বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিদেশিদের নজরদারি কতটুকু, সে বিষয়ে রাজনৈতিক নেতারা নানা ধরনের বক্তব্য দিয়ে থাকেন। তবে সম্প্রতি কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতেরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে কিছুটা ভিন্ন মতামত প্রকাশ করেছেন। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সবচেয়ে বেশি নজরদারি করা হচ্ছে যেটা সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি বিষয়ে দেখা গেছে। এবার এ বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, নির্বাচন নিয়ে খুব উৎসাহী বিদেশিদের সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ২০২২ সালের শেষের দিকে কিছু ‘ওভার এনথুজিয়াসটিক’ (অতিরিক্ত উৎসাহী) কাজ আমাদের নজরে এসেছে। আমরা এটা কূটনৈতিকভাবে মোকাবেলা করছি। রোববার (২ জানুয়ারি) ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কারও পরামর্শের বিরোধিতা করে না। তবে সেসব পরামর্শে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে ধরনের সাড়া দেওয়া হয়, তা অন্য কোথাও হয় কি না প্রশ্ন তোলেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, তারা ভালো করেই জানেন অন্য দেশে কী করা হয় বা বিদেশিদের এ ধরনের মন্তব্য করার অনুমতি দেওয়া হয় কিনা। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের ইস্যুতে বাংলাদেশ সবার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান তথ্যে তথ্যভিত্তিক।
মানবাধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশ পশ্চিমা দেশগুলোর চাপে আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশ ওইসব দেশের চেয়ে বেশি ভোট পেয়ে মানবাধিকার কাউন্সিলে নির্বাচিত হয়েছে। নির্যা”/তিত-নিপী”/ড়িত জাতির পক্ষে কথা বলার কারণে। এ থেকে বোঝা যায় মানবাধিকারের ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বে কোথায় অবস্থান করছি। ‘
চাপের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা যাকে চাপ বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সবার ওপর সেই চাপ রয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, যারা বাংলাদেশের (মানবাধিকার) কথা বলছে তাদের চেয়ে বেশি ভোটে নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ। কারণ ওই রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশের সদিচ্ছা অনুধাবন করে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রকৃত চ্যালেঞ্জ ও অর্জন অনেকেই জানেন না। একেকজন একেক কারণে মিডিয়াকে একেকভাবে বিশ্লেষণ করে। শাহিরার আলম জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের নির্বাচনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোটে জয়ী হওয়াকে ২০২২ সালে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন বলে অভিহিত করেছেন।
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা শরনার্থী ইস্যুতে তিনি বলেন, এই শরণার্থীদের জন্য ২০২২ সালে বিশ্ব যে মানবিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা বাস্তবায়নে একটি বড় ফাঁক রয়ে গেছে। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশ তার প্রতিশ্রুতি থেকে বিচ্যুত হয়নি। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা শরনার্থীদের তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরাতে ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেন তিনি।
শাহরিয়ার আলম বলেন, “অনেক দেশ ২০, ৩০ বা ৬০ অভিবাসীকে আশ্রয় দিলে মিডিয়াতে যে প্রচার পায়, এমনকি তারা ১০ লাখের বেশি মানুষকে আশ্রয় দিলেও আমরা একই সেই বাহবা পাই না।”
তিনি বলেন, এ বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে। কোনো ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নেই বা তারা (পশ্চিমারা) সবার সাথে সমান আচরণ করছে না।
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে সোহিয়ার আলম বলেন, র্যাব ও এর কর্মকর্তাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে আমরা কাজ করব। বিশেষ করে, আমরা ২০২৩ সালে র্যাবকে একটি সংগঠন হিসেবে নেওয়ার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা জোরদার করব।
কোনো চাপ না থাকলে ১০ ডিসেম্বর বিএনপির কর্মসূচির পর সরকার কেন কূটনৈতিক মিশনে ব্রিফিং পাঠাল এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রো-অ্যাকটিভ এনগেজমেন্ট’-এর অংশ হিসেবে সরকার এটা করেছে। তিনি বলেন, কূটনীতিকদের মধ্যে কোনো ধারণা তৈরি হওয়ার আগেই আমরা তথ্য পাঠিয়ে দিয়েছি।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এর আগেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য একটি মহল সেটাকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করে ইস্যু সৃষ্টির পায়তারা করছে, এমনটি জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।