বিশ্বব্যাপী শ্রম অধিকার নিশ্চিত করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বিডেনের সম্প্রতি ঘোষিত স্মারকলিপির লক্ষ্য হতে পারে বাংলাদেশ। আর শ্রম অধিকার লঙ্ঘিত হলে এই নীতি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
শ্রম ইস্যুতে সম্ভাব্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সরকারকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ মিশন। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস ঢাকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এমন সতর্কবার্তা দিয়ে চিঠি দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের মন্ত্রী (বাণিজ্য) মো. সেলিম রেজার লেখা চিঠিটি গত ২০ নভেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছে পাঠানো হয়। চিঠির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘বিশ্বব্যাপী শ্রমিক ক্ষমতায়ন, অধিকার ও উচ্চ শ্রমমান এগিয়ে নিতে স্মারক’ সংক্রান্ত একটি সংকলিত প্রতিবেদন পাঠানো হয়।
এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বুধবার গণমাধ্যমকে বলেছেন, রাজনীতি ও ব্যবসা আলাদা বিষয়। পোশাক রপ্তানি বন্ধে আমেরিকা-ইউরোপ যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা বাস্তবায়িত হবে না। এই দুই দেশ এমন কিছু করবে না, যার প্রভাব বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে পড়বে।
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, যদিও স্মারকলিপি একটি বৈশ্বিক নীতি, যা সব দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যেতে পারে; তবুও বিশ্বাস করার কারণ আছে যে বাংলাদেশ এই নীতির লক্ষ্য হতে পারে। স্মারকলিপি প্রকাশের সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ভারপ্রাপ্ত শ্রমমন্ত্রী বাংলাদেশের শ্রম সমস্যার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ দূতাবাসের দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, স্মারকলিপি অনুযায়ী বিদেশে মার্কিন দূতাবাসগুলো শ্রম সংক্রান্ত বিষয়ে সরাসরি কাজ করতে পারবে। এই নীতি তাই আগ্রহী মার্কিন রাষ্ট্রদূত বা মিশনদের দেশীয় বা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে উৎসাহিত করতে পারে। শ্রম অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে বলে মনে করলে বা বিশ্বাস করলে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রের ওপর এই নীতি চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ দূতাবাসের চিঠিতে আরও বলা হয়েছে- ‘‘স্মারকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের বিবেচনায় শঙ্কিত হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। এই স্মারকে শ্রম অধিকারের বিষয়ে যা বলা হয়েছে, তার পেছনে রাজনীতি রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র নানাভাবে এই রাজনৈতিক অভিপ্রায়কে ব্যবহার করতে পারে। সে কারণে এই স্মারক বাংলাদেশের জন্য একটি বার্তা। কারণ শ্রম অধিকারের অজুহাতে স্মারকে উল্লেখ করা যেকোনো পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র নিতে পারে। এই স্মারকের প্রভাব বাংলাদেশের পোশাক খাতের ওপর পড়তে পারে এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।’
প্রসঙ্গত, ১৬ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট বাইডেন শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন, শ্রম অধিকার এবং শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রপতির স্মারক স্বাক্ষর করার পরে, রাষ্ট্রীয় সেক্রেটারি অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছিলেন যে যারা শ্রমিকদের অধিকারের বিরুদ্ধে যাবে, শ্রমিকদের হুমকি বা ভয় দেখাবে। তাদের ওপর প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
এর আগে গত মে মাসে বাংলাদেশের জন্য ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। নীতিমালায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টির জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের যুক্তরাষ্ট্র ভিসা দেবে না। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িতদের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান ও প্রাক্তন কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনী অন্তর্ভুক্ত বলে জানা গেছে।
অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন শ্রম অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতির কথা জানাতে গিয়ে বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিক আন্দোলনের নেত্রী কল্পনা আক্তারের নামও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, কল্পনা বলেছিলেন যে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস তার পাশে দাঁড়িয়েছে এবং সে কারণেই তিনি (কল্পনা) বেঁচে আছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার, গত অর্থবছরে মোট রপ্তানি প্রায় ৯.৭৫ বিলিয়ন ডলার। এ বছরে ২৩ শতাংশেরও বেশি পতন সত্ত্বেও বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানি করে অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ৫.৭৭ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বাংলাদেশে শ্রমিকদের অধিকার খর্ব করার কোনো কারণ নেই। এ বিষয়ে শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে আফ্রিকার দেশগুলোতে শ্রম অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকার নিয়ে বারবার প্রশ্ন তোলা হচ্ছে কেন?