সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ১৯৭১ সালের ভ’য়াবহ অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করতে গিয়ে কাঁদলেন একাধিকবার। গতকাল (শনিবার) অর্থাৎ ১৮ ডিসেম্বর রাতে ঐতিহ্যবাহী নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ৩৭ জন সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শামীম ওসমান স্মৃতিচারন করতে গিয়ে এই সব কথা বলেন। তিনি অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতি হিসেবে যোগ দিয়ে বলেন, আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে একটি মহল এখন ছোবল মরার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে শুধু আওয়ামী লীগের ক্ষতি হবে- তা নয়। সব দল, সব মানুষ এর কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের যারা রয়েছেন তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে দুই ভাগে। একটা গ্রুপ সম্মূখে থেকে যুদ্ধ করেছেন। আরেকটা গ্রুপ দেশ ভাগের পর থেকেই ২৪টা বছর ধরে সেই যু’দ্ধ সংগঠিত করেছেন। রাজনীতির প্রতিটি অঙ্ক আমি খুব ভালো করে বুঝি। পথটা এত সহজ ছিল না। তখন সরকারি দলও ক্ষমতায় ছিল না।
শামীম ওসমান বলেন, এখন যদি আবারো যু’দ্ধ হয়, কে করবে সেই যু’দ্ধ? এখানে যারা বসে আছেন, তাদের অনেকের মা-ই সম্ভ্রম হারিয়েছে, বাবা হারিয়েছে প্রাণ। এখন যে পরিস্থিতি- তারা যদি এসে বলে, স্বাধীনতার দরকার নাই, আমার মায়ের সম্ভ্রম ফিরিয়ে দাও, আমার বাবার প্রাণ ফিরিয়ে দাও। কী করবেন তখন? কিছু কি করার থাকবে?
তিনি বলেন, কার্ল হাইনরিশ মার্ক্স একটা কথা বলেছিল- হাজার হাজার গেরিলার থেকে, আদর্শবাদী গেরিলা একটা এলাকার জন্য একজনই যথেষ্ঠ। এবং সেটা আপনারা প্রমাণ করেছিলেন। পাক বাহিনীর মতো একটি দক্ষ বাহিনীর বিরুদ্ধে ল’ড়াই করে। কোন অ’/স্ত্র ছিল না, কোন প্রশিক্ষণ ছিল না। আমি আমার বাবাকে দেখেছি, মহিলাদেরও প্রশিক্ষণ দিতে। কীভাবে প্রলোভন দেখিয়ে একা ঘরে নিয়ে যাবে, গোলমরিচ চোখের মধ্যে দিয়ে তারপর ধারালো অ’/স্ত্র দিয়ে কো’প দিবে। আল্টিমেটলি ইজ্জত যাবেই, তারপরও একটা মেরেই নিব। ‘আগে মা’রো, তারপর ম’রো’ এই ধরনের কথাবার্তা। কী ত্যাগ করেছেন আপনারা। কিন্তু আমরা আপনাদের সুযোগ্য উত্তরসূরি হতে পারিনি। আমি মনে করি, আপনাদের যথাযথ সম্মান করতে পারছি না।
শামীম ওসমান আরও বলেন, আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে মুক্ত করতে গিয়ে আমার বাবা গু’লি খেয়েছিলেন। রেডিও বাংলাদেশ, হাই কোর্ট, বাংলাদেশ টেলিভিশেনেও প্রথম পতাকা উত্তোলন করেছেন তিনি। তখন তো রাষ্ট্রিয় ক্ষমতায় স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ছিলেন না। এখন তো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি।
তিনি আরও জানান, কবরস্থানে গিয়েও মুক্তিযোদ্ধাদের কবরের করুণ অবস্থা দেখেছেন। আমি নিজে আমার বাবা-মায়ের কবরস্থান পরিষ্কার করেছি। সেখানে দেখতে পেয়েছি, কিছু মুক্তিযোদ্ধার কবরে কোনো ইট বা এই ধরনের কোনো কিছু নেই। শ্মশানের মাটি পড়ে গেছে ১০০-১৫০টির মতো কবরে। কার কবর যে কোনটা সেটা দেখে বোঝার কোনো উপায় নাই। হয়তো মোহাম্মদ আলী ভাইও নীরবে সেখানে গিয়েছিলেন এবং পরিস্থিতিও দেখে এসেছেন। হয়তো তিনি ভেবেছিলেন, আমার কবরও ভবিষ্যতে এমন অবস্থায় পড়ে থাকবে! কিন্তু আমি কাউকে কোনোভাবে দোষারোপ করিনি, এখনো কাউকে করছি না।