কলেজের অধ্যক্ষ প্রভাষকদের ভিতরে মনদ্বন্দ্বের কথা প্রায়ই শোনা যায়। কখনো কখনো চলে যায় অধ্যক্ষের যাবে প্রভাষকের পদত্যাগ। তবে সরাসরি মারপিটের মতো ঘটনা হয়তো শোনা যায় না বলতে গেলেই চলে। তবে এবার এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে যেখানে অধ্যক্ষ মারধোর করে পদত্যাগের পত্রে সই করিয়েছেন প্রভাষক কে। এরকম একটি ঘটনা ঘটেছে নওগাঁয় বরেন্দ্র ডিগ্রী কলেজ।
নওগাঁর পত্নীতলার চৌরাত-শিবপুর বরেন্দ্র ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ দীপক কুমার সরকারের বিরুদ্ধে কলেজের প্রভাষক আবদুর রশিদকে মারধর ও পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করার অভিযোগ উঠেছে।
কলেজের ইসলামী শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক আবদুর রশিদ অভিযোগ প্রমাণ করতে ঘটনার ১৫ মিনিটের একটি অডিও রেকর্ডিং উপস্থাপন করেন।
আব্দুর রশিদ বলেন, “রবিবার দুপুর ২টার দিকে কলেজের অধ্যক্ষ দীপক কুমার আমাকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে আমাকে অপমান করেন। আমার শরীরেও কয়েকবার আঘাত করেন।
‘এমন কিছু ঘটতে পারে, তাই প্রিন্সিপালের রুমে ঢোকার আগে মোবাইল ফোনের অডিও রেকর্ড অন করি। তিনি আমাকে মারধর করেন এবং মুক্তি পত্রে স্বাক্ষর করার পরপরই নওগাঁ ত্যাগের নির্দেশ দেন। ‘
রশিদ আরও বলেন, ‘পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে অভিযোগ দিলে অধ্যক্ষ তাকে হত্যার হুমকিও দেন। জীবনের ভয়ে আমি বিকেলে নওগাঁ ছেড়ে মানিকগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে যাই।
“আমি মৌখিকভাবে পত্নীতলার ইউএনও এবং থানার ওসিকে জানিয়েছি। তারা লিখিতভাবে অভিযোগ চেয়েছেন। দু-এক দিনের মধ্যে আমি ইউএনও, থানার চেয়ারম্যান ও কলেজ ব্যবস্থাপনার কাছে লিখিত অভিযোগ জানাব।” কমিটি।’
প্রভাষক আবদুর রশিদ বলেন, নওগাঁর নিরাপত্তা নিয়ে তিনি অত্যন্ত চিন্তিত।
রশিদের ফোনে রেকর্ড করা অডিওতে দেখা যাচ্ছে দীপক কুমার তাকে গালিগালাজ করছেন এবং তাকে দাবিত্যাগে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করছেন। ১৫ মিনিটের অডিও রেকর্ডিংয়ে শোনা যাচ্ছে অধ্যক্ষ তাকে চড় মারছেন।
চৌরাত-শিবপুর বরেন্দ্র ডিগ্রি কলেজ সূত্রে জানা গেছে, আব্দুর রশিদের বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে। তিনি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ৭ নভেম্বর, ২০১৫ তারিখে তৃতীয় ডিগ্রির শিক্ষক হিসেবে ইসলামী শিক্ষা বিভাগে যোগদান করেন। ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর মাউশির প্রকাশিত তালিকায় তৃতীয় ডিগ্রির শিক্ষক হিসেবে তার নাম রয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, আব্দুর রশিদ তৃতীয় ডিগ্রির শিক্ষক হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার পর দীপক কুমার তার জায়গায় অন্য একজনকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তাকে কলেজে যেতে নিষেধ করেন। গত বছরের ৯ ডিসেম্বর তিনি মাউশি মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তিনি অভিযোগের অনুলিপি কলেজের সভাপতি, ইউএনও ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে দীপক কুমার সরকার বলেন, “আব্দুর রশিদ পদত্যাগ করেছেন। দুপুরে অবশ্য আমাদের মধ্যে হালকা কথা হয়েছে। তাকে মারধর বা গালিগালাজ করা হয়নি।”
আবদুর রশিদের অভিযোগ, তাকে মারধর করে মুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়।
কলেজের সভাপতি ইউএনও লিটন সরকার বলেন, প্রভাষক আবদুর রশিদ আমাকে অপমানিত হওয়ার কথা মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইউএনও বলেন, এর আগেও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ করা হয়েছিল।
এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আগেও এমন অভিযোগ রয়েছে। লিখিত কোন অভিযোগ না পাওয়ায় তিনি কোনও ব্যবস্থা এখনও নিতে পারছে না প্রশাসন থেকে এমনটাই জানা গেছে। তবে এখন দেখার বিষয় পরবর্তীতে লাঞ্ছিত হওয়া সেই প্রভাষক কোন লিখিত আবেদন করে কিনা। যদি লিখিত আবেদন করে তখন হয়তো ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং জানা যাবে কি ধরনের পদক্ষেপ তার বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে।