আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচন কমিশন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে এবং সে বিষয়ে ইসি সাবেক এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে বলেন, নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় যারা থাকবেন তারা কোনরকম পক্ষপাতমূলক আচরণ করবেন না। তিনি এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, মন্ত্রীরা কোনো দলের নয়, সরকারের মন্ত্রী হিসেবে কাজ করবেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইসির কোনো বিষয় নয়, নির্বাচনকালীন যে সরকার থাকবে সেটিই নির্বাচনকালীন সরকার।
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন সিইসি। এর আগে সিইসির সঙ্গে বৈঠক করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সভা শেষে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকতে হবে। এ বিষয়ে আমরা কিছু পরামর্শ দিয়েছি।
নির্বাচনকালীন সরকারের প্রশ্নে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার একটি সাংবিধানিক বিষয়। রাজনৈতিক নেতারা যদি একমত তারা সেটা দেখবেন। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বর্তমানে যে আইন আছে, সেটাই নির্বাচনকালীন সরকার।’
সিইসি বলেন, “সব দেশে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়। সরকার ও দল আলাদা জিনিস। সরকার যেই হোক না কেন, তারা শপথ নিয়েছেন, সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবেন, সমান আচরণ করবেন, পক্ষপাতদুষ্ট হবেন না।” শপথে উনারা বলেন নাই যে আমরা আমাদের দলকে আগামীতে আরও বেশি করে সহযোগিতা করবো। স্বভাবতই উনারা বলেন না। আমার বিশ্বাস উনারা উনাদের শপথটা জানেন।’
কাজী আউয়াল বলেন, “নির্বাচনের সময় বর্তমান সরকারের স্টাইল পরিবর্তন হলে সরকার নীতিগতভাবে কাজ করবে না। সরকার নির্বাচনী কাজে ইসিকে সহযোগিতা করতে বাধ্য। সহায়তা মূলত পুলিশ প্রশাসন ও জনপ্রশাসন আর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কেন্দ্রিক।’
ইসি আয়োজিত সংলাপে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের পরামর্শের কথা উল্লেখ করে সিইসি বলেন, প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে না এলে নির্বাচনের গুরুত্ব, সেটা স্বচ্ছ হোক বা অস্বচ্ছ, অনেকটাই কমে যাবে। ইসি একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়।”
তিনি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদেরও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসার আহ্বান জানান।
সিইসি বলেন, “পুলিশ প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। সহিং/”সতায় বিঘ্নিত হলে নির্বাচন বাতিল করার ক্ষমতা ইসির আছে। বড় ধরনের স’হিং’/সতা হলে ইসি নির্বাচন বাতিল করতে পারবে।”
ইসি সাংসদদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কিনা জানতে চাইলে সিইসি বলেন, “আমি এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব কিনা জানি না। বিষয়টি আপেক্ষিক। ইসি চেষ্টা করবে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, সুশীল সমাজের সঙ্গে ইসির বৈঠকের ফলোআপ হিসেবে তারা আবার বৈঠক করেছেন। তারা চায় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকতে হবে। এ বিষয়ে তারা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
“বর্তমানে, সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরা অবস্থান থেকে বেছে নিতে পারেন,” তিনি বলেন। পরিবর্তনের সুযোগ নেওয়া হবে কি না, তা বিবেচনা করবে ইসি।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্বাচনী সরকার কী হবে, এর চরিত্র কী হবে, আচরণ কী হবে, কাঠামো কী হবে এসব বিষয়ে তারা কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেননি। জনগণ যেহেতু এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন, সেহেতু নির্বাচনকালীন সরকারের আচরণ কেমন হবে সে বিষয়ে ইসি সরকারকে তাদের পরামর্শ দিতে পারে। প্রয়োজনে আইনি সংস্কারের প্রস্তাব দিতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন পরিচালনা করা। তাই নিজেদের বিশ্লেষণে তারা যদি মনে করেন যে কোনো সাংবিধানিক বা আইনগত সংস্কার প্রয়োজন, তাহলে তারা সেই প্রস্তাব দিতে পারেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করবে কি না তা আরও বিবেচনার বিষয়।
নির্বাচনকালীন তথ্যপ্রবাহে যাতে কোনো বাধা না পড়ে সেজন্য গণমাধ্যম ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের অবাধে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ এবং গণমাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশের সুযোগ দেওয়ারও প্রস্তাব করেছে টিআইবি।
ইভিএম নিয়েও আলোচনা হয়েছে, ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তারা নিশ্চিত করেছেন যে ইভিএমে কোনো প্রযুক্তিগত ত্রুটি নেই এবং স্টেকহোল্ডারদের কাছে গ্রহণযোগ্য।
নির্বাচন কমিশন সকল ধরনের ব্যবস্থা নিলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা সে বিষয়ে সংশয় দূর করতে পারছে না। যেহেতু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকবেন সেহেতু তিনি মন্ত্রী এবং নির্বাচনকালীন সরকারের নিকট থেকে নিরপেক্ষ করেন নিরপেক্ষতা আশা করেন। তবে যাতে নির্বাচন প্রশ্নবি/’দ্ধ হতে না পারে সে বিষয়ে কাজ করবে নির্বাচন কমিশন এমন আশ্বাস দিয়েছেন।