। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
জৈন্তাপুরে নিহত ৩ ছাত্রলীগ কর্মীকে দাফন, একজনের শেষকৃত্য সম্পন্ন জৈন্তাপুরে নিহত ৩ ছাত্রলীগ নেতার দাফন, একজনের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।
শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুকুজ্জামান রানা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এত কম বয়সে নিহালের সাংগঠনিক দক্ষতা, দক্ষতা ও আন্তরিকতা আমার বয়সে আর কাউকে দেখিনি! তার সাথে আমার প্রায়ই দেখা হতো বিভিন্ন কারণে, বিভিন্নভাবে। যতবার আমি তাকে দেখেছি, তার প্রাণবন্ত, উজ্জ্বল, কমনীয় মুখে তার হাসি ছিল। কীভাবে বড়দের সম্মান এবং ছোটদের স্নেহ জয় করা যায় তা তাঁর কাছে শিক্ষণীয় ছিল। তিনি সর্বদা দানশীল, দক্ষ এবং সংগঠনের জন্য অত্যন্ত নিবেদিত ছিলেন। নেহালকে জৈন্তাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক করে সম্মানিত করার জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করছি।