দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছে। বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। সরকারের মিত্র ও সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও বলছে, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলগুলোও বাংলাদেশে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নেই বলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অর্থপূর্ণ আলোচনার সুপারিশ করেছে। নির্বাচন কমিশন আয়োজিত একাধিক সংলাপে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনরা। তবে নির্বাচন কমিশন বরাবরই দাবি করে আসছে, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ রয়েছে। গত রোববার ইসি মো. আলমগীর বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ ভালো।
তবে বৃহস্পতিবার গণমাধ্যম সম্পাদকদের কাছে পাঠানো এক কনসেপ্ট লেটারে নির্বাচন কমিশন বলেছে, অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য যে অনুকূল পরিবেশ প্রত্যাশিত ছিল তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। ধারণাপত্রে ইসি আরও বলেছে, প্রত্যাশিত সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে মতপার্থক্যের সমাধান হয়নি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধান দলগুলো তাদের সিদ্ধান্ত ও অবস্থানে অনড়। রাজপথে মিছিল, জনসমাবেশ ও শক্তি প্রদর্শন করে স্ব স্ব পক্ষে সমর্থন প্রদর্শনের চেষ্টা হচ্ছে।
কিন্তু এটি সংকটের প্রত্যাশিত সমাধান বা সমাধান বলে মনে করে না কমিশন। নির্বাচন গণতন্ত্রের প্রাণ ও বাহন। নির্বাচনের সংগঠনে সংকট লাগামহীনভাবে চলতে থাকলে গণতন্ত্র বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে গত বুধবার নির্বাচন কমিশনার মোঃ আনিসুর রহমানও নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা উল্লেখ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতার আহ্বান জানান। বলেন, ‘আপনারা এগিয়ে আসুন। নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করুন।’ ভোটারদের নিরাপত্তার বিষয়টি নজরে আনলে ইসি আনিছুর বলেন, ‘ওই সময় পরিবেশ কী হবে, নির্বাচন অনুষ্ঠানের মতো পরিবেশ থাকবে কি থাকবে না, এইটা আমি এখনই বলতে পারবো না’।
দেশে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নেই বলে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন মেনে নিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সব বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলে আসছেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। তারা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতার আহ্বান জানাচ্ছেন। তবে নির্বাচন কমিশন বরাবরই বলে আসছে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ রয়েছে।
ইসি বলছে যেভাবেই হোক নির্বাচন করবে। তবে নির্বাচন কমিশনের কাজ সংবিধান অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি না করেই নির্বাচনের পথে হাঁটছেন তারা। যে কারণে রাজনৈতিক দল ও জনগণ ইসির প্রতি আস্থা হারিয়েছে। এমন পরিবেশে নির্বাচন হলে দেশ সহিংসতার দিকে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক মো. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন সহায়ক পরিবেশ না থাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পর্যবেক্ষণ দল পাঠানোকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলও নির্বাচনের পরিবেশ নেই উল্লেখ করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উন্মুক্ত ও অর্থবহ আলোচনার সুপারিশ করেছে। তবে নির্বাচন কমিশন বরাবরই বলে আসছে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ রয়েছে। এছাড়া তারা যেভাবেই হোক ভোট দেবেন বলে বলছেন। তবে তাদের দায়িত্ব সংবিধানের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলে আসছে। তাদের কথার মধ্যে অসঙ্গতির কারণে রাজনৈতিক দল ও দেশের জনগণ তাদের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। দেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ নেই- আশা করি ইসি বিষয়টি অনুধাবন করবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে সরকারকে বলা উচিত। কারণ এই ম্যান্ডেট ইসিকে সংবিধান দিয়েছে। ভোটারদের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে ভোটারদের নিরাপত্তার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। নির্বাচনের সময় তাদের অধীনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের কার্যালয়ের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ভোটারদের নিরাপত্তার বিষয়টিও ইসির মাথায় রাখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।