রাজশাহীর বাগমারা ( Bagmara Rajshahi ) ( Bagmara ) উপজেলায় আব্দুর রাজ্জাক সরদার (৫৩) নামে এক ব্যক্তি কোনো অপরাধ না করেই ১১ ঘণ্টা হেফাজতে ( custody ) কাটিয়েছেন শুধু আসামির সঙ্গে নাম ঠিকানা মিলেছে। বৃহস্পতিবার ( Thursday ) (২ জুন ( June )) রাতে উপজেলার যোগীপাড়া ( Yogipara ) ইউনিয়নের বাজেকোলা ( Bajekola ) গ্রামের বাড়ি থেকে আব্দুর রাজ্জাককে তুলে নিয়ে যায় বাগমারা ( Bagmara ) থানা পুলিশ। পেশায় রাজমিস্ত্রি আব্দুর রাজ্জাক সরদার ওই গ্রামের গরিবুল্যা সরদারের ( Garibulya Sardar ) ছেলে। আব্দুর রাজ্জাক উপজেলার ভাগনদী থানা তদন্ত কেন্দ্রের কারাগারে রাত কাটান। শুক্রবার (৩ জুন ( June )) সকালে ( morning ) তাকে বাগমারা ( Bagmara ) থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
নাম ঠিকানার মিল থাকায় প্রায় ১১ ঘণ্টা অপরাধী না হয়ে আব্দুর রাজ্জাক সরদার (৫৩) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। পরে গ্রাম পুলিশের ( police ) এক সদস্য মামলার আসল আসামিকে গ্রেফতার করে ভুয়া আসামি রাজ্জাক সরদারকে ছেড়ে দেয়। নারী নির্যাতনের মামলায় আব্দুর রাজ্জাক সরদারকে ( Abdur Razzak Sardar ) গ্রেফতার করেছে বাগমারা ( Bagmara ) থানা পুলিশ। রাজ্জাক সরদারের স্বজনরা জানায়, মামলার আসল আসামি হলেন গণিপুর ( Ganipur ) ইউনিয়নের বাজেকোলা ( Bajekola ) গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক। মামলায় ওই ইউনিয়নের নাম উল্লেখ করা হয়নি। আসামি, বাবা ও গ্রামের নাম একই হওয়ায় আব্দুর রাজ্জাক সরদারকে ( Abdur Razzak Sardar ) আটক করেছে পুলিশ। সে উপজেলার যোগীপাড়া ( Yogipara ) ইউনিয়নের বাজেকোলা ( Bajekola ) গ্রামের গরিবুল্যা সরদারের ( Garibulya Sardar ) ছেলে ও পেশায় রাজমিস্ত্রি।
আব্দুর রাজ্জাক সরদারের স্ত্রী জিন্নাতুন নেছা জানান, বৃহস্পতিবার রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন তারা। বেলা একটার দিকে পুলিশকে তার বাড়ির দরজা খুলতে বলা হয়। তার পরিচয় নিশ্চিত হলে তিনি দরজা খুলে দেন এবং স্থানীয় ভগনাদী থানার উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম তার স্বামীর খোঁজ করেন। জিন্নাতুন নেছা বলেন, পুলিশ তার স্বামীকে জাগিয়ে তুলে এবং গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে বলে তাকে হাতকড়া পরিয়ে দেয়। সে সময় তিনি ভুল করছেন বলে জানালেও পুলিশ তার কথা শোনেনি। রাতে স্থানীয় তদন্ত কেন্দ্রের হেফাজতে রাখার পর শুক্রবার সকালে তাকে বাগমারা থানায় রাখা হয়েছে। শুক্রবার সকালে আব্দুর রাজ্জাকের স্বজনরা মামলার নথি পেয়ে জানতে পারেন, গণিপুর ইউনিয়নের বাজেকোলা গ্রামের রিনা নামের এক নারী ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মামলাটি করেন। মামলায় রিনার সাবেক স্বামী আব্দুর রাজ্জাককে আসামি করা হয়েছে। রাজ্জাকের বাবার নামও গরীবুল্লাহ।
আব্দুর রাজ্জাক সরদারের ভাই রেজাউল করিম জানান, মামলার অভিযোগপত্র দাখিলকারী তৎকালীন উপ-পরিদর্শক গণিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মামলার বাদীর সঙ্গে কথা বলে তাদের সহযোগিতা চেয়েছিলেন। প্রকৃত আসামিদের পরিচয় ও অবস্থান নিশ্চিত করার পর তারা পুলিশ কর্মকর্তাকেও জানান। এরপর গ্রাম পুলিশের সহায়তায় প্রকৃত আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গণিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান বলেন, মামলার প্রকৃত আসামি তার এলাকার। তবে ১৮ কিলোমিটার দূরে অপর একটি ইউনিয়নের আব্দুর রাজ্জাক প্রথমে ধরা পড়েন। ওই ব্যক্তির পরিবারের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরে তিনি প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজতে থাকেন। নির্যাতনের আগের সালিশের কারণে প্রকৃত অপরাধীকে সহজেই চিহ্নিত করা গেছে। ভাগনদী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম জানান, নাম, বাবার ও গ্রামের নাম মিলে যাওয়ায় ভুলবশত আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই ব্যক্তিকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। চেয়ারম্যান পরে আসল অপরাধীকে শনাক্ত করেন। এরপর থেকে ভুয়া আসামিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, এই বিষয়ে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের আব্দুর রাজ্জাক সরদারের পরিবারের কাছ থেকে আসল অপরাধী খুঁজে বের করেন। পুলিশ গিয়ে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন আব্দুর রাজ্জাক সরদার। মুক্তির পর তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, নাম ঠিকানা মিলে যাওয়ায় তাকে জেল খাটতে হয়েছে। প্রকৃত অপরাধী ধরা না পড়লে হয়তো শেষ পর্যন্ত তাকে জেলে যেতে হতো। তাহলে দায়িত্ব নেবে কে? ভাগনদী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম জানান, দুজনের নাম, বাবার নাম এমনকি গ্রামের নামের মধ্যেও মিল রয়েছে। এ কারণে পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে যেতে বাধ্য হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা প্রকৃত আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। এরপর আরেকজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।