বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন সরকারকে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ক্ষেত্রে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।
দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে রিজার্ভ, রেমিটেন্স, রপ্তানি আয় ছাড়াও রাজস্ব ও ব্যাংকিং খাত নিয়ে যে ভয়াবহ উদ্বে”গজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হবে বলে আশঙ্কা অনেকের মধ্যেই রয়েছে।
অর্থনীতিবিদ ডঃ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এবং আহসান এইচ মনসুর দুজনেই বলেছেন যে অর্থনীতিকে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে আসা নতুন সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে। তবে ‘নির্বাচনী নীতি-নৈতিকতায় দুর্বল’ সরকারের পক্ষে এটা সহজ হবে না।
অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “এখন যেহেতু আর বিশেষ কোন নীতি সংস্কার হবে না, তাই নির্বাচনের পর দ্রব্যমূল্য, মুদ্রা বিনিময় হার ও ব্যাংক ঋণের সুদের হারে মনোযোগ দিতে হবে। আর খেয়াল রাখতে হবে ব্যাংক বা কোন খাতে যেন কাঠামোগত সংকট না হয়। আবার বৈদেশিক দায় দেনা পরিশোধের ক্ষেত্রেও যেন কোন সমস্যা তৈরি না হয়।”
আর আহসান এইচ মনসুর বলছেন, নতুন সরকারকে আর্থিক খাতে সুশাসন আনার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে এবং অর্থ আকৃষ্ট করতে বর্তমান বাজেটের আকার কমপক্ষে এক লাখ কোটি টাকা কমিয়ে আনতে হবে।
প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরের ৭৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট পাস হয় চলতি বছরের জুনে।
কিন্তু নানা কারণে অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও ডলারের বাজারের অস্থিতিশীলতা কমানো যাচ্ছে না।
এর ফলে বছরজুড়ে মূল্যস্ফীতি নয় শতাংশের বেশি, দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় জনজীবনে দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
অন্যদিকে রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে, রপ্তানি বাণিজ্যে প্রবৃদ্ধি নেই, রিজার্ভ বাঁচাতে আমদানি ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
আহসান এইচ মনসুর বলেছেন যে এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য নতুন সরকারকে দ্রুত কিছু স্বল্প ও মধ্যমেয়াদী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে, তবে এর জন্য অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি রাজনৈতিকভাবে বিচক্ষণ অর্থনৈতিক দলের প্রয়োজন হবে।
তার মতে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার তার অনুপস্থিতির কারণে অর্থনীতিকে ভয়া”বহ সংকটে পড়া ঠেকাতে পারেনি।
বিএনপিসহ অধিকাংশ বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগই আবার নতুন সরকারের নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছে। ফলে কার্যত বর্তমান ক্ষমতাসীন নীতিনির্ধারকরাই নতুন সরকারে রয়েছেন।