বাংলাদেশে চলতি বছর নিয়োগ দেয়া হয় নতুন নির্বাচন কমিশন। আর দায়িত্ব পাওয়ার পরেই নতুন নির্বাচন কমিশন বেশ কয়েকটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ন করে। তবে বিপত্তি ঘটেছে গাইবান্ধার নির্বাচনে। ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার আসনের উপনির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। বুধবার (১২ অক্টোবর) সকাল ৮টা থেকে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে কয়েক ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
দুপুর ২টার পর নির্বাচন কমিশন ভবনে ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। আরপিওর ক্ষমতাবলে ভোটগ্রহণ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
এ সময় গোপন কক্ষে অবাঞ্ছিত লোকের উপস্থিতি, এজেন্টদের বের করে দেওয়া, সিটি টিভির সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ বিভিন্ন অভিযোগ স্বীকার করেন সিইসি।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, “আমরা লক্ষ্য করেছি যে কয়েকটি কেন্দ্রে সিসিটিভি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। যার কারণে আমরা তথ্য সংগ্রহ করতে পারিনি। আমরা আমাদের কর্মকর্তাদের রেখে দুপুর সাড়ে ১২টায় রুম থেকে বের হয়েছি। এর পর আমরা আরও ৭টি কেন্দ্রের অনুমোদন পেয়েছি।আমরা সম্মত হয়েছি।আমরা ৫০টি কেন্দ্রে ভোট বন্ধ করেছি এবং একজন রিটার্নিং অফিসার একটি কেন্দ্রে ভোট বন্ধ করেছেন।অন্য কথায়, আমরা মোট ৫১টি ভোট বন্ধ করেছি।
তিনি আরও বলেন, কমিশনের সকল সদস্যের আলোচনার পর আমরা পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিই। 145টি কেন্দ্রের মধ্যে 51টি বন্ধ করা হয়েছে। তাই বাকি কয়েকটি কেন্দ্র থেকে সঠিক মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। আইনে আরও বলা হয়েছে, ভোট নিরপেক্ষ না হলে কমিশন যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
এর আগে সকাল থেকে সিইসিসহ অন্য কমিশনাররা সিসি ক্যামেরায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। অনিয়মের ছবি ধরা পড়ার পর কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেন সিইসি। সকালে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
সিইসি বলেন, কিছু কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোট হচ্ছে না তাই আমরা ভোটগ্রহণ বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছি। নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয় তার জন্য নির্বাচন কমিশন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আমরা নির্বাচনকে নির্বাচন হিসেবে দেখতে চাই। অনিয়মের কারণে আমাদের তা করতে হয়েছে। আমরা ভোটকেন্দ্রে অননুমোদিত প্রবেশ বা আইন ভঙ্গের প্রত্যক্ষ করেছি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে আমরা কেন্দ্রটি বন্ধ করে দিয়েছি। এখন আমি পরে দেখব চাকরির নিয়ম বা অন্যান্য নিয়ম অনুযায়ী কি ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা এসপি, ডিসি, রিটার্নিং অফিসারকে টেলিফোনে বলেছি, এখান থেকে আমরা সিসি ক্যামেরায় দেখেছি। তাই সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছি।
কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, কমিশন যদি মনে করে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে না, তাহলে কমিশন নির্বাচন বন্ধ করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘কেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল তা আমরা বলতে পারছি না। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। আপনি গোপন কক্ষে কি ঘটছে এবং ক্রমানুসারে কি হচ্ছে তা দেখতে পাবেন। এখন কেন এমন হচ্ছে তা দ্রুত বলতে পারছি না।
উল্লেখ্য,এ নিয়ে আরো বেশ কিছু কথা বলেন সিইসি। বিশেষ করে নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা কেমন ছিল তা নিয়ে আজ কথা বলতে চাননি সিইসি। তিনি বলেন, ‘আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ঠিকমত কাজ করছে কি না, তা আমরা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। ইভিএমেরও কোনো ত্রুটি দেখতে পাচ্ছি না।’ এ দিকে স্থগিত করা নির্বাচন আবার পুনরায় কবে নেয়া হবে তা নিয়েও কিছু জানাননি সিইসি।