বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদীকে সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) দুই সাবেক চেয়ারম্যানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় সালাম মুর্শেদীর যে বাড়িটিকে ঘিরে চলছে, তাতে আসামির তালিকায় নাম না উঠলেও বাড়িটি হারাতে যাচ্ছেন এ সংসদ সদস্য।
অভিযোগ, ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও অবমুক্তকরণ ছাড়াই জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মিথ্যা রেকর্ডপত্র তৈরি এবং পরবর্তীতে হস্তান্তর অনুমতি ও নামজারি অনুমোদন করার মাধ্যমে রাজধানীর গুলশান-২ এর ১০৪ নম্বর সড়কের ২৭/বি নম্বর বাড়িটির মালিক হয়ে যান সালাম মুর্শেদী।
তবে জাল দলিল দিয়ে বাড়ির মালিক হয়ে গেলেও তাকে মামলায় আসামি করা হয়নি! জাল নথি তৈরির বিষয়ে তিনি জানেন না এমন অদ্ভুত যুক্তি দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়নি বলে দাবি করেছেন দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
এ মামলার আসামি না হলেও সংসদ সদস্য সালাম মুর্শেদী বাড়ি হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন বলেও দাবি করেন ওই কর্মকর্তা। দুদকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো মন্তব্য না করা হলেও বাড়িটি উদ্ধারের নির্দেশনা দিয়ে এরই মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
মামলা দায়েরের পর গত মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুদক সচিবের কার্যালয় থেকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়।
সংস্থাটির সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সই করা চিঠিটিতে বলা হয়েছে, সম্পত্তির মালিকানা জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে বলে অনুসন্ধানকালে প্রমাণিত হয়েছে। জাল কাগজ তৈরি করে জালিয়াতির মাধ্যমে পরিত্যক্ত সম্পত্তির মালিকানা পরিবর্তন করে ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে আব্দুস সালাম মুর্শেদীর বাড়ি (বাড়ি নং-২৭/বি, রোড নং-১০৪, গুলশান-২) সংক্রান্ত বিষয়টি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তা উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণের জন্য কমিশন থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই সিদ্ধান্তের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে।
এ বিষয়ে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অভিযোগ অনুসন্ধানকালে রেকর্ডপত্র দ্বারা সমর্থিত না হওয়ায় জাল-জালিয়াতির সঙ্গে আব্দুস সালাম মুর্শেদী ও অপর মালিক মোহাম্মদ আব্দুল মঈনের সম্পৃক্ততার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মামলার তদন্তকালে বিষয়গুলো আরও খতিয়ে দেখতে হবে। তবে, সম্পত্তির মালিকানা জাল কাগজের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে, এটা প্রমাণিত।
তিনি আরও বলেন, ভুয়া কাগজপত্রে পরিত্যক্ত সম্পত্তির মালিকানা ব্যক্তিমালিকানায় পরিবর্তন করা হয়েছে। তদন্ত দল বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখতে এবং পরিত্যক্ত সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়ার সুপারিশ করেছে। এর আগে ২০২২ সালে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন এবং ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদের পিএ কমিটির অডিট প্রতিবেদনে জালিয়াতির প্রমাণ পেয়ে সরকারকে সম্পত্তি উদ্ধারের সুপারিশ করা হয়।
মঙ্গলবার বিকেলে সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগে সংস্থাটির উপ-পরিচালক ইয়াছির আরাফাত বাদী হয়ে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা করেন। মামলার বিষয়টি দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার ১১ জন আসামি হলেন, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন খাদেম ও প্রকৌশলী এম আজিজুল হক, সাবেক সদস্য (এস্টেট) লে. কর্নেল (অব.) এম নুরুল হক, সাবেক পরিচালক আবদুর রহমান ভূঁঞা, সাবেক উপ-পরিচালক (এস্টেট) মো. আজহারুল ইসলাম, রাজউকের সহকারী পরিচালক (নিরীক্ষা ও বাজেট) শাহ মো. সদরুল আলম ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক মো. হাবিব উল্লাহ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সহকারী সচিব আবদুস সোবহান, সাবেক শাখা সহকারী মো. মাহবুবুল হক এবং কক্সবাজারের রামুর বাসিন্দা মীর মোহাম্মদ হাসান ও তার ভাই মীর মো. নুরুল আফছার।