Wednesday , November 13 2024
Breaking News
Home / Countrywide / নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য অঙ্গীকার করায় ব্যবস্থা নেওয়া হলো সেই প্রশংসিত এএসপির বিরুদ্ধে

নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য অঙ্গীকার করায় ব্যবস্থা নেওয়া হলো সেই প্রশংসিত এএসপির বিরুদ্ধে

কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন মোহাম্মদ জুয়েল রানা। তিনি কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি চান্দিনা সার্কেলে পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। চতুর্থ ধাপে আগামী ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলাধীন বারোটি ইউনিয়নের নির্বাচন। এই সকল এলাকার মধ্যে তিনটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার দায়িত্ব তার উপর বর্তায়। তাকে দায়িত্ব দেওয়া তিনটি ইউনিয়ন হল কালিকাপুর, উজিরপুর এবং কাশিনগর।

সাম্প্রতিক সময়ে কালিকাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হিসেবে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রার্থী এবং সেখানকার ভোটারদের সাথে তিনি একটি সভায় যোগ দেন। সেখানে গিয়ে তিনি ওই এলাকার নির্বাচন বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বক্তব্য দেয়ার সময় এক পর্যায়ে নির্বাচনকে সুষ্ঠু এবং সুশৃংখলভাবে অনুষ্ঠিত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে উপস্থিত সকল প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, নৌকার প্রার্থী হয়েছেন বলে চেয়ারম্যান হবেন সেটা আপনাদের ভুলে যেতে হবে, যদি আপনারা এবং আপনাদের সমর্থকরা কেউ ব্যালট ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন তাহলে সরাসরি গু’লি চলবে।”

ঐ বৈঠকে। জুয়েল রানার দেওয়া ১২ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। সাহসী বক্তব্যের জন্য তিনি প্রশংসায় ভাসতে থাকেন। তবে নির্বাচনের আগে হঠাৎ করে পুলিশ বিভাগ থেকে তাকে বদলি করা হয়।

গত রবিবার (১৯ ডিসেম্বর) পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট-১) কাজী জিয়া উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জুয়েল রানাকে সিলেটে সপ্তম আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয়। এরই মধ্যে তাঁর ওই বদলির চিঠিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এনিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন- ‘একজন সৎ ও সাহসী পুলিশ কর্মকর্তাকে সততার জন্য বদলি করা হলো’।

ভাইরাল হওয়া ১২ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে সিনিয়র এএসপি মো. জুয়েল রানা বলেন, নৌকার প্রার্থী হয়েছেন বলেই চেয়ারম্যান হয়ে যাবেন বিষয়টা এমন না। আমি যেখানে নির্বাচন করেছি সেখানে নৌকা ২৫১ ভোট পেয়েছে। চেয়ারম্যান হয়েছে ৩ হাজার ভোটে, সেকেন্ড হয়েছে ২ হাজার ৮০০ ভোটে, থার্ড হয়েছে ২ হাজার ৭০০ ভোটে আর নৌকার প্রার্থী ৪ নম্বর হয়েছেন ২৫১ ভোটে। এরপরও নৌকার প্রার্থী বলতে পারেননি যে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। আরেক ইউনিয়নে নৌকা পেয়েছে ৭৯০ ভোটে, চেয়ারম্যান হয়েছে ৪ হাজার ভোটে। তারা জামানত হারিয়েছে তারপরও বলতে পারেনি ভোট সুষ্ঠু হয়নি। দাউদকান্দিতে নির্বাচন করেছি- সেখানে এমপি সাহেবের ভাতিজা নৌকার প্রার্থী এবং বর্তমান চেয়ারম্যান, কিন্তু তিনি হেরে গেছেন। সাধারণ একজন প্রার্থী চেয়ারম্যান হয়েছে। নৌকা নিয়ে আসলেই, টাকা থাকলেই এবং বড় বড় নেতার আত্মীয় হলেই নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া যায় না, এটা তার অনেক বড় প্রমাণ। পুলিশ শুধু প্রতিশ্রুতি দেয় না, প্রতিশ্রুতি রক্ষাও করে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসক মহোদয়েরও একই কথা, ব্যালটে হাত দেবেন তো গু’লি করব। আমাদের প্রশিক্ষণ আছে, অর্ডার আছে এরপর কেউ কেন্দ্র দখল করতে আসলে আমরা কী ‘ফিডো’ খাব? গুলি করব, এতে যদি কারো হাত-পা পড়ে যায় আমাদের কারো কাছে জবাবদিহি করতে হবে না। অ/স্ত্র চালানোর একটা নিয়ম আছে, আগে অনুরোধ করব- না শুনলে গুলি করব। নির্বাচনের দিন আমি কালিকাপুর, উজিরপুর ও কাশিনগর এই তিনটি ইউনিয়েনের সরাসরি দায়িত্বে থাকব। আমি কথা দিচ্ছি এই তিনটি ইউনিয়নে দায়িত্ব পালনকালে কুমিল্লা থেকে কোনো মন্ত্রীও যদি আমাকে ফোন করে আমি কারো কথা শুনব না বরং কথা রেকর্ড করে আমি ছেড়ে দেব।

জুয়েল রানা প্রার্থীদের উদ্দেশে আরো বলেন, সুতরাং এমপি, মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ, প্রধানমন্ত্রী কারো দোহাই দিয়ে আপনারা নির্বাচিত হতে পারবেন না। আমরা মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। মানুষ যদি একজন রিকশাচালককেও নির্বাচিত করে সেই হবে ওই ইউনিয়েনের আগামী পাঁচ বছরের অভিভাবক। ইনশাল্লাহ জনগণের ভোটের অধিকার আমরা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে চাই। এটা শুধু আমাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব না, এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্বও। এছাড়া নির্বাচনের ভোট সুষ্ঠু করা নিয়ে আরো বিভিন্ন কথা বলেন তিনি।

জুয়েল রানার বদলিতে ক্ষো’ভ প্রকাশ করে রিয়াজ হোসেন নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে লিখেছেন- ‘একজন সৎ এবং সাহসী পুলিশ অফিসার সততার জন্য আজ বদলি হলো। সঠিক কথা বললে সঠিক পথে চললে পদে পদে লাঞ্ছিত হতে হবে এই সোনার বাংলাদেশ এটাই তার প্রমাণ। কারণ হাজারো খারাপ মানুষের ভিড়ে দুই/একজন ভালো মানুষ টিকে থাকাই খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার। শুভ কামনা থাকবে এই পুলিশ অফিসারের জন্য।’

জেলার চান্দিনা উপজেলার বাসিন্দা আবদুল বাতেন মুন্সি, দাউদকান্দির বাসিন্দা মহিউদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন বলেন, সিনিয়র এএসপি জুয়েল রানা একজন জনবান্ধব পুলিশ কর্মকর্তা। তাঁর কাছে গিয়ে কোনো মানুষ সেবা না পেয়ে ফিরে আসেনি। তিনি যোগদানের পর থেকে এলাকায় আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। তিনি দাউদকান্দিতে সুষ্ঠু ইউপি নির্বাচন উপহার দিয়েছেন। পঞ্চম ধাপে চান্দিনায় ইউপি নির্বাচন হবে ৫ জানুয়ারি। তাঁর এমন বদলিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ভোটাররা এখন সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শ’ঙ্কায় রয়েছেন। এছাড়া বদলির ঘটনায় মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

গতকাল বুধবার অর্থাৎ ২২ শে ডিসেম্বর দুপুরের দিকে এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব থাকা মোহাম্মদ জুয়েল রানা দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ট্রান্সফারের আদেশ পাওয়ার পর গত ২০ ডিসেম্বর দাউদকান্দি ও চান্দিনা সার্কেলে যে দায়িত্ব পালন করছিলাম সেটা ছেড়ে দিয়েছি। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে সিলেটে এপিবিএন এ যোগ দিব। তাছাড়া আমি এই বিষয়ে আর এখন কিছু বলবো না।

তিনি যে বক্তব্য দিয়েছিলেন সেটা ভাইরাল হওয়ার জন্য মোহাম্মদ জুয়েল রানাকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মোহাম্মদ মনজুর আলম যিনি জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি দেশের একটি জনপ্রিয় গণমাধ্যমকে বলেন, আমি শুনেছি দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে ট্রান্সফার করা হয়েছে। তবে তাকে কেন এখান থেকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। তবে বিষয়টি উর্দ্ধতন মহল থেকে করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি খোঁজ নিয়ে পরে আপনাদেরকে জানাতে পারবো।

 

About

Check Also

কাল নিলেন উপদেষ্টার দায়িত্ব, আজ হলেন আসামি: যা বললেন বশির উদ্দিন

নতুন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন নিজের নামে মামলা প্রসঙ্গে বলেন, “আমি পুরো বিষয়টি স্পষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *