দিন যতই পার হচ্ছে ততই ঘনিয়ে আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর এই নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজের দলকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা করছে। এদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে নির্বাচন নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা, কারণ নির্বাচনী সরকার ব্যবস্থা কিভাবে হবে? কিভাবে নির্বাচন পরিচালিত হবে? নির্বাচন বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের অধীনে হবে বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হবে কিনা? সে বিষয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিরোধী দল বিএনপি। তারা নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে অনড় থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কোনো দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও ক্ষমতাসীন দল সংবিধানের বাইরে কোনো পদক্ষেপ নেবে না।
দলের প্রত্যাশা: দলের নেতা-কর্মীদের শক্তিশালী রাখতে বিএনপি দাবি-দাওয়ায় অনড় থাকলেও সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। কারণ ২০১৪ সালে যে ভুল করেছিল তার মাশুল এখনও দলকে দিতে হচ্ছে। তাই তারা সেই ভুল পথে পা বাড়াবে না। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা বলছেন, সংবিধানের মধ্যে থেকে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের দাবি মেনে নিতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বা সুযোগ দেওয়া হবে। সংবিধানের বাইরের কোনো দাবি মানা হবে না। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করবে, সরকার শুধু সহায়তা করবে।
এদিকে নির্বাচনে বিদেশি কূটনীতিকদের কোনো প্রভাব যাতে না পড়ে সে বিষয়েও কৌশলী হবে আওয়ামী লীগ সরকার। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক দেশের একটি গনমাধ্যমকে বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। সরকার নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহায়তা দেবে। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার উপায় নেই। শুধু আওয়ামী লীগ কেন, কোনো দলেরই সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে বিএনপি সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নেবে বলে আমি প্রত্যাশা করি।
সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি নেতারা আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার দাবি জানিয়ে আসছেন, তারা বলছেন, বিএনপি আওয়ামী লীগের মিষ্টি কথার ফাঁদে পা দেবে না। দাবি পূরণ না হলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। তবে বিএনপির দাবি বা বক্তব্য নিয়ে চিন্তিত নন আওয়ামী লীগ নেতারা। সঠিক সময় হলেই নির্বাচনে আসবে বিএনপি। আর যেহেতু নির্বাচনের অনেক সময় বাকি, তাই এখনই বিএনপিকে নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রবর্তিত বিধান অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় বর্তমান সরকারের অধীনেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তদনুসারে, ২০১৩ সালের ডিসেম্বর বা ২০২৪ সালের জানুয়ারীতে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সেই হিসাবে, নির্বাচনের এখনও ১৫ মাস বাকি। বর্তমান সরকারের অধীনেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
ক্ষমতাসীন দল কোনোভাবেই সংবিধানের বাইরে যেতে নারাজ। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, “সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে স্বচ্ছভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। সরকার সাহায্য করবে। এখন বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিদিন নির্বাচন নিয়ে কথা বলার অর্থ হচ্ছে, তারা রাজনৈতিক কোনো ইস্যু না পেয়ে রাজনীতির মাঠে টিকে থাকতে ইস্যু বানিয়ে কথাবার্তা বলে। বিদেশিদের কাছে ধর্না দেওয়া বিএনপির রাজনৈতিক দীনতার বহিঃপ্রকাশ। নির্বাচনের সময় সরকারকে নিয়ে বিএনপি যতই মাঠ গরম করুক না কেন। ,তারা যথাসময়ে নির্বাচনে আসবে। নির্বাচনে না আসার ভুলের পুনরাবৃত্তি করবে না।তারা বলছে সমঝোতা হিসেবে নির্বাচনে না আসার কথা। বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে।
সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তন হবে নির্বাচনের মাধ্যমে। এ ছাড়া সরকার পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগকে সরকার পতনের হু”মকি দিয়ে কোনো লাভ নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, সংবিধানের আলোকেই আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি অনেক কথা বলে। তারা নির্বাচনে আসবে না, আবার নির্বাচনে আসার নামে মনোনয়ন বাণিজ্য করবে, এটা তাদের দলের অতীত কর্মকাণ্ড। বিএনপি নেতাদের হুমকি ও রাজপথে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না এসে ২০১৪ সালের মতো জ্বালাও পোড়াও যদি করতে চায় তাহলে সেটা কঠোর হস্তে প্রতিহত করা হবে।
উল্লেখ্য, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ নাজুক অবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে। দেশে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়ায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে জনমনে যে বিরূপতা সৃষ্টি হচ্ছে তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রাজনীতির উপর। কারণ বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক অবস্থা তাতে কিছুটা নাজুক পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে জনগণ একসময় আ.লীগকে অক্ষম সরকার হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারে।