বাবা-মায়ের সবথেকে প্রিয় হচ্ছে তার সন্তান। শত বাধা-বিপত্তি কষ্ট আসুক না কেন নিজের সন্তানকে কখনো কষ্ট দিতে রাজি না তারা। তবে কতটা নিরুপায় হলে নিজের থেকে সন্তানকে আলাদা করতে পারে বাবা-মা। সম্প্রতি একটি ঘটনা যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ঘটনার সূত্রে জানা যায়, ওই পিতা নিজের সন্তানকে বিক্রি করতে বাজারে নিয়ে এসেছেন।
সাত মাস আগে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় দরিদ্র বাবার ঘরে জন্ম নেয় সামী নামের এক শিশু। ওই পরিবারে শাম্মীসহ ৬ সদস্য রয়েছে। ছয়জনের পরিবারে সব সময় অভাব থাকে। আর অভাবের কারণে সাত মাস বয়সী শিশুকন্যা সামীকে দত্তক নিতে বা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর স্থানীয় লোকজনের পরামর্শে শিশু সামীকে বিক্রি না করার পরামর্শে বাবা মতিউর রহমান মতি বাড়িতে নিয়ে আসেন।
তিনি একজন দিনমজুর। সারাদিন মাঠে কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে কিভাবে। তিন মেয়ের লেখাপড়ার খরচ ও ৭ মাসের শিশুকন্যা শাম্মীর খরচ জোগাতে পারেননি তিনি। তাই, গত রবিবার তিনি তার ৭ মাস বয়সী মেয়েকে স্থানীয় বাজারে বিক্রি এবং দত্তক নেওয়ার জন্য নিয়ে যেতে বাধ্য হন।
পরে স্থানীয়রা তাকে ও তার শিশুকন্যাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। বড় মেয়ে পারুল (১৪) স্থানীয় একটি স্কুলে নবম শ্রেণিতে, ছোট মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (৯) তৃতীয় শ্রেণিতে, ছোট মেয়ে সুরাইয়া আক্তার (৬) বাড়ির পাশের মাদ্রাসায় পড়ে।
স্থানীয়রা জানান, মতিউর খুবই গরিব। শিশুদের জন্য উপযুক্ত খাবার ও পোশাক কিনতে পারছেন না। কোনো কোনো দিন সে এক বেলা খায় আবার অন্য কোনো খাবার খায় না। পিতামাতারা কখনই তাদের সন্তানদের বিক্রি বা দত্তক নিতে চান না। কিন্তু দরিদ্র পরিবার তাদের জোর করে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ২৬ বছর আগে পারিবারিকভাবে মতিউর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় নাজমা বেগমের। বিয়ের পর তাদের সংসারে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। এভাবেই তাদের সংসারে এক এক করে ৪টি কন্যা সন্তানের জন্ম হয় পুত্রের আশায়। এখন চার মেয়েসহ ছয়জনের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। তাই বাধ্য হয়ে তিনি তার ৭ মাস বয়সী মেয়ে সামীকে বিক্রি করে দত্তক নেওয়ার জন্য বাজারে নিয়ে যান। পরে স্থানীয়রা শিশুকন্যাসহ মতিউর রহমানকে বাড়িতে নিয়ে আসেন।
প্রতিবেশী রসনা বেগম, রমজান আলী, মুনসুর, নাজমুল, জাহিদসহ অনেকে জানান, মতিউর চার মেয়ের কষ্টে দিন কাটে। সারাদিন কাজ করে যা আয় হয় তাতে সংসার চলে না। তার কোনো জমি নেই। অনেক সময় তারা খায় না। সরকারের সহযোগিতা পেলে তিনি চার মেয়ে নিয়ে সংসার চালাতে পারবেন না হলে সন্তান দত্তক নিতে বাধ্য হবেন।
বাবা মতিউর রহমান (মতি) বলেন, আমার কোনো ছেলে নেই। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম আমি। দৈনিক মজুরি উপার্জনকারী তিন বেলা খাবারের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই আমি আমার ছোট মেয়ে সামীকে বিক্রি করে দত্তক দিতে বাজারে গিয়েছিলাম। কিন্তু এলাকার অনেকেই আমাকে তা করতে না দিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসেন। সরকার যদি আমাকে সহযোগিতা করে তাহলে আমি আমার চার মেয়েকে নিয়ে সংসার চালিয়ে যেতে পারব।
মা নাজমা বেগম (৩৯) জানান, আমার স্বামী তেমন রোজগার না করায় সংসার ঠিকমতো চালাতে পারেন না। এক মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ছে। কিছুদিন পর তাকে বিয়ে করতে হবে। আমাদের কোন সম্পদ নেই। আমি সেগুলো বিক্রি করে মেয়েদের শিক্ষিত করে বিয়ে দেব। তাই আমার স্বামী আমার 7 মাসের কনিষ্ঠ কন্যাকে বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যান।
তবে ৪নং বড় পলাশবাড়ী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হারুন অর রশিদ জানান, মতিউরকে ইউনিয়ন পরিষদ ও সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, মতি একজন গরিব মানুষ। তার কোনো জমি নেই। দৈনিক মজুরি থেকে যা আয় করেন তা দিয়ে তিনি তার সন্তানদের খাওয়ান। তিনি তার 7 মাস বয়সী মেয়েকে বাজারে বিক্রি করতে গিয়েছিলেন। এটা খুবই দুঃখজনক. তবে মতিকে কিভাবে সাহায্য করা যায় তা জানার চেষ্টা করব।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহা. জোবায়ের হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ওই গরিব বাবা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমি তাকে সাহায্যের ব্যবস্থা নেব।
ওই যুবকের সমস্যা ছিল তার কোন ছেলে সন্তান নেই। ওই পরিবারের একমাত্র আয়ক্ষম ব্যক্তি হওয়া সমস্ত আর্থিক ভাতার উপরে গিয়ে পড়ে। তবে একা এতগুলো মানুষের জীবন চালাতে না পেরে একপর্যায়ে নিরুপায় হয়ে নিজের সন্তানকে দত্ত দিতে বাজারে গিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া সে সরকারের কাছে সহায়তা চেয়েছেন এ বিষয় নিয়ে ওই এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বারদের সাথে আলোচনা করেছে এলাকাবাসী। এছাড়া যোগাযোগ মাধ্যম এবং বিভিন্ন উপায়ে তাকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে অনেকে।
https://youtu.be/FpKPUp__GIw