নির্বাচনে জিততে নানা অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে থাকেন অনেকেই। যা আইনগত দিক দিয়ে দণ্ডনীয় অপরাধ। তবে এরপরও আইনের কোনো তোয়াক্কার না করে রীতিমতো এ ধরণের অন্যায় করে যাচ্ছেন অনেকেই। আর এরপরও যখন নির্বাচনে হেরে যায়, তখন ঘটিয়ে বসেন নানা অপ্রত্যাশিত ঘটনা। আর এবার ঠিক তেমনই একটি ঘটনা ঘটনা ঘটেছে বগুড়ায়।
বগুড়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে হারার পর টাকা ফেরত পেতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এ অভিযোগ জেলা পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ও শাজাহানপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালেবুল ইসলামের বিরুদ্ধে। সাত ভোটারের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
গত ১৭ অক্টোবর বগুড়া জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচনে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য পদে প্রার্থীরা ছিলেন জেলা পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুর রহমান দুলু, শাজাহানপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালেবুল ইসলাম ও উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি রুবেল সরকার। . নির্বাচনে রুবেল পেয়েছেন ১৩ ভোট। তালেবুল পেয়েছেন ৩৭ ভোট। আছাদুর পেয়েছেন ৭৯ ভোট।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পরাজিত তালেবুল তার প্রাপ্ত ভোটের দ্বিগুণেরও বেশি ভোটারদের অর্থ প্রদান করেছেন; কিন্তু নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর থেকেই তিনি ভোটারদের কাছে ফোন করে টাকা ফেরত চেয়ে আসছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাঝিরা ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য জানান, তালেবুল এ ইউনিয়নের প্রতিটি ভোটারকে ২০ হাজার টাকা করে দেন। তাকে ভোট দেওয়ার কথা বলে কেউ তার কাছে টাকা চাইতে আসেনি। বরং তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে ডেকে টাকা দিতে বাধ্য করেন। আর বললেন, ‘যাকে যোগ্য মনে করেন, তাকে ভোট দিন। কিন্তু আমার খেয়াল রেখো। কিন্তু পরাজিত হওয়ার পর থেকে নির্বাচনের পর থেকে ফোন করে টাকা ফেরত চেয়ে আসছেন। টাকা ফেরত না দিলে বাড়ি থেকে গরু-ছাগল নিয়ে যাবে বলেও শোনা যাচ্ছে।
একই ইউনিয়ন পরিষদের এক নারী সদস্য জানান, তার স্বামী ভ্যানচালক। গত শুক্রবার রাতে তালেবুল তাকে ফোন করে টাকা ফেরত দিতে বলেন; কিন্তু টাকা খরচ হয়ে যাওয়ায় গালাগালি করেন। গত শনিবার একদল লোক ওই বাড়িতে গিয়ে টাকা ফেরত না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
আরেক সদস্য বলেন, তালেবুলকে ভোট না দেওয়ার কথা বলার পরও তাকে টাকা নিতে বাধ্য করা হয়েছে। না হলে তার রোষানলে পড়তে হতো।
খোট্টাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য বলেন, টাকা ফেরত না দিলে আমাকে খেয়ে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। ‘
পূর্বাঞ্চলের একটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানান, তালেবুল ফোন করে সদস্যদের টাকা ফেরত দিতে বলেন। খোট্টাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, এটা একেবারেই বোকামি। ‘
আরেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, ভোটে যারা টাকা দিয়েছে ও নিয়েছে তারা উভয়েই অপরাধী।
উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আবু জাফর আলী বলেন, ভোট কেনা অপরাধ। মারধর, ভয়ভীতি ও হুমকিও অপরাধ। এমনটা হলে যে কেউ আইনি আশ্রয় নিতে পারে। ‘
উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নীরেন্দ্র মোহন সাহা বলেন, ‘দুই পক্ষের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি। ‘
তবে এ বিষয়ে পরাজিত ওই প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি রীতিমতো এ অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদ মাধ্যমকে দাবি করেন, তিনি কাউকে হুমকি দেননি। সব প্রার্থীরাই টাকা বিলিয়েছেন। তাই টাকা নিয়ে ভোট না দিলে এটা অন্যায় বলেও জানা তিনি।