সরকার আবারও ক্ষমতা আসতে নীল নকশা তৈরী করছে যার জন্য নির্বাচন ব্যবস্থাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। আওয়ামীলীগ সরকার কখনো চায় না এদেশে গনতন্ত্র থাকুক কারন তাহলে তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। এ দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংসের মাধ্যমে তারা জনগণের ভোটাধীকার কেড়ে নিয়েছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গনতান্ত্রীক ব্যবস্থার ফিরিয়ে আনতে হবে বলে মন্তব্য করে যা বললেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। নির্বাচনের ওপর সাধারণ মানুষের কোনো আস্থা নেই।
দেশের সাধারণ মানুষ মনে করছে, ক্ষমতাসীনরা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ করতে চায় শুধু কারচুপির জন্য। দেশের মানুষ একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রত্যাশা করছে। ১৯৯০ সাল থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বারবার সংবিধান পরিবর্তন করে এক ব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। এখন সব ক্ষমতা একজনের হাতে। তাই কোনো স্বৈরাচারী সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে বনানীস্থ কার্যালয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নেতাদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতাদের সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির নেতাদের সাথে সুর মিলিয়ে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, আমাদের অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে এটা বলা যায়। একই নির্বাচন কমিশন নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনা করতে পারলেও দলীয় সরকারের অধীনে তা সম্ভব হয়নি। কারণ, স্বৈরাচারী সরকারের প্রার্থীরা অন্য প্রার্থীদের সঙ্গে নির্বাচন করলে কখনোই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনুযায়ী সমতা, সামাজিক ন্যায় বিচার ও মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, দেশ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। ব্যবসার নামে দেশকে লুটপাট করছে একদল অসাধু ব্যবসায়ী, আমলা ও রাজনীতিবিদ। রাজনীতির অবস্থা এমন হয়েছে যে নির্বাচনে যারা পরাজিত হবে তাদের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। দেশের মানুষ এমন রাজনৈতিক পরিবেশ দেখতে চায় না।
তিনি আরও বলেন, কেউ দেশ ও মানুষের কথা বললেই তাকে দমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যে কেউ সরকারের সমালোচনা করলে তাকে দেশদ্রোহী হিসেবে গণ্য করা হয়। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে দেশের ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে।
এ সময় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বলেন, ‘আমরা এমন বাংলাদেশের জন্য লড়াই করিনি। দেশে মানুষের কোনো অধিকার ও মর্যাদা নেই।গণভবনের একজন কর্মচারীর যে সম্মান আছে, তা এখন মন্ত্রী ও এমপিদেরও নেই। সরকারি কর্মচারীরা এখন লাগামহীন। মানুষের সম্মান ও মর্যাদার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে হবে। এভাবে দেশ চলতে পারে না।
তিনি বলেন, জনগণের মর্যাদা ও অধিকারের জন্য এখন কট্টর বিএনপি ও কট্টর আওয়ামী লীগ থেকে সমান দূরত্ব রেখে সব রাজনৈতিক শক্তিকে একই মোহনায় নিয়ে আসতে হবে।
জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একজন গণতান্ত্রিক ও দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। তিনি রক্তপাত ছাড়াই ক্ষমতা গ্রহণ করেন, পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, জাতীয় পার্টি এখন কারও জোটে নেই। কারও বি-টিম হয়ে রাজনীতির মাঠে নেই। নিজস্ব রাজনীতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেছেন, আওয়ামী লীগ নেতারা বঙ্গবন্ধু হ/ত্যার প্রতিবাদ করেননি, প্রতিবাদ করেছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। বঙ্গবন্ধুর জন্য কাদের সিদ্দিকীর মতো ত্যাগ আর কেউ করেননি।
কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আওয়ামী লীগ দেউলিয়া হয়ে গেছে। এখন ধার করে মানুষ এনে মন্ত্রী বানাতে হচ্ছে তাদের।
কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, পল্লীবন্ধু সৈনিক থেকে রাজনীতিতে এসে উন্নয়নের ইতিহাস রচনা করেছেন। দেশের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির ঐতিহ্য রয়েছে।
কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, দেশে সোনা এখন তামায়, রড বাঁশে পরিণত হচ্ছে এবং ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে।
জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতীক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রিন্সিপাল ইকবাল সিদ্দিকী, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার।
প্রসঙ্গত, সরকার দেশের সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না কারন তাদের এখন দেশের জনগণ চায় না। সে জন্য তারা আবারও কারচুপির আশ্রয় নিতে ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে চায়।