বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের প্রধান খাদ্য তালিকায় রয়েছে ভাত। তবে সম্প্রতি বেশ কয়েক দফা চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে বাংলাদেশে এক অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। বিশেষ করে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সমাজের খেটে খাওয়া দিনমুজর মানুষ গুলো বেশি বিপাকে পড়েছে। তবে এই সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিশেষ প্রস্তাব জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে শুল্ক কমিয়ে বেসরকারিভাবে চিকন চাল আমদানির প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়েছে। বুধবার (১৯ জানুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানানো হয়। জেলা প্রশাসকরা কৃষি মন্ত্রণালয় ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি কার্য অধিবেশন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। গত বছরের মতো এবারও চালের দাম বাড়ছে। মোটা চালের দাম কেজিতে ৫০ টাকায় পৌঁছেছে। গত বছর সরকার চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে শুল্ক কমিয়ে চাল আমদানি করে। চাল আমদানিতে শুল্ক কমানোর অনুরোধ জানিয়ে গত বছরের ৬ জুলাই এনবিআরকে চিঠি দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। এরপর গত ১২ আগস্ট চালের আমদানি শুল্ক কমানোর প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চালের আমদানি শুল্ক ৬২.৫% থেকে কমিয়ে ২৫% করেছে। গত বছরের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত এই সুবিধা কার্যকর ছিল।
গত বছরের ১৭ থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত খাদ্য মন্ত্রণালয় মোট ৪১৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১৬ লাখ ৯৩ হাজার টন সিদ্ধ ও ভাজা চাল আমদানির অনুমতি দেয়। কিন্তু মাত্র ৩ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলেছেন। এ জন্য জেলা প্রশাসকদের কোনো নির্দেশনা আছে কি না জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “নির্দেশ আছে। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, আমাদের খাদ্য মজুদ আছে। ওএমএস যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা হয় সে বিষয়ে ডিসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের মনিটরিং টিমের মাধ্যমে মনিটরিং করা হচ্ছে। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে মনিটরিং টিম গঠন করা হবে। কোনো মজুতদার মজুদ করে থাকলে তাও চিঠি দিয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে তাদের মোবাইল কোর্টে পাঠাতে এবং মজুদ থাকলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছি। আমরা মন্ত্রণালয়ে একটি টাস্কফোর্স ও একটি কন্ট্রোল রুমও স্থাপন করেছি। ‘
“আমরা ফাইলটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছি। আরও ট্যাক্স কমিয়ে কিছু সূক্ষ্ম চাল ব্যক্তিগতভাবে আমদানি করা যায় কি না। আমরা এটি নিয়ে কথা বলেছি এবং ফাইলটি পাঠিয়েছি। কিন্তু এটা ঠিক, আমরা নিশ্চিত যে আমাদের নজরদারি করা হচ্ছে। যদি আপনি (সাংবাদিকরা)ও মনিটরিং করছেন, কোনো অবৈধ মজুদের তথ্য আমাদের দিলে আমরা সেখানে হানা দিতে পারি, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার মতো অবস্থায় নেই,’ বলেন সাধন চন্দ্র মজুমদার।খাদ্যমন্ত্রীও বৃহস্পতিবার থেকে উপজেলা পর্যায়ে ১ হাজার ৭৬০ জন ডিলারের মাধ্যমে ওএমএসে চাল ও আটা বিক্রি শুরু হবে।
চালের উৎপাদন বাংলাদেশে অধিক মাত্রায় হওয়া স্বত্তেও প্রায় সময় নানা কারনে সংকট দেখা দিচ্ছে। এমনকি সংকটের সূত্র ধরে বৃদ্ধি পাচ্ছে দাম। এই সংকট সৃষ্টির ক্ষেত্রে কিছু অসাধু মিল মালিকরাও জড়িত। তবে বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী এই সকল অনিয়মকারীদের শনাক্ত করে শাস্তির আতায় আনতে নিরলস ভাবে কাজ করছে দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিরা।