ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলার একটি এলাকায় মোঃ আব্দুল হালিম নামের ২৪ বছর বয়সী ইমাম তার নিজের মাথার পাগড়ীর কাপড় দিয়া ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহনন করেছেন। তিনি আত্মহননের আগে একটি সুইসা”ইড লিখে রেখে গিয়েছিলেন। এ ঘটনায় ঐ এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সুইসাইডাল নোটে লেখা ছিল ভিন্ন ধরনের এক কারণ- তার মৃ’ত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। এছাড়া তার নিথর দেহটি পুড়িয়ে পাহাড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য লিখেছিলেন।
সোমবার রাত সাড়ে ৩টায় চরখলিফা ৭নং ওয়ার্ডের হাসমত বেপারী বাড়ির জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে। ৯৯৯ নম্বরে ফোন করার পর থানার এসআই মোঃ মনির হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে সুইসাইডাল নোটসহ ইমামের নিথর দেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান।
আব্দুল হালিম ভোলা সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের চর চন্দ্রপ্রসাদ গ্রামের ফারুক ফরাজীর ছেলে। ইমামতির পাশাপাশি তিনি দৌলতখান উপজেলার চরখলিফা কওমি মাদ্রাসায় দাওরা হাদিস বিভাগে পড়তেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাতে এশার নামাজের পর ইমাম আবদুল হালিম মসজিদের সঙ্গে তার কক্ষে যান। রাত ১২টার দিকে স্বজনদের মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠান এটা লিখে যে তিনি বাঁচবেন না। পরে স্বজনরা তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এ অবস্থায় বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তার শ্যালক রাশেদ মসজিদে আসেন। মসজিদে এসে আব্দুল হালিমের নিথর হয়ে থাকা দেহ রুমে ফ্যানের সাথে ঝুলতে দেখে এলাকাবাসী ভয়ে চিৎ”কার করে মসজিদে ছুটে আসে। পরে দৌলতখান থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে তার দেহটি উদ্ধার করে।
একাধিক বিয়ে করা ইমাম আবদুল হালিম সুইসা”ইডাল নোটে লিখেছেন- ‘আমার লা”/শটা আগুনে পুড়িয়ে পাহাড়ে নদীতে বাতাসে উড়িয়ে দিও। কারণ আমার জীবন পাপপূর্ণ। আমি আমার জীবনে কখনো এমন জায়গায় যাইনি যেটা আমার পাপের সাক্ষী হয়নি। অর্থাৎ আমি যেখানে গেছি সেখানে পাপ করেছি। সবাইকে বলছি, আমার মৃ”ত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। ছোটবেলা থেকেই অনেক পাপ করেছি। তাই এই পৃথিবী আমার ভালো লাগে না।
তিনি তার ৪ মাস বয়সী সন্তানের যত্ন নেওয়ার কথাও লিখেছেন এবং নোটে উল্লেখ করেছেন যে তার কাছ থেকে কারা টাকা পাবে।
ইমাম আবদুল হালিমের ভগিনীপতি মো. রাসেদ জানান, আবদুল হালিমের দুই স্ত্রী ছিল। প্রথম স্ত্রীর চার মাসের একটি মেয়ে রয়েছে। স্ত্রীরা তাঁর ইচ্ছানুযায়ী না যাওয়ায় তিনি উভয় স্ত্রীকে তালাক দেন। এলাকায় কিছু ঋণও করেছেন। এসব কারণে মানসিক চাপে আত্মহনন করে থাকতে পারে, বলে মনে করছেন। ৪ মাস বয়সী কন্যা সন্তানকে দত্তক নেওয়া হয়েছিল।
আব্দুল হালিমের এই ঘটনায় দৌলতখান থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মো. জাকির হোসেন ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে তিনি তার দুই স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়া ছাড়াও কিছু ঋনের চাপের কারণে তিনি মানসিক সমস্যায় ভুগতে পারেন এবং যার কারণে আত্মহনন করে থাকতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। এ বিষয়ে থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি, তাই এই ঘটনায় থানায় একটি অপমৃ’ত্যু মামলা করা হয়েছে।