দরজায় কড়া নাড়ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আজ শনিবার (৬ জানুয়ারি) রাত পেরোলেই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তবে তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন বাতিলের দাবিতে মাঠে নেমেছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। এ লক্ষ্যে লাগাতার কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বিএনপি। অবশেষে শনিবার সকাল ৬টা থেকে ভোটের পরদিন সোমবার (৮ জানুয়ারি) সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি পালন করছে দলটি।
২৮ অক্টোবর থেকে লাগাতার কর্মসূচি পালনকারী দলটির নীতিনির্ধারকেরা সরাসরি নির্বাচন ঠেকানো বা প্রতিহত করার ঘোষণা না দিলেও সরকার পতনে কঠোর অসহযোগ আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। যদিও বিএনপির ডাকা শেষ কয়েক দফা অবরোধ-হরতা সরকারকে চাপে রাখার মতো শক্ত অবস্থান বা পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি।
অক্টোবরে ঢাকা মহাসমাবেশ বাতিলের পর প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হা/মলার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতার পাশাপাশি দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মী এখন কারাবন্দি। এ অবস্থায় কার্যত অজ্ঞাত স্থান থেকে দলের আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
এদিকে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচির মধ্যে রাজধানীসহ দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে বাস-ট্রেনে অ/গ্নিসংযোগসহ ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় সন্দেহের তীর বিএনপির দিকে। তবে অ/গ্নিসংযোগের দায় বরাবরই অস্বীকার করে আসছে বিএনপি।
অন্যদিকে, শেষ মুহূর্তে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে তড়িঘড়ি করে লিফলেট বিতরণ করেছেন বিএনপি নেতারা। নির্বাচনে ভোটারদের ভোট দিতে নিরুৎসাহিত করতে চায় বিএনপি। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে নানা পরিকল্পনা ও কৌশল নিয়েছে।
এ অবস্থায় নির্বাচনের পর বিএনপির আন্দোলন কোন মোড় নেবে? এ বিষয়ে কিছু ইঙ্গিত দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচনের পরও আন্দোলন চলবে। তবে সেই আন্দোলনের কৌশল কী হবে তা স্পষ্ট করেননি তিনি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা লড়াই করতে প্রস্তুত। তারা স্বৈরাচারের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করবে কিন্তু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করব। তাই নির্বাচনের পরও সংগ্রাম-আন্দোলন তো আছেই। এই সরকার টিকবে না।
দলটির চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা ফজলুর রহমানও বলেছেন, নির্বাচনের পর পরিস্থিতি ভিন্ন হবে। তিনি বলেন, ‘২০১৪ সাল, ২০১৮ আর চব্বিশ সাল এক না। কিন্তু এখন রাজপথ উত্তপ্ত, মানুষ উত্তপ্ত। জনগণ রাজপথে সেভাবে অংশগ্রহণ না করলেও যে তিন ছেলে রাজপথে স্লোগান দেয়, হাসিনার নির্বাচন মানি না, এই তিন ছেলে তিন কোটি মানুষের মুখপাত্র ও কণ্ঠস্বর।
নির্বাচন-পরবর্তী আন্দোলনের তফসিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের বলছেন, ৭ তারিখ ফাইনাল হবে, না-ফাইনাল শুরু হবে ৭ তারিখে। অসহযোগ আন্দোলনের চেয়ে বড় কোনো আন্দোলন নেই। অসহযোগ আন্দোলন চলবে। সেই অসহযোগ বিভিন্ন রূপে আসবে। কোনো ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম চালাতে পারবে না, তার বিরুদ্ধে অনাস্থা আসতে পারে, প্রতিরোধ আসতে পারে।আসবেই।
নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে ভোটারদের ভোট দিতে নিরুৎসাহিত করাই বিএনপির বর্তমান ফোকাস। তবে নির্বাচন প্রতিহত বা ঠেকানোর জন্য দল কোনো আন্দোলন করবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন বিএনপির সিনিয়র নেতা ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি, আমরা জনগণের সঙ্গে আছি, আমরা জনগণের সঙ্গেই থাকব এবং জনগণকে নিয়েই রাজনীতি করব। আমি স্পষ্ট করে বলছি, বিএনপি টাকা-পয়সা, বিত্ত-বৈভবের জন্য রাজনীতি করে না, বিএনপি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে না। আগামীতেও এভাবেই আন্দোলন চলবে, আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করব এবং এদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে গণতন্ত্রের বিষয়ে যা চাই তা বলব।