বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। আর এই কারনে সরকার থেকে শুরু করে সব মহলে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এবার জানা গেলো নতুন খবর। পুলিশ নতুন অভিভাবক খুঁজছে সরকার। এ জন্য সরকার সৎ ও ত্যাগী কর্মকর্তাদের বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথাও মাথায় রাখা হয়েছে। আগামী ১১ জানুয়ারি বর্তমান আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হবে নাকি তার জায়গায় নতুন কাউকে নিয়োগ দেওয়া হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এর সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন আইজিপির প্রোফাইল যাচাইয়ের কাজ শেষ করেছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা।
তবে নতুন আইজিপির তালিকায় চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত আইজিপি কামরুল আহসান, মনিরুল ইসলাম, এসএম রুহুল আমিন, মল্লিক ফকরুল ইসলাম, এম খুরশিদ হোসেন ও খন্দকার গোলাম ফারুক রয়েছেন বলে পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। তাদের মধ্যে বর্তমান আইজিপির এক বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। তবে এখন পর্যন্ত আইজিপি পদে চুক্তিভিত্তিক কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
এদিকে গতকাল রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে শুরু হয়েছে পুলিশ সপ্তাহ। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতি বছর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের দরবার হয়। ওই আদালতে দাবি উত্থাপিত হয়। কিন্তু এবার অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা কোনো দাবি করেননি। পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ পার্বণমকে বলেন, যখনই আইজিপির চাকরির মেয়াদ শেষ হয়, তখনই তার মেয়াদ বাড়ানোর কথা হয়। পরে দেখা যায় অন্য কেউ আইজিপি হচ্ছেন। সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, এ কে এম শহীদুল হক, ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী এবং ড. বেনজীর আহমেদের সময়ে একই ধরনের আলোচনা বেশি ছিল। কিন্তু তাদের কাউকেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবে বর্তমান আইজিপির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে ভিন্নভাবে। তিনি নবম ব্যাচের একমাত্র কর্মকর্তা। পুলিশে তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের চেষ্টা করেন। পুলিশের একাংশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে চায়। এ জন্য সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে অনুরোধও করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল দেশ মনর্বণকে বলেন, বর্তমান আইজিপিসহ সাতজনের নাম আলোচনা হচ্ছে। তবে বর্তমান আইজিপিকে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। অতিরিক্ত আইজিপি কামরুল আহসান কোনো কারণে নিয়োগ চুক্তিভিত্তিক না হলে তাকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। এ নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। আর এক বছর পর জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। আইজিপি নিয়োগে নির্বাচনকে সর্বোচ্চ বিবেচনা করা হয়। তবে সবকিছু নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ওপর।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিশেষ সুনাম রয়েছে পুলিশে। তিনি র্যাবের মহাপরিচালক, পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (প্রশাসন), ঢাকা ও ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি, সিআইডি প্রধানসহ পুলিশের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
নতুন আইজিপি হিসেবে সবচেয়ে আলোচিত নাম পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) কামরুল আহসান এবং অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) অতিরিক্ত আইজিপি এসএম রুহুল আমিন। এই দুজনের মধ্যে কামরুল আহসান বর্তমান পদে আসার আগে এটিইউর প্রধান ছিলেন। তিনি শরীয়তপুর, চট্টগ্রাম ও যশোর জেলার পুলিশ সুপারের পাশাপাশি পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (সংস্থাপন ও প্রশিক্ষণ), সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি এবং রেলওয়ে রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এটিইউ প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি এসএম রুহুল আমিন সিএমপির ডিসি, সিলেট জেলার এসপি, ঢাকায় সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি এবং রেলওয়ে রেঞ্জের ডিআইজি এবং বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
হাইওয়ে প্রধান মল্লিক ফকরুল ইসলামের নামও আলোচনায় আসছে। এর আগে তিনি র্যাব-৩ এর অধিনায়ক ছিলেন। এছাড়া তিনি ভোলা, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, ফেনী জেলের এসপি, রেলওয়ে রেঞ্জের ডিআইজি, সিটি এসবি এবং ট্যুরিস্ট পুলিশের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আলোচনায় রয়েছেন র্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেনও। এর আগে তিনি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এবং ডিআইজি রাজশাহী রেঞ্জ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আইজিপি পদে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের নামও আলোচনায় রয়েছে। এর আগে তিনি পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর, সারদা পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পুলিশের বিশেষ শাখার প্রধান মনিরুল ইসলামও নতুন আইজিপি হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন। এছাড়াও তিনি নীলফামারী জেলার পুলিশ সুপার, ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ), গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার, গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এবং ডিএমপির সিটিটিসি প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বিশেষ দক্ষ এই পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে সিটিটিসি গঠন করা হয়। এছাড়া গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার আগে ও পরে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন নওয়া জেএমবির বড় বড় সন্ত্রাসী আস্তানা তার নেতৃত্বে ধ্বংস করা হয়। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নেতাদের গ্রেফতারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। একজন শালীন ব্যক্তি ও চৌকস পুলিশ অফিসার হিসেবে তার বিশেষ খ্যাতি রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের আদালত : গতকাল দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের বিশেষ আদালত অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আদালতে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা জানান, স্বাগত বক্তব্য দেন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তবে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে পুলিশ কোনো দাবি তোলেনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে হত্যা করতে গিয়ে ওই পুলিশ সদস্য প্রাণ দিয়েছেন। সব ধরনের পুলিশি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আর এ জন্য কোনো ধরনের দুর্নীতি ও অপরাধ করা যাবে না।
প্রসঙ্গত, এ দিকে বর্তমান আইজিপির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কারনে মূলত নতুন করে আবারো খোঁজা হচ্ছে নতুন আইজিপি। আর এই নতুন নিয়োগ দেয়া আইজিপির প্রধান কাজ হবে মূলত নির্বাচনের সময়। তাকে মূলত নির্বাচন কালীন সময়েই করতে হবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন।