সাধারণত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এক-দুই দিন নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন। এবার ভিন্নভাবে ভাবছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাদের পরিকল্পনা হচ্ছে আগামী নির্বাচনে ‘প্রয়োজনে’ ভোট গ্রহণের পর ১৫ দিন মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সক্রিয় রাখা। নির্বাচন-পরবর্তী স/হিংসতার আশঙ্কায় এমন পরিকল্পনা করছে ইসি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী নভেম্বর থেকে কী কী করণীয় এবং কখন করা হবে তার একটি রূপরেখা বা চেকলিস্ট তৈরি করছে ইসি। রূপরেখায় প্রয়োজনে ভোটের পর ১৫ দিন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের কথা বলা হয়েছে। ইসির একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সাধারণত পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার বাহিনী নিয়োজিত থাকে। এছাড়া নির্বাচনের সময় সশস্ত্র বাহিনী ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে কাজ করে। ভোটের দুই দিন আগে ও দুই দিন পর মোট চার দিন পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। ভোটের আগে ও পরে মোট পাঁচ দিন আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। অন্য বাহিনীর সদস্যরাও তিন থেকে চার দিন নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করছেন।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, এবারও নির্বাচনের আগের দুই দিন, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচনের পরের দুই দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রধান দায়িত্ব পালন করবে। তবে নির্বাচনী এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে নির্বাচনের পর ১৫ দিন নির্বাচনী এলাকায় তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে ইসির পক্ষ থেকে পুলিশ ও প্রশাসনকে যথাসময়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে। নির্বাচনের ১৫ দিন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি তদারকিতে রাখবে নির্বাচন কমিশন। তবে সব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে, তা নয়। যেখানে পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে সেখানেই এই বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের কথা বলে আসছে ইসি। সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ৪২ হাজারের কিছু বেশি ভোট কেন্দ্র থাকবে। গত নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীর ছয় লাখের বেশি সদস্য দায়িত্ব পালন করেন সশস্ত্র বাহিনী ছিল ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’। ইসি সূত্রে জানা গেছে, গত নির্বাচনের চেয়ে আগামী নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অনেক বেশি সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এর অন্যতম কারণ গত নির্বাচনের চেয়ে আগামী নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বেশি হবে।
কবে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে তা চূড়ান্ত হয়নি। তফসিল ঘোষণার পর কত দিনে কাজ হবে তা ঠিক করা হয়। ইসির কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ৩১ অক্টোবর থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি থাকবে, যারা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেবেন। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে অনলাইনে মনোনয়নের সফটওয়্যার তৈরির কাজ শেষ হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিনই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নিয়োগ আদেশ জারি করা হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রধানত মনোনয়নপত্র দাখিল (বিশেষ করে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়সীমার দুই দিন আগে) এবং মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় প্রার্থীদের মহড়া (শোডাউন), আচরণবিধি লঙ্ঘনের মতো বিষয়গুলি দেখাশোনা করবেন প্রার্থীদের।
মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা সভা করবে ইসি। প্রতি নির্বাচনের আগে এ ধরনের বৈঠক হয়। মূলত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মূল্যায়ন আছে। নির্বাচনের আগে এ ধরনের আরেকটি সভা করার পরিকল্পনাও করেছে ইসি।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন নির্বাচন কমিশনের কাছে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। আইনটি নির্বাচনের ১৫ দিন পর পর্যন্ত আইন প্রয়োগকারী কর্মীদের মোতায়েন করার অনুমতি দেয়। নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি বুঝে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।