সম্প্রতি তারকাদের এমন কিছু কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে দেখা যাচ্ছে যা নিয়ে অনেকেই আঙুল তুলছে তাদের দিকে।তারা লোক আবেগ দেখানোর নামে এমন সব কাণ্ড ঘটাচ্ছে যা বিভিন্ন মহলে হাসির পাত্রে পরিণত হচ্ছে। তাদের এসব দেখে রীতি মতো আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন মিলি সুলতানা হুবহু পাঠকদের জন্য নিচে দেওয়া হলো।
প্রযুক্তির উৎকর্ষের সাথে মেকআপ শিল্পেরও উন্নতি হয়েছে। যেমন ধরুন, আগে চোখে যখন ল্যাকমে কাজল লাগানো হত চোখের পানি অথবা ঘামে ল্যাকমে কাজল লেপ্টে যেত। এখন ল্যাকমে কাজল ডাউন মার্কেটে চলে গেছে। এখন বাজারে বেরিয়েছে ওয়াটার প্রুফ এবং ২৪ ঘন্টা লাস্টিং আইলাইনার। ওই কাজল চোখের জল বা ঘামে লেপ্টাবেনা। বাজারে আছে মেকআপ সেটিংস স্প্রে। মুখের মেকাপের উপর স্প্রে করে দিলেই মেকাপ পার্মানেন্ট ওই ইভেন্টের জন্য। লিপস্টিকের বেলায়ও তাই। আমাদের নিপূণ আক্তার অঞ্জনা রহমানরাও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্য সিনেম্যাটিক ক্রাইং ইভেন্টে অংশ নিয়েছেন। দুষ্টুলোকেরা বলছে, সিনেমা দেখা শেষ করে নিপূণ আক্তার পার্স থেকে গ্লিসারিনের ড্রপ বের করে চোখে কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন ঢেলে দিয়ে তারপর ক্যামেরার সামনে এসেছেন। তবে অভিনেত্রীদের কান্নার অভিনয়টা বিনোদনে ভরা ছিল। নিজেদের অজান্তে এরা ভার্চুয়াল জগতকে কতটা সমৃদ্ধ করছেন তাদের কান্নাকাটির সুপার মেলোড্রামাটিক এক্সপ্রেশন দেখলে বোঝা যায়। এরা নিজেদের ওভার স্মার্ট ভেবে ভুল করছেন। পাবলিক এসব নটঙ্গীদের দুরভিসন্ধি বোঝে। আমরা জানি নটরাজ নটরানীরা হাইব্রিড প্রজাতি থেকে নির্গত হয়েছে। বহু ঘাম ঝরিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যার সাথে ছবি তোলার সুযোগ পায়। তারপর সেই ছবি তাদের ফেসবুকের অস্বাস্থ্যকর স্যাঁতস্যাঁতে দরোজা জানালায় ঝুলিয়ে দেয়। এটা হচ্ছে নটরাজ নটরানীদের সুবিধা বাগানোর স্পেশাল ট্রিকস।
বঙ্গবন্ধুর জন্য কাঁদতে কোনো আনুষ্ঠানিকতার দরকার হয়না। ব্যয়বহুল জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মাধ্যমে কয়েকশো প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কাঁধে ভর করে ফ্ল্যাশলাইটের মুহুর্মুহু অত্যাচারে হাইব্রিড প্রাণীকূলের অসহনীয় ফটোশ্যুট আর তামাশাভরা ডেইলি সোপ “টু বি কন্টিনিউ” করছে। আমার নানীজানের নাম ছিল সালেমা খাতুন। নানীর মুখ থেকে তাঁর জীবন পাঁচালীর প্রচুর গল্প শুনতাম। নানী যৌবনকালে অত্যন্ত কর্মঠ নারী ছিলেন। গায়ের রঙ কালো। লম্বায় ছিলেন পাঁচফুট ছয় ইঞ্চি। গায়ের রঙ হলেও নানীর চেহারা ছিল রূপ-লাবণ্যেভরা। নানাজান ছিলেন ধবধবে ফর্সা। ছ’ফুট লম্বা সুদর্শন পুরুষ। নানীর গায়ের রঙ কালো ছিল বলে নানা বেশি ভালোবাসতেন নানীকে। আমার নানীকে নাকি নানা সবসময় বলতেন, “মোবারকের মা, আপনি আমার ঘরের ভাগ্যলক্ষ্মী।” নানা নানী পরস্পরকে “আপনি” বলে সম্বোধন করতেন। কখনো নাম ধরে ডাকতেন না। এক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের নাম ব্যবহার করতেন। যেমন, মোবারক ছিলেন উনাদের বড় সন্তান। ছয় সন্তানকে একাই লালন পালন করেছেন। বিশাল বাড়িঘর একাই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করতেন। কারো সাহায্য নিতেন না। গৃহস্থালি কাজে সহযোগিতা করার জন্য কাউকে ডাকতেন না। মাটির চারচোখা চুলায় মণে মণে ধান ভাপাতেন করতেন। তারপর উঠোনে রোদে সেই ধান শুকাতেন। নিজের পায়ে বিশাল উঠোনে ছড়িয়ে দেওয়া সেই ধান পা দিয়ে ঘাটতেন। নানী আমার রোদে ধান শুকিয়ে সেই ধান ভানতেন ঢেঁকিতে। হলুদ শুকনো মরিচ গুঁড়ো করতেন ঢেঁকিতে। তারপর চালুনি গুঁড়ো করা হলুদ মরিচ চেলে রোদে শুকাতে দিতেন। রোদে শুকানোর পর কাঁচের বয়ামে ঢুকাতেন।
আপনাদের মনে হতে পারে যে,এই প্রসঙ্গে আমার নানীজানের গল্প কেন করলাম? আমার নানী একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সারভাইবার। আমার মা বাবা ভাইদের সাথে পাকিস্তানি হানাদারদের ভয়ে দিগ্বিদিক ছুটে পালিয়েছেন। পঁচা ডোবার পানিতে ডুব দিয়ে দম আটকে ধরে রেখেছেন সশস্ত্র হানাদার বাহিনীর ভয়ে। স্বাধীনতার রূপকার বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসতেন আমার পরিবার। ৭৫’ এ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার খবর শুনে আর্তনাদ করেছেন নানী। শোকের মাতম পড়ে গিয়েছিল আমাদের পরিবারে। শুধু আমার পরিবারে নয় বাংলার ঘরে ঘরে ছিল শোকের মাতম। নানীকে দেখতাম বঙ্গবন্ধুর প্রসঙ্গ এলেই কাঁদতেন। আসলে বাংলার মানুষ জাতির জনকের জন্য অন্তর থেকেই কাঁদে। তারা শো অফ করেনা। কান্না আসে ব্যথাতুর হৃদয়ের গভীর থেকে। কিন্তু আমাদের চলচিত্রের অভিনেতা অভিনেত্রীদের কি যে হল, তারা জাতির জনকের নাম মুখে নিতে গিয়েও শো অফ করছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বানানো বায়ো ফিল্ম “মুজিব একটি জাতির রূপকার” দেখে এসে আমাদের নিপূণ আক্তার অঞ্জনা রহমানরা কান্নার প্রতিযোগিতামূলক অভিনয়ে অংশ নিয়েছেন। আবার বলছি, বঙ্গবন্ধুর জন্য দু’ফোঁটা চোখের জল ফেলতে কৃত্রিম আবেগ এবং মেকআপ ফ্যাক্টরির শরণাপন্ন হওয়ার দরকার নেই। বেস্ট পার্ট হচ্ছে, নেত্রী এসব হাইব্রিডদের সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত আছেন। বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধার নামে শো অফ করে বেড়াচ্ছে একটি স্বার্থান্বেষী গোত্র। আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুর প্রতি অতল শ্রদ্ধা বুকের গভীরে বাস করে। আর হ্যাঁ, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে “মুজিব একটি জাতির রূপকার” আমি ডেফিনিটলি দেখবো আমার ছেলেমেয়েকে নিয়ে।