দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা এই নির্বাচন নিয়ে অসন্তুষ্ট। সামনের দিনগুলোতে পশ্চিমাদের অবস্থান নিয়ে আবারও জল্পনা শুরু হয়েছে। পরবর্তীতে কী হবে? যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ পশ্চিমা দেশগুলো কি বাংলাদেশের সঙ্গে আগের মতো বহুপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নেবে? বা কোন জটিলতা হতে পারে?
এমন প্রশ্ন তুলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি। বিবিসি তাদের প্রতিবেদনের শিরোনাম করেছে- ‘পশ্চিমাদের কাছে নির্বাচন ‘প্রশ্নজনক’, বাংলাদেশের জন্য পরবর্তী কী?’
প্রতিবেদনে নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও জাতিসংঘের বক্তব্য উঠে এসেছে। নির্বাচনের আগে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দৌড়ঝাঁপ এবং বিএনপিসহ কয়েকটি সমমনা দল নির্বাচন বর্জন করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনের একদিন পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস কূটনীতিকদের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘মিট অ্যান্ড গ্রিট’ কর্মসূচিতে ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আসেন। পিটার হাস কিছুক্ষণ নীরবে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর পশ্চিমা কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা হয়। এর পর আসন নেওয়ার পালা। সামনের সারিগুলো এখনো ফাঁকা। কিন্তু পিটার হাস বসলেন বেশ দূরে, পঞ্চম সারিতে।
নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর চাপে যুক্তরাষ্ট্র সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে প্রথমে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, তারপর অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করতে ভিসা নীতির আবেদন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রধান বিরোধী দলকে ছাড়াই অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন। এ ছাড়া জাতিসংঘও প্রশ্ন তুলেছে। কিন্তু পরে কি? যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ পশ্চিমা দেশগুলো কি বাংলাদেশের সঙ্গে আগের মতো বহুপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নেবে? বা কোন জটিলতা হতে পারে? আওয়ামী লীগ সরকারের চ্যালেঞ্জ কোথায়? এমন সব প্রশ্ন এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
সেখানে কি ‘বৈধতার সংকট’ হবে? বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর ভারত, চীন ও রাশিয়া খুব দ্রুত এই বিজয়কে অভিনন্দন জানিয়েছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অর্ধশতাধিক দেশ অভিনন্দন জানিয়েছে। এমনকি 2018 সালের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা জাপানের রাষ্ট্রদূতও অভিনন্দন জানাতে গণভবনে গিয়েছিলেন। জাপান আমেরিকার কৌশলগত মিত্র। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের দিন ঢাকায় নিযুক্ত অন্যান্য দেশের কূটনীতিকদের মতো মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিট হাস নিজেও বঙ্গভবনে যান। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
বাংলাদেশে দুটি বিতর্কিত নির্বাচন সত্ত্বেও ক্ষমতার মেয়াদ শেষ করতে পেরেছে আওয়ামী লীগ। দেশে-বিদেশে বৈধতার কোনো সংকট তখন তৈরি হয়নি। তবে এবারের নির্বাচন নিয়ে আমেরিকা, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার প্রতিক্রিয়া আওয়ামী লীগ সরকারের গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে ‘ভিন্ন সংকেত’ দিচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্কের দেওয়া বিবৃতিতে বাংলাদেশে সহিংসতা, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের গ্রেপ্তার এবং আটকে মৃত্যুর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এটা বলা হয়েছে যে সত্যিকারের ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের’ জন্য সরকারকে ‘পথ পরিবর্তন’ করতে হবে।
অন্যদিকে, আমেরিকার বিবৃতিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে বাংলাদেশে নির্বাচন ‘অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি’। আর ব্রিটেন বলেছে, গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় মানদণ্ড যেমন বিশ্বাসযোগ্য ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা, মানবাধিকার, আইনের শাসন ইত্যাদি বাংলাদেশে নির্বাচনের সময় ধারাবাহিকভাবে অনুসরণ করা হয়নি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের বিশিষ্ট অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিতে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, সেখানে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে কাজ করার কথা বলা হয়েছে, সরকারের সঙ্গে নয়। বাংলাদেশের।
“কারণ যে সরকার তারা মনে করে, সেই সরকার অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যায়নি। অর্থাৎ তাদের জনগণের ম্যান্ডেট নেই। তারা কীভাবে তাকে নিয়ে কাজ করবে?
আমেরিকাকে এই প্রশ্নের মোকাবিলা করতে হবে। ফলস্বরূপ, আমি মনে করি না যে এটি পাঁচ বছর ধরে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় চলে গেছে। সবেমাত্র নির্বাচন হয়েছে। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক নয়। ফলস্বরূপ, তারা বিভিন্ন ইঙ্গিত দেয়,’ মিঃ রিয়াজ বলেন।
আমেরিকার চোখে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেবে কি না, তা বুঝতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে বলে মনে করেন আলী রিয়াজ।
‘চাপ’ কী হবে? বিবিসি প্রতিবেদনে এটি একটি জরিপ করার চেষ্টা করেছে। গণতন্ত্র, সমাবেশের স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার, আইনের শাসন মূল বিষয় বলে মনে হচ্ছে, বিবিসি বলছে। কিন্তু এবার এটাও একটা বাস্তবতা যে, ১৯৭১ সালের পর বিশ্ব ভূরাজনীতি অনেকটাই বদলে গেছে