আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আরো এক বছরেরও বেশি সময় বাকি রয়েছে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময় বাকি থাকলেও আ.লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী জনসভায় অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী আগামী ২৩ শে অক্টোবর ঢাকা জেলা আ.লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণায় নামছেন এবং সেখানে তিনি সশরীরে উপস্থিত থেকে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু করবেন। বিএনপি’র সমাবেশে বিপুল নেতাকর্মীদের উপস্থিতি পর থেকেই আ.লীগের মাঝেও শুরু হয়েছে দলীয় ও সাংগঠনিক পরিকল্পনা এবং সেইসাথে দলটির জনপ্রিয়তা জানান দিতে নির্বাচনী সমাবেশ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগ সম্মেলন বলা হলেও, মূলত এর মধ্যে দিয়েই নির্বাচনী প্রচারে নামছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সভা ২৩ শে অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠক থেকে দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলনসহ একগুচ্ছ কর্মসূচি আসছে। এই কর্মসূচির মধ্যে, আওয়ামী লীগ রাজধানীর আশেপাশের জেলাগুলিতে বড় ধরনের সমাবেশ করবে। এর জন্য, ঢাকার আশেপাশের জেলাগুলিকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশ দেওয়া হবে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিএনপি প্রোগ্রামের সাথে আবদ্ধ না হলেও সাংগঠনিক ক্ষমতা শক্তি জানান দিতে চান। দলীয় নেতাদের বেশিরভাগই গত রাতে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার ধনমন্ডি অফিসে অনির্ধারিত বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সভায় উপস্থিত অনেক নেতা এ জাতীয় তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট এবিএম রিয়াজুল কবির কাওছার, সাহাবুদ্দিন ফরাজী, আনিসুর রহমান, সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম প্রমুখ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র অনুযায়ী জানা গিয়েছে, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের তিন বছরের সম্মেলন ২৩ শে অক্টোবর শের-ই-বাংলানগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কেন্দ্রে (প্রাক্তন বাণিজ্য মেলা গ্রাউন্ডস) অনুষ্ঠিত হবে। ওই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সবাইকে জেলা সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, বিএনপি রাজধানীসহ দেশজুড়ে সমাবেশ করছে। আমাদের সাংগঠনিক শক্তিকেও জানান দিতে হবে। জেলা সম্মেলন হলেও সেখানে লাখো জনতার উপস্থিতিতে নির্বাচনী জনসভায় রূপ দেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়। দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকী থাকলেও এখন থেকেই নির্বাচনী প্রচারের মাঠে নামছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের পাশাপাশি সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলনে তিনি যোগ দেবেন।
তিনি আগামী বছরের জানুয়ারিতে দু-চারটি বিভাগীয় সমাবেশে যোগ ডিবেন এমন সম্ভাবনাও রয়েছে। ইতোমধ্যে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় যেসব জেলায় তিনি সফর করেননি, সেগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে বিভাগীয় ও জেলা নির্বাচনী জনসভার তারিখ প্রস্তুত করা হবে।
গত রাতে বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, “২৩ শে অক্টোবর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হবে এবং দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন। কার্যনির্বাহী সভা থেকে অনেক সিদ্ধান্ত আসবে।” তিনি আরো বলেন,“ আওয়ামী লীগ সম্মেলন মানে উত্সব। নেতাদের মহামিলন। আমি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ সম্মেলনে সর্বাধিক উপস্থিতি আশা করি। ”
প্রধানমন্ত্রী জেলা সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচনের জনসভা শুরু করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা ভোটের বিষয় নিয়ে সারা বছর কাজ করি। দলের সভাপতি যে জনসভায় থাকবেন সেখানে জনসমুদ্র হবে। আর সামনে নির্বাচন। সে কারণে ভোট তো চাইতেই পারেন।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতা বলেন যে, বিএনপি সমাবেশ ও আন্দোলন অঘোষিত বৈঠকে আলোচনা করা হয়েছিল। তবে, আওয়ামী লীগের নীতি হ’ল আওয়ামী লীগ ডেমোক্র্যাটিক প্রোগ্রামকে বাধা দেবে না। বিএনপি সমাবেশ করছে সেই প্রেক্ষিটে আওয়ামী লীগও একটি সমাবেশ করবে। প্রথমত, দলটি গাজিপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ঙ্গঞ্জ, ঢাকায় একটি করে সমাবেশ করবে। এর পরে, সমস্ত বিভাগ এবং জেলাগুলিতে সাংগঠনিক কার্যক্রম বাড়ানো হবে। গতকালের বৈঠকে এই বিষয়টি জোর দেওয়া হয়েছিল।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সচিব পানিরুজ্জামান তরুণ দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, “আমরা ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ সম্মেলনে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতি চেয়েছিলাম।” প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। আমরা ২৫ অক্টোবর জেলা সম্মেলনেও নেতাদের এবং কর্মীদের উপস্থিতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি জানান দিতে চাই।
বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি ইতিমধ্যে দুটি সমাবেশ করেছে-একটি চট্টগ্রামে এবং অন্যটি ময়মনসিংহে। তাদের সমাবেশে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল নজরে পড়ার মতো এবং যেটা নিয়ে আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইতিবাচক কথাও বলেছেন। এর পরপরই আ.লীগ অনির্ধারিত বৈঠকের মাধ্যমে ঢাকায় এবং এর আশপাশের জেলাগুলোতে সমাবেশ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। প্রকৃতপক্ষে, বিএনপির সমাবেশের পরিপ্রেক্ষিতে আ.লীগ সমাবেশের মাধ্যমে নিজেদের সাংগঠনিক ক্ষমতা বিষয়ে জানান দিতে চায়।