৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে বিশেষ আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে বিএনপি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৮ ডিসেম্বর থেকে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এর আগে চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে সাময়িক বিরতি দেওয়া হতে পারে। নেতা-কর্মীদের কয়েকদিন ‘রিলাক্স’ করে আন্দোলন জোরদার করতে কয়েকদিন হরতাল-অবরোধ না দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। দলটির শীর্ষ নেতারা বলেছেন, তাদের এখন প্রধান টার্গেট ‘একতরফা’ নির্বাচন ঠেকানো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের এবারের প্রধান টার্গেট নির্বাচন ঠেকানো। সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আমরা যে দৃঢ় অবস্থানে আছি তাও জানাতে হবে। শান্তিপূর্ণ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না। দাবি আদায়ে আমাদের হরতাল অবরোধ চলছে; ভোটবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে আগামীতে আরও বিভিন্ন কর্মসূচি আসবে।
দলটির সিনিয়র নেতাদের মতে, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিএনপি ভাঙার চেষ্টায় কোনো মহলই সফল হয়নি। নেতাদের মূল্যায়ন, নানা চাপ ও প্রলোভন সত্ত্বেও দল ভাঙার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়নি। ফলে সরকারের পরিকল্পনাও হোঁচট খেয়েছে। এটা বিএনপির বড় সাফল্য।
সূত্র জানায়, ভোটকেন্দ্রিক কৌশল নির্ধারণে গত কয়েকদিন ধরেই ম্যারাথন বৈঠক করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। নেতারা জানান, গত ২৮ অক্টোবর থেকে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সারাদেশে অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের পরিপ্রেক্ষিতে কৌশলগতভাবে আন্দোলন করা হচ্ছে। এবার ভোট ঠেকাতে নতুন ছকে আন্দোলন-সংগ্রাম জোরদার করতে আবারও রাজপথে নামতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে নেতাকর্মীরাও বিভিন্নভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছেন।
১৮ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারির মধ্যে সময়কাল চূড়ান্ত আন্দোলনের ‘মোক্ষম ক্ষণ’ চলাকালীন আন্দোলনকে তীব্র করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আপাতত হরতাল-অবরোধের ফাঁকে প্রতিবাদ-সমাবেশের জাতীয় কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এ ছাড়া ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি দেওয়া হবে। এর আগে ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবসে দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরা হবে বিদেশিদের কাছে। ওইদিন রাজধানীতে মানববন্ধন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া দলগুলোর সংগঠন নিয়ে ঢাকায় নারী সমাবেশ, যুব সমাবেশ, কর্মী সমাবেশ, ছাত্র সমাবেশ করার কথাও ভাবছে বিএনপি। একই সঙ্গে বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপির কারাবন্দি, গু/ম-খু/ন ও নি/র্যাতিত নেতাকর্মীদের স্বজনদের নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে। আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত হরতাল-অবরোধসহ পরিস্থিতি বিবেচনায় এসব প্রকাশ্য কর্মসূচির মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চায় দলটি।
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের মতে, মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ এখন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। নির্বাহী শাখার ওপর সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ থাকলেও বিএনপির আন্দোলন দ/মন ও নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হলে ইসির ভূমিকা আরও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের আন্তরিকতা নিয়ে দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্ন উঠবে। তা ছাড়া তফসিলের পর ইসির আচরণ যদি সরকারের মতো হয়, তাহলে প্রমাণ হবে তারা একতরফা নির্বাচন আয়োজনের সব আয়োজন করছে। বিএনপি তখন তা সামনে আনবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, যত দ্রুত সম্ভব সরকারবিরোধী অবস্থান নেওয়া সব দলকে একত্রিত করতে দলের মধ্যে বিশ্লেষণ চলছে। অবরোধ বহাল থাকবে নাকি অন্য কোনো কর্মসূচি দেওয়া হবে, নাকি অবরোধ বহাল রেখে আরও কর্মসূচি দেওয়া হবে- এমন নানা বিকল্প নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা চলছে।
জানা গেছে, আন্দোলনরত বিরোধী দলগুলোকে একত্রিত করার কথা ভাবছে বিএনপি। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের এ পর্যায়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, নির্বাচন বর্জনকারী সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভূমিকা রাখলে ভোট ঠেকানোর আন্দোলন আরও বাড়বে।
সূত্র জানায়, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে ৬০টি দল ও জোট। তারাও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে একযোগে কর্মসূচি হবে নাকি এক জায়গা থেকে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচির কৌশল নেওয়া হবে তা নিয়ে নেতাদের মতামত নেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকারের নানা প্রলোভন ও চাপ সত্ত্বেও ৬০টি নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছে। এর মধ্যে আমরা ৩০ নভেম্বর একযোগে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছি এবং যৌথ বিবৃতি দিয়ে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়েছে। ঐক্য রক্ষায় আন্দোলনকারী দলগুলোর জন্য এটা বড় সাফল্য। এখন আলোচনা চলছে কিভাবে মাঠের আন্দোলন বেগবান করা যায়।