নির্বাচনের নামে দুই হাজার কোটি টাকা খরচ না করে মন্ত্রী-এমপিদের নাম ঘোষণার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, নির্বাচনে দুই হাজার কোটি টাকা খরচ করার মানে কী? অমুক এমপি, অমুক মন্ত্রী ঘোষণা করলেই হবে।
শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে বিজয় দিবস উপলক্ষে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মিছিল শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বাংলাদেশের কোনো বিরোধী দল অংশ নিচ্ছে না। যারা এই নির্বাচনী খেলায় যোগ দিয়েছেন তারা সবাই ক্ষমতাসীন দলের নেতার পা ছুঁয়ে তার আশীর্বাদ নিয়ে নির্বাচনে নামছেন। পত্রপত্রিকায় ছাপা হচ্ছে কোন দল কতটি আসন পাবে তা সবাই জানে। কোন নেতা কোন এলাকা থেকে নির্বাচন করবেন। এটা কোন নির্বাচন? প্রতিযোগীদের মধ্য থেকে নির্বাচন হবে। এটা এখন কোন ব্যাপার না. কারণ মানুষ এই নির্বাচন চায় না। এই নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে যাবে না। ভোটার পেতে নিজ দলের লোকজনকে এখন ডামি প্রার্থী করা হচ্ছে। মানুষ বলছে, একবার নির্বাচন হলে প্রার্থী ছিল না, আরেকবার রাতে নির্বাচন হয়েছে এবং এবারের নির্বাচন হয়েছে ডামি নির্বাচন।
অর্থ অপচয় না করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “ডামি নির্বাচনের জন্য সাত লাখ ৫০ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োগ করা হবে।” কে কোন আসনে নির্বাচিত হয়েছেন তা ঘোষণা করা হয়। এই খেলার কি প্রয়োজন? এত মানুষের কষ্টের কি দরকার? যে দেশে জনগণ এত কষ্টে আছে, সাধারণ মানুষ দুবেলা খেতে পারে না, সেখানে ২০০০ কোটি টাকা খরচ করে এই নির্বাচনের মানে কী?
আন্দোলন অব্যাহত রাখতে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, নির্বাচন নামক এই তামাশার জন্য আমরা দেশ স্বাধীন করিনি। আমরা চাই বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক। নির্বাচনে সবাই অংশগ্রহণ করবে, প্রতিযোগিতা থাকবে। জনগণ যাকে খুশি তাকে নির্বাচিত করবে। আমরা সেই নির্বাচনে লড়ছি। এই লড়াইয়ে আমাদের অনেক কমরেড জীবন দিয়েছেন, অনেকে কষ্ট পেয়েছেন। আমরা তাদের রক্তের সাথে, কষ্টের সাথে বেঈমান হব না। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নয়।
দেশকে লুটপাটের রাজ্যে পরিণত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য। মঈন খান বলেন, ১৯৭১ সালে গণতন্ত্রের জয় হয়েছিল। সেই গণতন্ত্রকে হত্যা করে আজ আওয়ামী লীগ সরকার বিজয় দিবসকে পরাজয় দিবসে পরিণত করেছে। আমরা পাকিস্তানের ২২ টি পরিবার থেকে পরিত্রাণ পেতে চেয়েছিলাম, যারা সমস্ত বৈদেশিক মুদ্রা চুরি করে পাকিস্তানকে একটি লুটেরা দেশে পরিণত করেছিল। আমাদের স্বপ্ন ছিল একটি স্বাধীন দেশ, যেখানে মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা থাকবে। আজ আওয়ামী লীগ সরকার ২২ পরিবারের পরিবর্তে ২২০ ধনী পরিবার দিয়ে বাংলাদেশের সমস্ত সম্পদ লুট করেছে।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোট চুরির অভিযোগ তুলে মঈন খান বলেন, সরকারের যদি সৎ সাহস থাকে, তারা যদি মনে করে বাংলাদেশকে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দিয়েছে, তাহলে তাদের উচিত ক্ষমতা ছেড়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে আসা। মানুষ তাদের ইচ্ছামত ভোট দেয়। দেখা যাক কে জেতে। অর্থের বিনিময়ে, আসন ভাগাভাগি করে তারা ভুয়া সংসদ নির্বাচনের পথে। এটা নির্বাচন হতে পারে না। পৃথিবীর কোনো দেশে এমন নির্বাচন হয় না। বিশ্বের যেসব দেশ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না তারাও বাংলাদেশের মতো নির্লজ্জভাবে ভোট চুরি করে না।
বিএনপি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের কল্যাণের জন্য, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতি করে। যা সত্য তা আজ মানুষের সামনে তুলে ধরছি। বাংলাদেশ পরিচালনার ক্ষমতা কাকে দেওয়া হবে তা জনগণই ঠিক করবে।