Saturday , November 9 2024
Breaking News
Home / Countrywide / নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পথ হচ্ছে সহজ, পরিবর্তনের পর থাকছে যেসব বিধিমালা

নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পথ হচ্ছে সহজ, পরিবর্তনের পর থাকছে যেসব বিধিমালা

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া সহজ করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা’ সংশোধনের খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে ইসি সচিবালয়। খসড়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন ফরমের সাথে ২৫০ জন ভোটারের সমর্থনকারী স্বাক্ষরের একটি তালিকা জমা দেওয়ার বিদ্যমান বিধান বাতিল করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে এ সুযোগ নিয়ে উপজেলা নির্বাচনে ভুঁইফোঁড় প্রার্থীদের ঠেকাতে কয়েক দফা নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। একইভাবে জামানত বাজেয়াপ্তের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম আরোপের কথা ভাবছে ইসি। নির্বাচনে যে সংখ্যক ভোট পড়বে, তার ১৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ ভোট না পেলে— সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত করে সরকারি কোষাগারে জমার বিধান যুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে প্রদত্ত ভোটের সাড়ে ১২ শতাংশ ভোট না পেলে জামানত বাজেয়াপ্তের বিধান রয়েছে। ইসির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন পরিচালনা) বিধিমালায়ও ব্যাপক সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রচারের অনুমতি এবং নির্বাচনী প্রচারণার পোস্টারে পলিথিন কভার বা প্লাস্টিকের ব্যানার ব্যবহার নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারণাকে নিয়মের আওতায় আনা হচ্ছে। জনসভা ও মিছিলকে আইনি বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনে মাইক্রোফোন ব্যবহারে শব্দের মাত্রা সীমিত করারও প্রস্তাব করা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণায় রঙিন পোস্টার-ব্যানার ব্যবহারের সুযোগ ফিরিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব সংশোধনী প্রস্তাব তৈরি করেছে ইসি সচিবালয়।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নির্বাচন কমিশনের ২৭তম সভায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণবিধির সম্ভাব্য সংশোধনী নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জানানো হয়, নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানার নেতৃত্বে ‘আইন ও বিধি সংস্কার কমিটির’ সভা আজ বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই বৈঠকে এসব সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে। কমিটি তা যাচাই-বাছাই করে কমিশন সভায় উপস্থাপনের জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ পাঠাবে। নির্বাচন কমিশনের মঙ্গলবারের বৈঠকে চলতি বছর উপজেলা পরিষদে চার ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রতিটি ধাপে শতাধিক উপজেলায় ভোট হবে। যেসব উপজেলায় মেয়াদ আগেই শেষ হবে সেসব উপজেলায় এ নীতি অনুসরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ও উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালায় কিছু সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে। আইন সংস্কার কমিটি সেসব প্রস্তাব চূড়ান্ত করবে। ওই কমিটির সুপারিশ কমিশন সভায় তোলা হবে।
নির্বাচন বিধিমালা সংশোধন

ইসির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দলীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ার‍্যান পদে ভোট হওয়ার বিধান অন্তভুর্ক্ত করে ২০১৬ সালে ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা সংশোধন’ করা হয়। তখন থেকে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় মনোনয়ন জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হলে ২৫০ জন ভোটারের সমর্থনসূচক সইয়ের তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হয়। এই সই জমা দেওয়ার বিধানের কারণে অনেকেই প্রার্থী হতে পারেন না। আবার ওই তালিকার গরমিল, স্বাক্ষরদাতাদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে তা অস্বীকার করানোসহ নানা কারণে বিভিন্ন সময়ে প্রার্থিতা বাতিলের অনেক নজির রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থিতার ক্ষেত্রে বিধিমালা সংশোধন করতে যাচ্ছে কমিশন। এতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধামালার বিধি ১৫-তে সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর যৌক্তিকতা হিসেবে বলা হয়েছে, প্রার্থিতার সমর্থনে সইযুক্ত তালিকা জমা দেওয়ার ফলে ভোটারদের গোপনীয়তা নষ্ট হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এরইমধ্যে জানিয়েছে, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তারা দলীয় কোনও প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবে না। দল সমর্থিত প্রার্থীরা স্বতন্ত্রভাবে ভোট করতে পারবেন।

জাতীয় সংসদের আদলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও কিছু বিধান যুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নির্বাচন বিধিমালার ৮০-‘ক’ বিধিতে নির্বাচনি দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি, পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের হুমকি, ভীতি ও বাঁধা দিলে— তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। অনিয়ম ও প্রভাব বিস্তার হলে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে নির্বাচন বন্ধ করার ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমানে বিধিতে এসব বিষয়ে স্পষ্ট কিছু নেই। নির্বাচন বিধিমালায় আরও যেসব সংশোধনী প্রস্তাব করা হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে— কেবল অনলাইন পদ্ধতিতে মনোনয়নপত্র দাখিল, নির্বাচনি ব্যয়সীমা বাড়িয়ে ২৫ লাখ টাকা নির্ধারণ, পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি করা এবং নির্বাচন প্রচার মনিটরিংয়ে কমিটি গঠন করা।

রঙিন পোস্টার-ব্যানারে ফিরতে চায় ইসি

জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আচরণ বিধিমালায় বড় ধরনের সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে। পোস্টারে পলিথিন কভার এবং প্লাস্টিকের ব্যানার ব্যবহার নিষিদ্ধ করারও আহ্বান জানানো হয়েছে। নির্বাচনে শব্দ দূষণ কমাতে মাইক্রোফোনের শব্দ ৬০ ডেসিবেলের নিচে রাখার বিধান যুক্ত করতে বলা হয়েছে। এ দুটি বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইসিকে অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় ১৫ বছর পর উপজেলা নির্বাচনে রঙিন পোস্টার-ব্যানার ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচারের বিষয়টি বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে, ডিজিটাল প্রচারাভিযানের নিরীক্ষণ বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলবে।

নির্বাচনী প্রচারণা পর্যবেক্ষণে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে আচরণবিধিতে। মনিটরিং কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা করতে পারে।

 

 

 

About bisso Jit

Check Also

জেলে থেকে শত কোটি টাকার মালিক আলমগীর

লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি এবং সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য আলমগীর হোসেন ও তার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *