একের পর এক অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে বাংলাদেশে।সম্প্রতি বুয়েটের ছাত্র ফারদিনের নিথর দেহ মিলেছে শীতলক্ষ্যা নদীতে। আর এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার শোনা গেলো যত্ন এক দুঃসংবাদ। এবার বুড়িগঙ্গা নদীতে ভেসে উঠেছে আওয়ামীলীগ নেতা দুরন্তর নিথর দেহ।আর এই ঘটনায় নতুন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে সবখানে। এ নিয়ে এবার একটি লেখনী লিখেছেন মাহবুব মোর্শেদ। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তার সেই লেখনী তুলে ধরা হলো হুবহু :-
আমরা যখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকি তার আগেই বের হয়ে গেছে দুরন্তদাদের ব্যাচ। ওনারা ১৯ তম ব্যাচ। আমরা যখন ক্লাস শুরু করি তখন ২১ তম ব্যাচ ক্যাম্পাস ছাড়ছে। দুরন্তদার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু ক্যাম্পাস ছাড়লেও ছাত্রলীগের পুরনো নেতাদের মধ্যে দুরন্তদা, মহিবুল্লাহ ভাই ও জামান ভাই বহুদিন জাহাঙ্গীরনগরের মায়া ছাড়তে পারেননি। মহিবুল্লাহ ভাইয়ের সঙ্গে কখনো পরিচয় হয় নাই। তবে তাকে মাঝে মাঝে ক্যাম্পাসে আসতে দেখতাম। জামান ভাই হলের সুবাদে আমাদের নিকটজন ছিলেন। দুরন্তদার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন লেবু স্যার। শীতকালের সন্ধ্যা। লেবু স্যারের সঙ্গে কোনো একটা কাজে সম্ভবত সেলিম আল দীনের বাসায় যাচ্ছিলাম। ঐদিন আবার অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চলছিল হলগুলোতে। আমরা রেজিস্টার বিল্ডিং পার হতেই গাছের আড়াল থেকে দূরন্তদা লেবু স্যারকে ডাকলো। সেখানেই তার সঙ্গে পরিচয় হলো। ছাত্রলীগের ধর্ষক গ্রুপকে তাড়িয়ে কীভাবে নিজের অনুসারীদের ক্যাম্পাসে ঢোকাবেন সেটা নিয়ে কথা বলছিলেন দুরন্তদা। ১৯৯৯ সালে ওই পরিচয়ের পর যখনই তার সঙ্গে দেখা হতো তিনি আলাদা গুরুত্ব দিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলতেন। ক্যাম্পাস ছাড়ার পর মাঝে মাঝে ফোন দিতেন। সম্ভবত ২০০৭/৮ এর দিকে তিনি কৃষি বিষয়ক একটা পত্রিকা করার কথা চিন্তা করলেন। এটা নিয়ে আমার সঙ্গে কয়েকবার কথা হয়েছিল। কৃষি খামারের কাজও সেই সময় শুরু করেছেন বলে মনে পড়ে। অথবা শুরু করার চিন্তা করছিলেন। মনে আছে, তিনি কৃষি বিষয়ক একটা অনলাইন পত্রিকা খুলেছিলেন।
কৃষি খামার করার পর মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে বলতেন, তুমি একদিন আসো। একবার খামারটা দেখে যাও।
এত ক্ষীণ যোগাযোগের মধ্যেও দুরন্তদা কিভাবে আমাকে মনে রেখেছিলেন তা ভেবে আমি অবাক হয়ে যাই। তবে তার স্মৃতিশক্তি খুব প্রখর ছিল। পলিটিশিয়ান হিসেবে খুব সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু কেন যেন রাজনীতিতে খুব বেশি আগাতে পারলেন না দুরন্ত দা।
শেষ দেখা দেশ রূপান্তরে। বছর দুই আগে।
ওনারা চারুকলার শিল্পীদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ওপর একটা প্রদর্শনী করেছিলেন। বললেন, এই প্রদর্শনীটাকে ভাল করে কভারেজ দিতে।
দুরন্তদার সঙ্গে তুমুল আড্ডা হলো। অফিসের আড্ডার পর রাস্তায় গিয়ে চা সিগারেট খেতে লম্বা আড্ডা হলো।
সবই জাহাঙ্গীরনগরের গল্প।
আমি বললাম, দুরন্ত দা রাজনীতিতে কতদূর আগালেন।
উনি বললেন, রাজনীতি নিয়ে আর ভাবি না। কৃষি নিয়ে আছি। তুমি তো দেখতে গেলা না।
এরকম উচ্ছ্বল, লাইভ, সাহসী, মরমিয়া একজন মানুষ হারিয়ে গেল। নিথর দেহ নিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে দুরন্তদাকে ভেসে উঠতে হবে এ কথা আমরা কখনো কল্পনা করিনি।
স্বজনের লাশ নদীতে ভেসে উঠলে কেমন লাগে আজ কিছুটা বুঝতে পারছি।
আমরা আর কোনো নিথর দেহ নদীতে ভাসতে দেখতে চাই না।
আর অবশ্যই জানতে চাই, কেন দুরন্ত বিপ্লবকে নিথর দেহ হয়ে নদীতে ভাসতে হলো।
এ দিকে দুরন্তর এমন ঘটনায় হতাশ সকলেই। তার পরিবারে এখন বইছে শোকের ছায়া। এ নিয়ে তার বোন একটি স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছেন তার ভায়ের এমন পরিণতি হবার কথা ছিল না। জানা গেছে ইতিমধ্যেই পুলিশ এ ঘটনার তদন্ত শুরু করে দিয়েছে।