আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। বাংলাদেশে বিগত সব জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
বুধবার থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সব নির্বাচনী এলাকায় সেনাবাহিনী থাকবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ, আনসার, র্যাব, বিজিবির মতো বাহিনীর সঙ্গে সেনাবাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করবে। অতীতেও নির্বাচনের সময় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে সেনাবাহিনী ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে কাজ করেছে।
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে- নির্বাচনকে ঘিরে বেসামরিক বাহিনী তৎপর থাকলেও নির্বাচনের দায়িত্ব পালনে সেনাবাহিনী ডাকা হলো কেন? তাদের দায়িত্ব কতটুকু?
সেনাবাহিনী যা করতে পারে, যা করতে পারে না
নির্বাচন কমিশন বলছে, ‘স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে’ সহায়তা করতে ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর অধীনে নির্বাচনী দায়িত্বে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হবে।
নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন নোডাল পয়েন্টে সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে। কোনো সংকট দেখা দিলে তারা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ ঘটনাস্থলে যাবেন। এরপর তারা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবেন।
একটি আসন কোথায় এবং কতটি ‘নোডাল পয়েন্ট’ থাকবে তা নির্ধারণ করবেন আসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, পুলিশ সুপারসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা নির্ধারণ করবেন সেনাবাহিনী কোথায় থাকবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্বাচনী এলাকাকে তিনটি বিভাগে ভাগ করেছে – গুরুত্বপূর্ণ, অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং সাধারণ।
পুলিশ বা স্থানীয় প্রশাসন ভোটকেন্দ্রে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সামাল দিতে না পারলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে যাবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
সিআরপিসি পেনাল কোড অনুযায়ী, সেনাবাহিনী ম্যাজিস্ট্রেটের দ্বারা ঘটনাস্থলে বলপ্রয়োগ থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে।
উদাহরণ স্বরূপ তিনি বলেন, কেউ ভোটকেন্দ্রের দিকে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দিলে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী সেখানে যাবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে প্ররোচনা বা জোর করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার ব্যবস্থা করবে।
আইন অনুযায়ী নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীর একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকায় ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে প্রয়োজনে যে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন তারা।
তবে সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকলেও নির্বাচন কমিশনের সচিব মি
সেনা মোতায়েন কেন?
এবারের নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ না করায় সহিংসতার সম্ভাবনা অন্য সময়ের তুলনায় কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেক নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষক।
অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, অন্য যেকোনো নির্বাচনের মতোই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন বলছিলেন, সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন আছে কি না সেটা এখানে বিষয় নয়। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনে কমিশন যা করত, এবারের নির্বাচনেও তাই করছে।
এছাড়াও নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে কমিশন আন্তর্জাতিক দলগুলোর কাছে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে মনে করেন সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার।
তিনি বলেন, এই নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচন কমিশনের ওপর আন্তর্জাতিক চাপের কথা বলছেন সিইসি নিজেই। হয়তো তারা আন্তর্জাতিক দলগুলোকে বলার চেষ্টা করছে যে আমরা সাংবিধানিকভাবে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের দায়িত্ব সব সতর্কতার সঙ্গে পালন করেছি। তারা হয়তো একটা বার্তা দিতে চাইছেন যে, সংবিধান অনুযায়ী আমরা আমাদের কাজে অবহেলা করিনি।
অন্য কথায়, হুসাইন সাহেব।
বাংলাদেশের নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের ইতিহাস
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনের পর থেকেই নির্বাচনকে ঘিরে সেনাবাহিনী মোতায়েনের রেওয়াজ চলে আসছে।
ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ১৯৭৩ সালের নির্বাচনের পর থেকে বাংলাদেশে সেনা মোতায়েনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
“১৯৭৩ সালের নির্বাচনে খুব বেশি পুলিশ ছিল না। অন্যান্য বাহিনীতেও পর্যাপ্ত সদস্য ছিল না। তাই জনবল বাড়াতে সে সময় সেনাবাহিনীকে ডাকা হয়েছিল।
এরপর ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সব নির্বাচনই সেনা সমর্থিত প্রশাসনের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। স্বাভাবিকভাবেই সেসব নির্বাচনে সেনাবাহিনী উপস্থিত ছিল বলে জানান তিনি।
সাখাওয়াত হোসেন সাহেব।
এরপর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ‘একতরফা নির্বাচন’ সহ ১২ জুন ও ১ অক্টোবর ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
এরপর সেনাবাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
২০১৪ সালের পরবর্তী নির্বাচনে মোট ১৫ দিনের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল।
গত ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৩৫ ,০০০ এরও বেশি সশস্ত্র এফ