নির্বাচনে জয় লাভ করার আনন্দই সীমাহীন। নির্বাচনে প্রচার প্রচারণা করার মাধ্যমে প্রার্থীরা খুব পরিশ্রম করে থাকেন। সাবর মনেই জয় লাভের জন্য তীব্র আশা থাকে। জয়ের স্বাদটা যে কত আনন্দের সেইটা একমাত্র বিজয়ী ছাড়া কেউ বুজতে পারবে না। সম্প্রতি জানা গেল এক চেয়ারম্যান নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েও পরে জানতে পারলো সে পরাজিত হয়েছে।
গত ১১ নভেম্বর শরীয়তপুরের চিতলিয়ায় দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে বেসরকারিভাবে হারুন অর রশিদকে (নৌকা প্রতীক) চেয়ারম্যান হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
স্বাক্ষর জাল করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। তদন্তে স্বাক্ষর জাল পাওয়ায় চিতলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত ৮ নভেম্বর দুপুরে ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপসচিব আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে নির্বাচন স্থগিত করা হয়।
বুধবার (১৫ জুন) আবারও অনুষ্ঠিত হয় চিতলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। ওই নির্বাচনে হারুন-উর-রশিদ হেরে যান। তবে এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ছিল না।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১১ নভেম্বর চিতলিয়া ইউপিতে ভোট হওয়ার কথা ছিল। ওই ইউপিতে সদস্য পদে ৪৮ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করলে তাদের মনোনয়ন বৈধ বলে বিবেচিত হয়। এর মধ্যে ২৮ অক্টোবর ৩৯ জন সাধারণ সদস্য ও ৯ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। তবে ২৬ অক্টোবর প্রতীক বরাদ্দের দিন অন্তত ২০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করেননি বলে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানান। . ওই ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন বলেন, চিতলিয়া ইউনিয়ন মোট ভোটার ১১ হাজার ৮৮০ জন। পুরুষ ভোটার ৬ হাজার ৩৩২ ও নারী ভোটার ৫ হাজার ৫৪৮ জন। নির্বাচনে মোট ভোট গণনা করা হয়েছে ৬ হাজার ৬০৫। এরমধ্যে আব্দুস ছালাম হাওলাদার (আনারস প্রতীক) নিয়ে ৪ হাজার ২৯৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হারুন-অর-রশিদ (ঘোড়া প্রতীক) নিয়ে পেয়েছেন ৪ হাজার ৫১ ভোট। আর অন্য চার চেয়ারম্যান প্রার্থী পেয়েছেন ২৪৯ ভোট।
তিনি বলেন, ইসি চিতলিয়া ইউনিয়নে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন স্থগিত করেছে। গত ১৫ জুন স্থগিত ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জয়ী হন আব্দুস সালাম হাওলাদার। হারুন অর রশিদ পরাজিত হন।
চিতলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বিজয়ী চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম হাওলাদার বলেন, আল্লাহ চাইলে তাকে কেউ হারাতে পারবে না। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জোর করে চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি। ইউনিয়নের প্রিয় ভোটাররা আমাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছেন। ইউনিয়নবাসীর সুখে-দুঃখে পাশে থাকতে চাই।
এদিকে পরাজিত প্রার্থী হারুন অর রশিদ আরটিভি নিউজকে বলেন, তার বিজয় সুনিশ্চিত। ইভিএমে যদি ব্যালটে ভোট না হতো। আমার ইউনিয়নের ভোটাররা ইভিএমের সমস্যা বোঝে না। ভোটাররা ইভিএম বুঝতে না পারায় পোলিং এজেন্ট ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এ সুযোগ নেন। প্রতিপক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সালাম হাওলাদারকে ভোট দিয়ে পরাজিত হয়েছি।
অপরদিকে জাজিরা উপজেলার কুন্দেরচরের মো. আক্তার হোসেন বেপারী (মোটর সাইকেল), বি.কে. নগর আলহাজ্ব এস্কান্দার আলী ভূঁইয়া (মোটর সাইকেল), বড় গোপালপুর মাহবুবুর রহমান লিটু সরদার (আনারস), পালেরচর মোঃ আবুল হোসেন ফরাজী (চশমা), পূর্ব নাওডোবা মোঃ আলতাফ হোসেন খান (টেবিল ফ্যান) ও বিলাসপুর। কুদ্দুস বেপারী (মোটর সাইকেল) প্রতীক নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ভাগ্য যদি সহায় না হয় তাহলে কখন যে কি ঘটে যাবে তা কল্পনাও করা যাবেনা। আর ভাগ্য যার সাথে প্রতারণা করে তার জীবন মুহূর্তেই ছেয়ে যায় কালো অন্ধকারে। আর ঠিক তেমনটিই হয়েছে এই প্রার্থীর সাথে।