আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিবে কিনা সে বিষয়ে বিএনপি এই সময়ে তার অবস্থান কোনোভাবে স্পষ্ট করবে না। দলটি এই ইস্যুতে কিছুটা কৌশলী অবস্থান গ্রহন করেছে বলে জানা গিয়েছে। বিএনপির যারা নীতিনির্ধারক রয়েছেন তাদের কথা অনুযায়ী, ‘নির্বাচনে অংশ নিবেন কী নিবেন না’ সে ইস্যুতে কিছু বলার সময় এখনো আসেনি, বরং সরকারকে উৎ’খাত করার মাধ্যমে এবং নির্বাচনের সময় নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে থেকে নির্বাচনে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে-এটিই দলের বর্তমান সময়কার অবস্থান.
বিএনপির এই বক্তব্যের অর্থ হচ্ছে, বর্তমান সরকারের অধীনে দলটি কোনো নির্বাচনে যাবে না।
১৬ সেপ্টেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির একজন সিনিয়র সদস্য। খন্দকার মোশাররফ হোসেন উপস্থিত নেতাদের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা না করার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হবে না। আমাদের কারোরই নির্বাচন নিয়ে কথা বলা উচিত নয়। আওয়ামী লীগ নির্বাচনের ফাঁ’/দে পা দিতে পারে না। আমাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে এবং একটি নিরপেক্ষ সরকার অর্জন করতে হবে।’
এমন নির্দেশনার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, নির্বাচনে যাওয়া না-যাওয়ার পক্ষে-বিপক্ষে মতামত যাতে না উঠে আসে সে জন্যই খন্দকার মোশাররফ ওই কথা বলেন। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ওই নির্দেশনা সমর্থন করেন বলে জানা যায়। এর অর্থ হলো নির্বাচন নিয়ে দলীয় অবস্থান এখনই স্পষ্ট হোক বিএনপি তা চায় না। পাশাপাশি ওই প্রশ্নে দলে বিভেদ সৃষ্টির বিষয়েও বিএনপি সত’র্ক থাকতে চাইছে।
জানতে চাইলে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিএনপি অবশ্যই নির্বাচনে যাবে। তবে বর্তমান সরকারের অধীন নির্বাচনে যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আ’/ন্দো’লন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগে বা’/ধ্য করে অথবা প’তন ঘটিয়ে এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করে তার অধীনেই আমরা নির্বাচনে যাব।’
জানা যায়, গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া কেন্দ্রীয়সহ বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি ও পেশাজীবীর নেতাদের সঙ্গে ছয় দিনের মতবিনিময়সভায় প্রায় প্রতিদিনই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান উপস্থিত নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করেন যে আগামী নির্বাচনে
বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টির লক্ষ্যে তারেক ওই নির্দেশনা দেন। দলটির অনেক নেতার মতে, তারেকের বক্তব্যের অর্থ হলো বিএনপি নির্বাচনে যাবে। আবার বর্তমান সরকারের অধীনে যাবে না, এটিও তাঁরা বলছেন। অর্থাৎ ‘নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া’ দুটি বিষয়ই থাকছে দলটির নেতাদের বক্তব্যে।
সূত্র আরো জানায়, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্নে দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এখনো কোনো আলোচনা শুরু হয়নি। তবে বর্তমান সরকার ব্যবস্থা ও কাঠামো হুবহু বহাল থাকলে নির্বাচনে গিয়ে কোনো লাভ হবে না—এমন আলোচনা দলটির সর্বস্তরে আছে।
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে যাব—না এ কথা কখনো বলিনি। তবে বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে যাব না, এটি নিশ্চিত। নির্বাচনে অবশ্যই যাব। তবে সেটি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। আর এই দাবি আদায়েই বিএনপি আ’/ন্দো’/লনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
বর্তমান সরকারের অধীনে, বিএনপি ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ তারিখের নির্বাচনের ফলাফল ঘরে তুলতে পারেনি। এর আগে, ২০১১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ব’র্জনে কোনো রাজনৈতিক লাভ আনেনি। যাইহোক, বিএনপি প্রায় এক বছর ধরে স্থানীয় সরকার এবং অধিকাংশ উপনির্বাচন বর্জন করে আসছে এবং বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার পথ সুগম করেছে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন তিনি দেশের একটি জনপ্রিয় গনমাধ্যমকে বলেন, বিএনপি স্থানীয় সরকার ও উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও ঐ নির্বাচনী এলাকায় ভোট হয়নি। এর মানে হল যে, একজন পা’গলও বলবে না যে এই ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে কোনো রকম সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত। তিনি বলেন, নির্বাচনের প্রশ্ন যদি আসে তাহলে বলা যায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এই মুহুর্তে আসেনি। সরকার কোন পথে যাচ্ছে সেটা দেখে বিএনপি সিদ্ধান্ত নেবে। তবে পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করার মাধ্যমে তৃণমূলের যে সকল নেতাকর্মী রয়েছেন তাদের বেশিরভাগই বর্তমান সরকারের অধীনে থেকে নির্বাচনে যেতে নারাজ।