বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। আর এই নির্বাচনের জন্য ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। যার অংশ হিসেবে সম্প্রতি দেশের সব ডিসি এসপিদের সাথে বৈঠকে বসে ইসি। আর সেখানেই ঘটে ব্যাপক বিপত্তি।এ দিকে ডিসি-এসপিদের হট্টগোল ও প্রতিবাদের মুখে নির্বাচন কমিশন আনিছুর রহমানের অপারগতাকে ভুল বোঝাবুঝি বলে মনে করলেও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও বিশ্লেষকের মতে, এটা আইন ও সংবিধানের লঙ্ঘন।
শনিবার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো কাশিমন ঢাকায় নতুন নির্বাচনের জন্য মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন দেশের সব জেলার জেলা কমিশনার (ডিসি) ও পুলিশ সুপাররা (এসপি) এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন ও নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করার বার্তা দিতে এ সভার আয়োজন করা হয়।
জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনার আনিসুর রহমান সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থাহীনতার জন্য ডিসি-এসপিদের দায়ী করেন। জেলা পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, কিছু সংসদ সদস্য প্রকাশ্যে ইসি সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন।
কমিশনারকে কথা বলতে বাধা দেওয়া হয়
শনিবার রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে ইসি আয়োজিত এই ধারাবাহিক সংলাপে ডিসিদের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আনিসুর রহমান। মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ‘অযোগ্য’ এবং তারা ‘মন্ত্রী-এমপি ছাড়া কাজ করতে পারে না’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি উল্লেখ করেন যে ডিসিরা ম্যাজিস্ট্রেটদের বরাদ্দকৃত গাড়ির তেলের টাকা পর্যন্ত দেন না।
তার বক্তব্যের এ পর্যায়ে সভাকক্ষে একযোগে ডিসি-এসপিরা হট্টগোল শুরু করেন এ সময় সিইসিসহ অন্যান্য কমিশনার এবং জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন এ সময় কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, “তাহলে তুমি আমার বক্তৃতা শুনতে চাও না।” সবাই একযোগে ‘না’ বললে তিনি কথা শেষ না করেই বসে পড়েন। আনিসুর রহমান সর্বশেষ জ্বালানি সচিব হিসেবে অবসরে যান
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে আনিসুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি
যা বলছেন নির্বাচন কমিশন ও ডিসিরা
বৈঠকে উপস্থিত দুই ডিসির সঙ্গে কথা বললে তারা দাবি করেন, নির্বাচন কমিশনার আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করেছেন, যা প্রকাশ করা উচিত নয়। ফলে এর প্রতিবাদ হয় একপর্যায়ে তিনি প্রশ্ন করেন, আপনি কি আমার বক্তব্য শুনতে চান না? সবাই না বললে তিনি বক্তৃতা শেষ না করেই বসেন এরপর কেউ এ বিষয়ে কিছু বলেনি এই দুই জেলা প্রশাসকের কেউই তাদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নির্বাচন কমিশন রাশিদা সুলতানা বলেন, ‘‘এরকম কিছু নয়৷ এটি একটি সামান্য ভুল বোঝাবুঝি এটি বলা তার পক্ষে ভুল নয় … তারা কিছুটা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আর কিছুই নয় আমরা উদ্বিগ্ন নই যে এটি একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা পরে তাদের আচরণের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “…এটাই শেষ, আমরা কেউ কিছুই মনে রাখিনি। তারা সবাই এক কথায় বলেন, আমরা আপনার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করব।
মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবেন বলে ইসির আস্থা রয়েছে জানিয়ে রাশিদা সুলতানা বলেন, তাদের মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে অন্যথায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ” এ ক্ষেত্রে কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে বলে কোনো ধরনের বিচ্যুতি হলে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়েছে।
‘ডিসি-এসপিরা নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করবে’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক মো. বদিউল আলম মজুমদারের মতে, ২০১৮ সালের নির্বাচনেই ডিসি-এসপিদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। তারা রাতের ভোটে সাহায্য করেছে মন্তব্য করে ডয়চে-তে তিনি বলেন, “সমস্যা নির্বাচন কমিশনের।” তারা নিরপেক্ষ নন তারা নিরপেক্ষ হলে এমন আচরণ করার সাহস পেত না এই ঘটনার পর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতো।”
তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে আগামী নির্বাচনে ডিসি-এসপিরা আরও প্রভাব বিস্তার করবে। তারা নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করবে।”
প্রসঙ্গত, বলতে গেলে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বেশ চাপে রয়েছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন নিয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করলেও তেমন ফলপ্রসূ হয়নি তা। এর মধ্যে আবার ডিসি এসপিদের হস্তক্ষেপ নিয়ে বেশ হতাশ নির্বাচন কমিশন।