দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আগামী ২৯ ডিসেম্বর থেকে মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী। সোমবার রাতে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
এর আগে আসন্ন নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ সন্ধ্যায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ওয়াকার-উজ-জামান।
আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ অন্যান্য কমিশনাররা অংশ নেন। বৈঠকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে ২৯ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়।
তবে সামরিক বাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা (ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা) থাকবে কি থাকবে না সে বিষয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানা গেছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাত লাখ ৫০ হাজার সদস্য ভোটের মাঠে কাজ করবেন। এবার পাঁচ লাখ ১৬ হাজার আনসার, পুলিশ ও র্যাবের এক লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন, কোস্টগার্ডের দুই হাজার ৩৫০ জন এবং বিজিবির ৪৬ হাজার ৮৭৬ জন সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, নির্বাচন কমিশন যেভাবে চাইবে আমরা সশস্ত্র বাহিনীকে সহযোগিতা করব।
তিনি বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৫ হাজারের বেশি সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। এবার যদি বেশি প্রয়োজন হয়, সেভাবেই মোতায়েন করা হবে। অবশ্যই সব সময় প্রস্তুতি আছে। গতবার তারা ৩৮৮ উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেছিল।’
পিএসও বলেন, ‘তারা (ইসি) চাচ্ছে, সেনা মোতায়েন হোক।
কিভাবে মোতায়েন হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা রাষ্ট্রপতির কাছে রিকমেন্ডেশন করবে। রাষ্ট্রপতি যদি সিদ্ধান্ত দেন, তবে অবশ্যই সেনা মোতায়েন হবে। তারা যেভাবে সহায়তা চাইবে, সেভাবেই আমরা সহায়তা করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা (ইসি) চায় সুষ্ঠু, সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন। এটা নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই। তারা খুব সিরিয়াস। আমরা যদি সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করি, আমাদের অবশ্যই সহায়তা করতে হবে। রাষ্ট্রপতি অনুমতি দিলে আমরা অতীতের মতো মোতায়েন করব।’
সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নির্বাচন কমিশন সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, জননিরাপত্তা বিভাগ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনী কীভাবে সহায়তা করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে মোতায়েন করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের আগে-পরে মিলিয়ে ১০ দিন বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দেওয়ার জন্য ‘এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ বিধানের অধীনে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হয়। ২০১৮ সালে, ১১ তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০ শে ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের আগে এবং পরে ১০ দিনের জন্য বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য ‘এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ বিধানের অধীনে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় সেনা মোতায়েন ছিল। ওই নির্বাচনে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিচারিক ক্ষমতা (ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা) দিয়ে সেনা মোতায়েন করতে চেয়েছিল, কিন্তু তা হয়নি। এবারও সশস্ত্র বাহিনী ‘এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় থাকবে।