সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় এক রাজত্ব চলেছে সারা দেশজুড়ে। প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বারবার। অভিযোগ এসেছে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকেই বিভিন্ন সময়ে সহিংসতা, ভোট কারচুপি, জালভোটের মত অনৈতিক কর্মকাণ্ডের। প্রাণ হারাতেও দেখা গেছে বেশ কয়েক জায়গায় নির্বাচন সহিংসতায়। সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন থেকে উঠে এসেছে এটা বাংলাদেশের নির্বাচনের রেকর্ড সহিংসতা।
অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনী সহিংসতা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে যেভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে, তাতে শঙ্কিত সবাই। যেভাবে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে এবং প্রার্থী ও সমর্থকদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হচ্ছে, তাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। প্রার্থীদের ওপর দোষ চাপিয়ে নির্বাচন কমিশনও এর দায় নিতে রাজি নয়।
তথ্যমতে, পাঁচ ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে প্রায় ৬৭২টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া নির্বাচনি সহিংসতায়ি এ পর্যন্ত প্রাণ গেছে ১১৩ জনের।
নির্বাচনে এমন সহিংসতার দায় কোনোভাবেই নির্বাচন কমিশন এড়াতে পারে না বলে মনে করেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। এখনই লাগাম টানতে না পারলে জাতীয় নির্বাচনেও এর মারাত্মক প্রভাব পড়ার শঙ্কা তাদের। জোর করে ক্ষমতায় যাওয়ার প্রবণতা, গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলেও জানান বিশ্লেষকরা।
সুশানের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলছেন, রাজনীতি এখন ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। পদ-পদবি পাওয়া মানে অনেক রকম সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি অন্যায় করে পার পেয়ে যাওয়া। এসব ক্ষমতা ব্যবহার করে তারা অনেকরকম অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করতে পারে, যার কারণে আধিপত্যের লড়াই বাড়ছে। জাতীয় নির্বাচনেও নিশ্চিত এর প্রভাব পড়তে।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দল তার দলের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। দলে শৃঙ্খলা বলতে কিছুই নেই সেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি।
২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে সহিংসতায় মারা যান ১৪৩ জন। তারপর থেকেই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতার রেওয়াজ চলে আসছে বলে মনে করেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা।
সহিংসতা যেন অনেকটা একই ধারায় বয়ে চলে আসছে। এভাবে চলতে থাকলে বিশ্লেষকদের মতে পরবর্তী সরকার গঠন নির্বাচনে সহিংসতা আরও বাড়বে যেটা হবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। সম্প্রতি বহির্বিশ্ব থেকেও ভিন্ন রকম মন্তব্য বাংলাদেশের জন্য প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আসছে। এখন দেখার বিষয় প্রধান নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ তার দলের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে পারি কিনা, সহিংসতা রোধ হয় কিনা, নাকি এভাবেই চলতে থাকে।